শেখ সাইফুল ইসলাম কবির. স্টাফ রিপোর্টার,বাগেরহাট:
করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি মিলবে- এমন তথ্য পেলেই তা যাচাই-বাছাই না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে অনেকে।তুলসী পাতা নিয়ে গুজবের রেশ কাটতে না কাটতেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাটসহ ১০ জেলার উপজেলায় এবার থানকুনিপাতা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে একটি মহল। ৩টি থানকুনিপাতা খেলে করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হবে না এমন গুজবে এ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে থানকুনি পাতা খাওয়ার হিড়িক পড়েছে।এমনই এক গুজবে রাতের ঘুম হারাম হয়েছে বাগেরহাটবাসীর।
একজন কথিত পীর সাহেব স্বপ্ন দেখেছেন- এমন গুজবের ওপর ভিত্তি করে তথ্য রটে যায়, থানকুনি পাতা খেলে করোনাভাইরাস আর সংক্রমিত করতে পারবে না। মিলবে মুক্তি।
এই গুজবে সাড়া দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাটসহ ১০জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে রাতের আঁধারে থানকুনি পাতা সংগ্রহে নেমেছেন বহু মানুষ। ইতোমধ্যে অনেকে সে পাতা চিবিয়ে খেয়েছেনও। তাদের বিশ্বাস, পীর সাহেবকে স্বপ্নে বলে দেয়া এই থানকুনি পাতাই করোনাভাইরাসের উত্তম প্রতিষেধক। বাগেরহাট মোরেলগঞ্জ উপজেলার অনেক মসজিদে গভীর রাতে থানকুনিপাতা খাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। তবে এর কোন ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুরু হয়েছে এই গুজব। এ নিয়ে অনেকে ফেসবুকে পোস্টও দিচ্ছেন। কেউ কেউ থানকুনি পাতা সংগ্রহ করতে পেরেছেন জানিয়ে ছবিও পোস্ট করেছেন। কেউ কেউ আবার বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের ফোন করে জরুরি ভিত্তিতে থানকুনি পাতা সংগ্রহের তাগিদ দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একজন পীর স্বপ্নে দেখেছেন যে, তিনটি থানকুনি পাতা আর একগ্লাস পানি খেলে করোনাভাইরাস ছুঁতেও পারবে না। আর এই রাতের মধ্যেই পাতা তিনটি খেতে হবে। তবে ফজরের আজানের পূর্বেই পাতা তিনটি খেতে হবে।
তবে এমন গুজব কানে তোলেননি স্থানীয় অনেকেই। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ ধরনের গুজবে কান না দিতে তারা পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, এমন গুজবের উৎপত্তি কোথায় তা কেউই জানে না। কোনো পীর স্বপ্ন দেখেছেন বলেও তারা শোনেননি।
স্থানীয় এক সংবাদকর্মী জানান, তাকে সকাল বেলা তাঁর পরিবার থেকে ফোন করে বলেন ৩টি থানকুনি পাতা খালি পেটে খেতে বলেন। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। একটা ধোঁয়াশার ভিতর রয়েছি। মসজিদের মাইকের এই ঘোষনার পর আমরা ৩টি করে থানকুনিপাতা খেয়েছি।
মোরেলগঞ্জ পৌর সভার ভাইজোড়া গ্রামের গৃহবধু সাথি বেগম বলেন, আমার বাড়ির পাশে একজনে গভীর রাতে সবাইকে ডেকে তুলে ৩টি করে থানকুনিপাতা খেতে বললো। আমরা সবাই থানকুনিপাতা খেয়ে ফেললাম।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, ৩টি থানকুনিপাতা খেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবে না আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে এমন কথা শুনেনি বা চিকিৎসা বিজ্ঞানে পাইনি। তবে কারো পেটে সমস্যা থাকলে তার জন্য থানকুনিপাতা উপকারী।
এদিকেফেসবুকে অবশ্য এই গুজব কানে তোলেননি স্থানীয়দের কেউ কেউ। তারা গুজবে কান না দিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তারা বলছেন, এমন গুজবের উৎপত্তি কোথা থেকে তা কেউ জানে না।