রোকনুজ্জামান সবুজ জামালপুরঃ
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত কেউ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তুু প্রশাসন নিশ্চুপ থাকায় নির্বাচনী আচরণবিধি তোয়াক্কা না করে প্রতীক বরাদ্দের আগেই জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের সমর্থকেরা বিভিন্ন এলাকায় নৌকার বড় বড় তোরণ নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে।
ওইসব তোরণে নৌকায় ভোট চেয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের ছবি সংবলিত ব্যানার সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দলের বিশেষ বর্ধিত সভার নাম ভাঙিয়ে নৌকা প্রতীক বিজয় করার লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারোণা চালানোরও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
অভিযোগ উঠেছে, সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করতে দেখা যায়নি সহকারী রিটার্ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের। তবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দাবি, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, কোথাও আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনা ঘটলে, তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়ার।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলায় বিভিন্ন হাট বাজার,রাস্তা ঘাট মোড়সহ ফেস্টুন দেখাযায়। এ-ই ছাড়া ও গাইবান্ধা ইউনিয়নের নাপিতেরচর বাজারের মূল প্রবেশ পথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নৌকা প্রতীকের বিশাল তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া নৌকার প্রার্থী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের নিজ ইউনিয়ন পলবান্ধার বাহাদুরপুর তিন রাস্তার মোড় এলাকায় বেশকয়েকটি বড় বড় নৌকার তোরণ নির্মাণ করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। নির্মিত এসব তোরণে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের ছবিসহ ‘নৌকায় ভোট দিন’ লেখা সংবলিত ব্যানার সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম শাহীনুজ্জামান শাহীনের সমর্থক পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুর ইসলাম নুর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে জয় করতে তাঁর সমর্থকেরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার-প্রচারোণা করে যাচ্ছে। প্রতীক বরাদ্দের আগেই বিভিন্ন জায়গায় নৌকা তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের তথ্য দেওয়া হলেও আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করতে দেখা যায়নি সহকারী রিটার্ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আওয়ামীসহ যুবলীগের বিশেষ বর্ধিত সভার নাম ভাঙিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারোণা চালানো হলেও প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।’
পলবান্ধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সাবেক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান কমল বলেন, ‘ইউনিয়নের বাহাদুরপুর এলাকায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বেশকয়েকটি নৌকার তোরণ নির্মাণ করেছে। এতে যে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে, সেটা ভাবা হয়নি। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়ে থাকেলে, সেক্ষেত্রে নৌকার তোরণ সরিয়ে ফেলা হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ নভেম্বর বিকেলে নৌকায় ভোট দিতে উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের হাড়গিলা উচ্চ বিদ্যালয় কক্ষে নোয়ারপাড়া এবং সাপধরী ইউনিয়ন যুবলীগের উদ্যোগে যৌথ বর্ধিত সভা করা হয়। ওই বর্ধিত সভার ব্যানারের উপরে লেখা ছিল ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ নোয়ারপাড়া ও সাপধরী ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে যৌথ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ‘বর্ধিত সভায় ঘরোয়াভাবে নৌকার প্রার্থী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালকে বিজয় করতে নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনোকিছু দেখছি না।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মা জামান চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত কেউ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকা প্রতীকের তোরণ নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি ইউএনও স্যারকেউ অবগত করুন।’
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন হওয়ার অভিযোগ কেউ দেয়নি। তবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারোণায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে আইনানুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এবিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কোথাও প্রচারোণা করা হচ্ছে না। বরং আচরণবিধি ভঙ্গ না করতে নেতা-কর্মীরা সজাগ রয়েছেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো ফাঁকা আওয়াজ। বরং তফসিল ঘোষণার পর কোথাও নৌকার তোরণ নির্মাণের খবর পাওয়া যায়নি।