ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

‘পরীক্ষাবিহীন’ নতুন শিক্ষাক্রম যেন চালকবিহীন ট্রেন!

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ৯:৩৩ অপরাহ্ণ

Link Copied!

আবহমানকাল ধরে শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ম ছিল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা পাঠদান করবে; শিক্ষার্থীরা পড়বে, বুঝবে, ক্ষেত্রবিশেষে মুখস্ত করবে এবং নিদিষ্ট সময় শেষে পরীক্ষা দেবে। উত্তরপত্রে যা লিখবে, তা দিয়েই মূল্যায়ন হবে পরবর্তী ধাপে উত্তীর্ণ হওয়া না হওয়া। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এটাই দীর্ঘদিনের চিত্র। তবে নতুন শিক্ষাক্রমে তা পুরোপুরি পাল্টে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন প্রথমে কাজ করবে, বুঝবে, তারপর শিখবে। তাদের এসব কার্যক্রম দেখে মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা। থাকবে না কোনো পরীক্ষা পদ্ধতি। তবে এই পরীক্ষা না থাকা নিয়েই চরম ক্ষুব্ধ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ‘পরীক্ষাবিহীন’ পড়াশোনায় কোনো অভিভাবকই যেন আস্থা রাখতে পারছেন না। এমনকি শিক্ষকরাও এ নিয়ে ‘গ্যাঁড়াকলে’। স্বস্তি নেই তাদেরও।

চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা চলছে নতুন শিক্ষাক্রমে। এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, তাদের সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে, আসছে। কিছুই পড়ছে না ও লিখছে না। পূর্বের মতো হোমওয়ার্ক, প্রাইভেট-টিউশনিও চাইছে না। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যা শিখছে, বাড়িতে এসে যা করছে তা কোনো ‘পড়াশোনা নয়’ বলে মনে করছেন অভিভাবকরা। এজন্য নতুন এ শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন তারা।

স্বস্তি নেই শিক্ষকদেরও। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান করছেন এমন শিক্ষকদের অভিযোগ, এ শিক্ষাক্রমের কারিকুলাম ও পাঠ্যবই সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে সাজানো। পাঠ্যক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দেওয়ার কোনো সুযোগই থাকছে না। শিক্ষার্থীদের যেসব কাজ দেওয়া হচ্ছে, তা স্কুলেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাসায় গিয়ে পড়ার বা হোমওয়ার্ক করার কোনো প্রয়োজন নেই। অথচ অভিভাবকরা প্রতিদিন এসে শিক্ষকদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করছেন। বাচ্চারা কেন বাসায় পড়ছে না, হোমওয়ার্ক কেন দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে অনেক সময় শিক্ষকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন অভিভাবকরা।

তবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা অভিভাবক ও শিক্ষকদের অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাঁধ থেকে পরীক্ষা নামক অদৃশ্য বোঝা নামিয়ে হাতে-কলমে শেখানোর প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতেই নতুন এ শিক্ষাক্রম। শিক্ষার্থীরা এ পদ্ধতিতে পড়াশোনা উপভোগ করছে। এখন অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। প্রশিক্ষণের ঘাটতি দূর হলে শিক্ষকদেরও ‘সংশয়’ দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা মনে করেন, ‘মূল্যায়নের সব নম্বর দেবেন শিক্ষকেরা। বাচ্চারা পড়বেও না, লিখবেও না। এমনকি সন্তান বাসায় এসে পড়ার টেবিলেও বসছে না। একাজ-সেকাজ নিয়ে ব্যস্ত। পড়ার কথা বললেই বলে- যা করছি, তা দেখে স্যাররা নম্বর দেবেন। এটা কেমন কথা? বাচ্চারা পড়বে না, লিখবে না- এ কেমন পদ্ধতি? একেবারে পরীক্ষা বাতিল করাটা মোটেও উচিত হয়নি। এটা বিবেচনা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তারা।’

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী কোন্ বিষয়ে ভালো করছে, কোন্ বিষয়ে খারাপ করছে তা জানার সুযোগ নেই অভিভাবকদের। এটাতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে অভিভাবকদের অন্ধকারে রাখা হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, ‘একজন অভিভাবক হিসেবে আমার সন্তানের মেধা কেমন, তা জানার আগ্রহ অবশ্যই থাকবে। আমার মেয়ে কোন্ বিষয়ে ভালো করছে, কোন্ বিষয়ে সে দুর্বল সেটা তো আমাকে জানতে হবে। কোন্ বিষয়ে তাকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে- এগুলো জানার কোনো সুযোগ নতুন শিক্ষাক্রমে আছে বলে দেখছি না। এমন হলে তো সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে উদ্বেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে শিক্ষা চলতে পারে- তা বুঝে উঠতে পারছি না আমরা।’ তাই অভিভাবকরা ‘পরীক্ষাবিহীন’ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ শিক্ষাক্রম বাতিল অথবা সংশোধন করে কিছু পরীক্ষা যুক্ত করার দাবি তাদের।

তবে অভিভাবকরা ‘সচেতন নন’ বলেই এমন উদ্বেগ জানাচ্ছেন বলে মনে করেন শিক্ষাক্রমের সাথে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ‘এখানে (নতুন শিক্ষাক্রমে) পুরো শিক্ষা প্রক্রিয়াটাই হাতে-কলমে শেখানো। আগে শিক্ষাক্রম ছিল লোকাল ট্রেনের মতো। নতুন শিক্ষাক্রম হবে বিরতিহীন ট্রেন। বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় ভালো ছাত্র-ছাত্রী যা শিখবে বা যেভাবে শিক্ষাটা পাবে, পেছনের সারির ছাত্র-ছাত্রীরাও সেভাবে শিক্ষা পাবে। এতে মেধাভিত্তিক বৈষম্য নিরসন হবে। তারা নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, ‘এই পদ্ধতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে।’

অভিভাবকদের সচেতনতার জন্যও কিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা, ‘ভয়ের কিছু নেই। অভিভাবকদের বলবো, আপনারা সচেতন হোন। কিছু জানার থাকলে প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষকদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন। তারা আপনাদের (অভিভাবক) বুঝাতে সক্ষম হবেন। আর এটা বাংলাদেশে প্রথম চালু হচ্ছে এমনটিও নয়। বিশ্বের উন্নত বিভিন্ন দেশে এ ধরনের শিক্ষাক্রম রয়েছে। তাই উদ্বেগের কিছু নেই।’

নতুন শিক্ষাক্রমে এখনো প্রশিক্ষণ পাননি অধিকাংশ শিক্ষক। যারা এক দফায় প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তাদের অনেকেই শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পড়ানোর ক্ষেত্রে অতটা দক্ষ হয়ে উঠতে পারেননি। ফলে সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষকরাও। প্রতিনিয়ত অভিভাবকদের প্রশ্নে জর্জরিত হলেও দিতে পারছেন না সদুত্তর। শুধু মফস্বল নয়, দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও একই দশা।

আগামী বছর থেকে সাত শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম (চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম) অনুযায়ী পাঠদান করানো হবে। অর্থাৎ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সব শ্রেণিতেই পুরোদমে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতিও ভিন্ন। শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে। এদিকে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন এ শিক্ষাক্রম চালু হবে ২০২৫ সালে। ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ নম্বরের সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে।

ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও মূল্যায়ন করা হবে একইভাবে। তবে জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে।
নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়ার পর দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি বিষয় নির্ধারণ থাকবে। সেগুলো পড়বে সবাই। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে ঐচ্ছিক বিষয়গুলো পড়বে শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যে বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিক থেকে। উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে এ প্রক্রিয়া মেনে পাঠদান হবে।

আলী ওসমান শেফায়েত
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক
কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।

344 Views

আরও পড়ুন

শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার

সাংবাদিক হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় লোহাগাড়ায় সাংবাদিক সমাজের মানববন্ধন

সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে শান্তিগঞ্জে সেমিনার

শান্তিগঞ্জে জনসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ 

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও দেশ অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক গোলামী থেকে মুক্ত হতে পারেনি–অধ্যাপক মুজিব

কক্সবাজার জেলা জামায়াতের মতবিনিময় সভায় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান 

চট্টগ্রামে জামায়াত নেতার পায়ের রগ কেটে হাত ভেঙে দিয়েছে চাঁদাবাজরা

ডিবি পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে বরিশাল মহানগর ছাত্রদল সহ-সভাপতি রাসেল আকন আটক

শান্তিগঞ্জে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষক দিয়ে পিআইসি কমিটি গঠনের অভিযোগ 

সংবর্ধিত হলেন সেরা কনটেন্ট নির্মাতা শিক্ষক ফারুক ইসলাম

নাগেশ্বরীতে কেন্দ্রীয় ড্যাব নেতার ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

বুটেক্সে নতুন বিভাগ চালু- সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ