এজি লাভলু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
জন্ম থেকে বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী হলেও সুস্থ ও স্বাভাবিক অন্য শিক্ষার্থীর মতই চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে হৃদয় মিয়া। জন্মের পর থেকেই বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সে বড় হয়ে উঠে। কিন্তু পড়ালেখায় কখনও পিছিয়ে পড়েনি সে। কথা বলতে ও কানে শুনতে না পারলেও কঠোর অধ্যাবসায় ও মায়ের সহায়তায় চন্দ্রখানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে পিইসি এবং ফুলবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পাশ করে এ বছর মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে হৃদয়।
বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী হৃদয় মিয়ার বাড়ী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা বজরেরখামার গ্রামে। তার বাবা আলতাফ হোসেন একজন ক্ষুদ্র কাঠমিস্ত্রী ও তার মা বিজু বেগম গৃহিনী। বাবা মায়ের ৫ সন্তানের মধ্যে হৃদয় মিয়া তিন নাম্বার।
আজ সোমবার দুপুর ১২ টায় উপজেলার মিয়াপাড়া নাজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৪নং কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য পরীক্ষার্থীর মতই বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের পরীক্ষা দিচ্ছে হৃদয়। তার রোল নম্বর ৫৩৪০৭৯। হাতের লেখাও ঝকঝকে সুন্দর।
হৃদয় মিয়ার মা বিজু বেগম জানান, আমার ছেলে হৃদয় জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী। ৬ বছর বয়সে যখন তাকে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করি তখন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রতিবন্ধী বলে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেন। পরে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে আবারও তাকে স্কুলে নেয়া হয়। স্কুলের শিক্ষকদের পাশাপাশি বাড়ীতে তাকে লেখা ও পড়ার অভ্যাস করাই। আস্তে আস্তে সে লিখতে ও পড়েতে শিখে আজ এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্বামীর সামান্য আয়েই পাঁচ ছেলে-মেয়ের পড়াশুনা ও সংসারের খরচ চলে। তাই ইচ্ছা থাকলেও হৃদয়কে শহরের বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী স্কুলে পড়াতে পারিনি। প্রতিবন্ধী হলেও এখন পর্যন্ত সে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়নি।
মিয়াপাড়া নাজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব জামাল উদ্দিন জানান, হৃদয় মিয়া বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে বাড়তি ৩০ মিনিট সময় দেওয়াসহ সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে।