ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী “জোহরান মামদানি” গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। এ জয়ের মধ্য দিয়ে মামদানি শহরটির প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন। মামদানি হচ্ছেন প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মেয়র। শুধু তাই নয় এক শতাব্দীর মধ্যে মামদানি হচ্ছেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ মেয়র।
কেন বিজয় মুকুট জোহারান মামদানির?
প্রথমত, জোহরান মামদানি “আই হেইট পলিটিক্স” প্রজন্ম-কে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরী এবং ভোট প্রদানে আগ্রহী করে তুলেছে। তরুণরা রাজনীতির পুরোনো ভাষায় ক্লান্ত; মামদানি তাদের বাস্তব জীবনের ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। এতে রাজনীতির প্রতি তাদের আস্থা ফিরেছে। কুইনিপিয়াক পোল অনুযায়ী, ১৮–৩৪ বছরের ৬৪ শতাংশ ভোটার মামদানিকে সমর্থন দিয়েছে, যেখানে ৫৫–৬৪ বয়সীরা মাত্র ৩২ শতাংশ।
দ্বিতীয়ত, “ইনক্লুসিভ এ্যান্ড ডাইভার্সিটিফাইড” প্রচার প্রসার এর কৌশল এবং বহুজাতিক ঐক্য। মামদানি শুধু প্রগতিশীল এলাকায় নয়, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো, এশীয় ও তরুণ শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকাতেও এগিয়ে গিয়েছেন, তার এই ভিন্নধর্মী প্রচারের আত্মিক সম্পর্কের উপলব্ধি তৈরির মাধ্যমে। আরেকটি বিষয় মাথায় রেখেছে, স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতিতে পৌঁছানোই প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব।
তৃতীয়ত, মামদানির প্রচারণায় ছিল না কোনো কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতা, পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য কিংবা আড়ম্বরপূর্ণ মিডিয়া কৌশল। তিনি সরাসরি কথা বলেছেন সেই সব নিউ ইয়র্কবাসীর হয়ে, যারা প্রতিদিন ভাড়া দিতে হিমশিম খায়, বাজারের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে এবং গণপরিবহনের খরচে বিপর্যস্ত। তার বার্তা ছিল সরল অথচ গভীর। বাস্তব সমস্যা নিয়ে কথা বলে তিনি রাজনীতিকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, রাজনীতি যদি মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে যায়, মানুষ আবার রাজনীতিতে ফিরে আসে।
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে কি প্রভাব পরবে?
উত্তর হলো, হ্যাঁ।
কিন্তু কেন মনে হলো?
কারণ হলো, ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া, ডাকসু, চাকসু, জাকসু এবং রাকসু নির্বাচন; তরুন প্রজন্মের এই প্রতিনিধিত্বে, স্পষ্টত করেছে। কীভাবে? চিন্তা করুন, যে প্রজন্ম “মার্সেল পাওয়ার পলিটিক্সে” অভ্যস্ত, সে এখন “পলিসি বেইসড রাজনীতি” গ্রহণ করছে। “আই হেইট পলিটিক্স” প্রজন্ম, বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত রাখে। ওয়েলফেয়ার পলিটিক্স প্রতিদিন দীপ্ত পায়ে হেটে, স্ট্যাবিলিস্ট হচ্ছে।
তাহলে কী কী প্রভাব পরতে পারে:- মেজরলি চারটি প্রভাব পরবে বলে, আমার ধারণা:-
প্রথমত, জেনারেশনাল শিফটিং হবে। অর্থাৎ অবৈধ অর্থ, কর্পোরেট এন্ডোর্সম্যান্ড ও মার্সল পাওয়ার পলিটিক্স এবং প্রোপাগাণ্ডা পলিটিক্স এর ওপর নির্ভরশীল ‘বুমার’ বা ঐতিহ্যবাহী প্রার্থীদের বিপরীতে তরুণ, জেনুইন, ও কমিটেড রাজনীতিবিদদের নির্বাচিত হওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি হওয়ার উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা তৈরি হবে।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের “ঘৃনার রাজনীতি থেকে সরে, সম্প্রীতির রাজনীতি, ভালো বক্তা এবং পলিসি বেইসড রাজনীতি, ” করতে প্রভাবিত করবে। তাছাড়া-ও পুরো নির্বাচন, বর্তমান প্রজন্ম অর্থাৎ যুব সমাজ, রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সম্ভাবনা তৈরি হবে। দলীয় বিভাজন ভেঙে সাধারণ মানুষের ইস্যুতে ঐক্য গড়ার নিয়মিত অভ্যাস এ অভ্যস্ত হতে বাধ্য করতে পারে, যদি রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রাসঙ্গিক থাকতে হয়।
তৃতীয়ত, মামদানির নির্বাচনী প্রচারে তরুণ ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাই তরুণ। তাদের হতাশা, চাকরির অভাব, উচ্চ শিক্ষার ব্যয়ভার এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আস্থাহীনতা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। মামদানির বিজয় প্রমাণ করে, যদি কোনো নেতা তাদের জীবনের বাস্তব সমস্যাগুলির (যেমন: চাকরির নিরাপত্তা, শিক্ষার সুযোগ) সমাধান নিয়ে স্পষ্ট এবং বিশ্বাসযোগ্য বার্তা দিতে পারেন, তবে তরুণ প্রজন্ম অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে আসবে এবং পরিবর্তন আনবে।
চর্তুথত, মামদানির জন্য বড় একটি সুবিধা হলো প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিকদের মতো তাঁর অতীত কোনো বদনাম নেই। তাই, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে, রাজনৈতিক দল গুলো তাদের মনোনয়ন বাছাইকরণে, এ ধরনের, অতীত প্রেক্ষাপটে চিন্তা করেই, চূড়ান্ত মনোনয়ন দিবে।
তাছাড়া-ও মামদানি, ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কাছে তিনি যান ‘সাম্য ও স্বাধীনতা’র বাণী নিয়ে। জোহরান মামদানি ঘোষণা দেন যে, তিনি নির্বাচিত হলে নিউইয়র্কে ধর্মীয় বিদ্বেষ দূর করতেও কাজ করবেন। ঠিক যেখানে ধর্মীয় বৈচিত্র্য সেখানে ধর্মীয় ঐক্য-ই বিজয় এনে দেয়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশেও ধর্মীয় বিভাজনের রাজনৈতিক দলকে সর্তক করবে।
তাই আমার ধারণা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং জোহরান মামদানি, একটি সুন্দর “কেইস স্টাডি” হতে পারে, আমাদের এই তরুণ প্রজন্ম কে ভোট ব্যাংক হিসেবে, যেকোন রাজনৈতিক দলে ভিড়ানোর জন্য। এমনকি “পলিসি পলিটিক্স ও ওয়েলফেয়ার পলিটিক্স” ততকালীন রাজনৈতিক দীর্ঘসময় এর দাবার ছকে, কিছুটা অথবা বেশ ভালো পরিমাণ ই, ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বাধ্য করতে পারে, যা এই “কেইস স্টাডি” ই ইঙ্গিত।
মোঃ ইমন হোসেন
সভাপতি, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
ই-মেইল: mdemonhossain.lawyer@gmail.com