শহীদুল ইসলাম কাজল।
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সংবাদে ধীরগতির কাজে হঠাৎ গতি এসেছিলো। সড়কে ভোগান্তির জিম্মিদশা থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়েছিলো ধলঘাট-মাতারবাড়ীবাসী।
মহেশখালীর মাতারবাড়ী -চালিয়াতলী সংযোগ সড়কের ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। তবে বর্তমানে ওই সড়কের কাজ ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজ লাপাত্তা, অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এলজিইডি অসহায়। এমনই জানান সড়কের ভুক্তভোগীরা।
এ অবস্থায় কোন জনপ্রতিনিধি মুখ খুলছেন না, যে যার মতো নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। হতাশ জনগণ। ফলে সীমাহীন সড়ক যন্ত্রণা লেগেই আছে, যেন শেষ হবার নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো রাস্তা ধুলাবালিতে পরিপূর্ণ। যাত্রীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। কাজ করার উপযুক্ত সময় হলেও কাজে নেই কোন শ্রমিক। সড়কে পানি না ছিটানোর ফলে ধুলাবালি উড়ে পড়ছে লবণমাঠে, ঘামের ফোঁটায় উৎপাদিত লবণে ধুলাবালি থাকার কারণে ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন চাষীরা।
তাই ধুলাবালি থেকে বাঁচার জন্য লবণ চাষীরা রাস্তায় পানি ছিটাচ্ছেন অনবরত। ঠিকাদের কাজ করতে হচ্ছে চাষীদের।
জানা যায়, নির্মিত হওয়ার পর থেকে ভাঙন আর মেরামত এভাবেই চলছে উক্ত সড়কের কার্যক্রম। মানসম্মত কাজ না হওয়ায় অল্পতেই খানাখন্দের সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ পুরনো ।
বিভিন্ন সময়ে দুর্যোগের প্রভাবে সড়কের ক্ষয়ক্ষতির ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে মাতারবাড়ী-ধলঘাটা ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে খানাখন্দে ভরা সড়কে ভারী যানচলাচলে ক্ষতবিক্ষত, স্বাভাবিক চলাচল অনেক টা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তবুও বিকল্প উপায় না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে যানচলাচল করে আসছিলো ভুক্তভোগী মানুষগুলো। সরজমিন গিয়ে পথচারীদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ৫ কিলোমিটার সড়কের পয়তাল্লিশ কোটি টাকার কাজ অনেক দিন বন্ধ ছিলো।
দৈনিক দশ-বারো জন শ্রমিক নিয়ে কচ্ছপ গতির কাজ করতো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজ। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবাড়ী আগমনের বিষয়টি নিশ্চিত হলে নড়েচড়ে বসেন কর্তৃপক্ষ। এতোদিনের দায়সারাভাবে হওয়া ধীরগতির কাজে গতি বাড়াতে ওই সময় ঘুম ছিলো না ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারের। রাতদিন নির্ঘুম কাজ করেছেন, তাই হয়তোবা এখন দীর্ঘ ঘুমে ঠিকাদার ও এলজিইডি অফিস।
ঠিকাদার লাপাত্তা হলেও কার্যত কোন ব্যবস্থা নেই কর্তৃপক্ষের-অভিযোগ স্থানীয়দের।
ইতিপূর্বেই আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগমনের পূর্বে লন্ডভন্ড সড়কের একইভাবে কাজ করছিলো। পরে যা অল্প দিনেই ভেঙে যায়। এতোদিন কাউকে পাত্তা না দিয়ে কাজ বন্ধ করে রাখা ঠিকাদার আসাদ এন্টারপ্রাইজ প্রধানমন্ত্রী’র আগমনে পুনরায় কাজ শুরু করে ছিলেন তাতেই খুশিতে আত্মহারা ছিলো স্থানীয়রা।
আবারো কি গতি কমে যাবে নির্মাণ কাজের, আবারো কি ঠিকাদারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে?
ওই সময়ের এমন প্রশ্ন বাস্তবে রুপ নিয়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে নির্মাণ কাজ। নানা অজুহাতে আসাদ এন্টারপ্রাইজ কালক্ষেপণের ফলে বর্ষা মৌসুমে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকায় স্থানীয়রা।
ইতিপূর্বে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এমপি কাজ পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
দ্রুত কাজ না হওয়ার পিছনের কারণ কি, জানে না আমজনতা। অবস্থা দৃষ্টে অনেকেই জানান -ঠিকাদারের কাছে জিম্মি এলজিইডি।
ঠিকাদার আসাদ উল্লাহ’র কাছে সড়কের এমন দূরাবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে, তিনি বিল না পাওয়ায় কাজ বন্ধ করেছেন। এছাড়া ওই কাজ আর করবে না বিষয়টি এলজিইড়ি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর)কে অবগত করেছেন বলেও জানান তিনি।
তবে বর্তমানে আসাদ এন্টারপ্রাইজ এর কাজ বন্ধ হওয়ার পিছনের কারণ প্রধানমন্ত্রী’র আগমন অতঃপর জরুরি মেরামত কাজ।
সেখানেও লুকোচুরি, প্রথমতঃ ওই সময়ে কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডি’র প্রকৌশলী মেরামত কাজের জন্য অতিরিক্ত কোন বরাদ্দ নেই বলে তথ্য দিলে-ও সেখানে প্রায় কোটি টাকা চেয়ে বসেন ঠিকাদার আসাদ।দেড় কিলোমিটার কাজের জরুরি মেরামত কাজে এ-তো টাকা কিভাবে আসে এমন প্রশ্ন সচেতন মহলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডি’র একজন প্রকৌশলী জানান -নির্বাহী প্রকৌশলী’র কার্যালয়ে ওই জরুরি মেরামত কাজের জন্য এক কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সেখানে আশি লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়েছে আসাদ এন্টারপ্রাইজ এর জন্য। তবে ভিন্ন তথ্য দেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন খান’ এলজিইডি কক্সবাজার।
তিনি জানান -ওই সময়ের জরুরি মেরামতে শ্রমিক খরচ বাবদ আসাদ এন্টারপ্রাইজ এর জন্য আনুমানিক বিশ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
এছাড়াও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি। জনদুর্ভোগ লাগবে যেভাবেই হোক দ্রুত সময়ে কাজ শুরু হবে এমনটা জানান নির্বাহী প্রকৌশলী। তবে জরুরি মেরামত কাজের টাকার বরাদ্দ বিষয়ে এতো ভিন্নতার কারণ কি? কাজ বন্ধ হওয়ায় পিছনে কি ওই মোটা অংকের টাকার ভিন্ন রহস্য রয়েছে?
কাজের শুরু থেকে যেনতেন ভাবে চালিয়ে আসলেও নিরব কর্তৃপক্ষ। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দু’বছরেও কাজ শেষ হবে কি-না সন্দেহ দেখা দিয়েছে জনমনে। এছাড়াও কাজের শুরু থেকে দৃশ্যমান অনিয়ম হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দেখে আক্ষেপ নেই আর কারো। তবে কাজ শুরু করে ধীরগতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। খানাখন্দেভরা সড়কে ভাড়া আদায়েও চলছে নৈরাজ্য।
কোথাও এর প্রতিকার না পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-ই যেন শেষ ভরসা ক্ষোভ প্রকাশের।
ফেসবুক এ ভুক্তভোগীদের আর্তনাদ, জানেনা কবে মুক্তি পাবে অতিরিক্ত ভাড়া ও সড়ক যন্ত্রণা থেকে। কোন সচেতন ব্যক্তি অতিরিক্ত ভাড়া দাবি নিয়ে প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবুও কার্যকরী পদক্ষেপে নিরব জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার” এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, সত্তর ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ হবে। আসলে দ্রুত সময়ে কাজ শেষ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা মিলছেনা।।