২য় পর্ব
হঠাৎ একদিন এক অচেনা নাম্বার হতে ফোন আসল।
তখন সময়টা প্রায় পড়ন্ত বিকাল।
পশ্চিমাকাশ লাল হয়ে আছে কিরণ অস্তমিত হওয়ার পথে।
ফোনে মিস কল দেখতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ কল ব্যাক করলাম,
কল রিসিভ করল অপর প্রান্ত হতে।আমি ভদ্রতার সহিত সালাম দিয়ে শালীন ভাষায় জানতে চাইলাম, কে আপনি?
স্বর শুনে মুহূর্তের মধ্যেই আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম, আর যাই হোক আমার পরিচিত কেউ নহে।
সে আমাকে বলতে লাগল,
তুমি কি জুবায়েদ নাকি?
জ্বি, আমি জুবায়েদ।কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না।
সে বলল,তুমি ফিরোজ মিয়া কলেজে পড়ো না?
আমি বললাম, হুম ভর্তি হয়েছি।
সে বলল,আমি আমি তোমাদের ক্লাশ ক্যাপ্টেন।
সে আরো বলল,অমুক তারিখ হতে ইনকোর্স পরীক্ষা।তুমি তো কলেজে আসো না বিধায় জানও না তাই তোমাকে অবগত করলাম। আমার তখনকার অবস্থা সাপেক্ষে বলতে গেলেঃ
আমার কাছে ছিল না বিকল্প কোন পথ
সকল কিছুই তখন মনে হতো
এ যেন এক অন্ধকার জগৎ।
বাধ্য হয়ে ন্যাশনালেই ভর্তি হলাম ঠিক
কি যে করি তখন,কিসের পানে ছুটি
বহু অনুসন্ধানেও খুঁজে মিলল না তার দিক।
শিক্ষকেরাও আমায় খুব করে খোঁজে
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে
আমি বেচারা রয়ে গেলাম অগোচরে।
তারপর আমি পরীক্ষা দিতে গেলাম।প্রস্তুতি বড্ড বাজে, বলার মতো নহে।কিছুই অধ্যায়ন করা হয়নি তার চেয়ে চরম সত্য হল বইও কিনা হয় নি।কোন ভাবে পরীক্ষা দেখে দেখে দিলাম।৩দিন পর পরীক্ষা শেষ হল।
বিভাগীয় প্রধান স্যার এসে বলল, আমরা যে পরীক্ষার আয়োজন করেছি এটা কোন ইনকোর্স পরীক্ষা ছিল না।তোমারা কেউই তেমন নিয়মিত আসো না।তাছাড়া তোমাদের কাউকে আহামরি তেমন চিনিও না তাই এই পদক্ষেপ।
এই কথা শোনার পর, মেজাজ চটে গেল।মস্ত বড় ধোঁকাবাজি আমার সনে।
ইনকোর্স জরুরি ভেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম ।
তারপর মনে মনে ভাবলাম, আর কখনো কলেজে যাবই না।যা আছে ভাগ্যে,আল্লাহ ভরসা।
আর তখন আমার মাথায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূত চেপে আছে।আমাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেই হবে।এটা যে আমার ছোট বেলার স্বপ্ন।
এদিকে আমার ছোট মামা, ওনী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার।আম্মুকে ফোন দিয়ে আমার খোঁজ খবর নিল।বলল,আপা ওরে ভাল করে পড়তে বলেন। ইনশাআল্লাহ সে পারবে, সফল হবে।
আমার বড় চাচা,ওনী ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর।ওনী ফোন করে আমাকে সান্ত্বনা দিল।আম্মুকে বলল,অনেকেই ১ম বার ব্যর্থ হয়।২য় বারেই সফল হয় বেশি।ভেঙ্গে পড়লে হবে না।ছেলেটাকে পড়তে বল অবশ্যই সে সফল হবে।
এগুলো শুনে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলাম, মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলাম। পাবলিকান হবই হব ইনশাআল্লাহ। আর কলেজে আর যাব না এ সিদ্ধান্ত নেয় ফেললাম মনে মনে।
আব্বু প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, কলেজে যায় না কেন?
আমি নীরব থাকি।সাহস করে মুখ ফোটে কিছু বলি না।
কোন এক প্রদোষে আব্বু জিজ্ঞেস করল, কলেজে যাও না কেন তুমি?
সেদিন বুকে সাহস সঞ্চয় করে বলে ফেললাম, আমি ন্যাশনালে পড়বো না।
জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত আমি একা নিলাম। শুধু আমার নিজের ক্যারিয়ারে দিকে তাকিয়ে ভাল কিছুর প্রত্যাশায়।
আমি এই প্রথম বাবার অবাধ্য হলাম।বাবার কথা অগ্রাহ্য করে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।
আব্বু খুব ক্ষেপে গেল শুনে।কেন অযথা একটি বছর জীবন থেকে নষ্ট করব।
আব্বু ভার্সিটি পরীক্ষা দেয়ার পক্ষে কিন্তু ন্যাশনালে যেহেতু ভর্তি হয়েছি ওটা যেন থাকে।
সেদিন স্থির করলাম সিদ্ধান্ত যেহেতু নিয়েই ফেলেছি, অধীর পরিশ্রমে সাফল্য অর্জন করতেই হবো।
সমস্ত বিষাদ পিছনে ফেলে নতুন আলোর পানে ধাবিত হবো।মা বাবাকে আলোর মুখ দেখাবো, সবার মুখে মুক্তঝরা হাসি ফোটাবো।
এসব ভেবে আর ইতস্তত না হয়ে একমনে পড়তে লাগলাম।প্রচুর পড়তে হয়েছে বিশেষ করে ইংরেজি। ইংরেজিতে দুর্বলতা ছিল সেটা অধীর পরিশ্রমে কাটিয়ে উঠলাম। পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে প্রস্তুতি আর আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে আমি।
অবাক করা হল বিষয় হল,আমি পরীক্ষার উদ্দেশ্য যে মেসে উঠলাম। সেখানে ২০/৩০ জন পরীক্ষার্থী ছিল।সবার একটাই কথা আমার নাকি চান্স হয়ে যাবে।অথচ ১ জন ব্যতিত তারা কেহ আমাকে আগে দেখে নি।আমার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাও নেয়।
আমি বললাম, তোদের মুখে জয় হোক।
যার মেসে উঠলাম সে বলল, এতদূর থেকে কষ্ট করে এসেছো একটা ইউনিটে শুধু আবেদন করেছো।আরো কয়েকটা ইউনিটে আবেদন করতে।
আমি বললাম, এটাতে সিট বেশি তাই এটাতেই আবেদন করলাম।
সে বলল,সিট বেশি হলে কম্পিটিশনও তো অনেক বেশি হয়।
অন্যান্যদের মতে,সে একটাই পরীক্ষা দিলে কি হবে?
একটাতেই সে ছক্কা লাগাবে।
পরীক্ষা দিয়ে ভীষণ খুশি হয়ে বললাম আম্মুকে, আমার ইনশাআল্লাহ চান্স হয়ে যাবে।
সবার মুখে একটাই কথা আমার চান্স হয়ে যাবে।রেজাল্ট দিল সবার কথা সত্যে পরিণত হল।আমি চান্স পেলাম। এই মেসে যারা ছিল, আমি বাদে আর কেউ চান্স পেল না।তারপর ভর্তি যেদিন হলাম কি যে প্রশান্তি।
অবশেষে স্বপ্ন বাস্তব, আমার পরিশ্রম সফল।
কবিতায় সফলতার জয়গান লিখলে এমন হতোঃ
শত জনমের আঁধার কাটিয়ে
পরিশেষে খুঁজে পেলাম আলোর মুখ
আহা! আগে তো অবিদিত ছিল নহে
সফতায় নিহিত মনের সকল তৃপ্তি আর সুখ।
আজ নিজেকে অনুধাবিত হয় বড্ড সফল
দিবি নিশিতে করেছি পণ্ডুশ্রম
বিদাতা করে নি এতো পরিশ্রমকে নিষ্ফল।
———————–
লেখকঃ জুবায়েদ মোস্তফা
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।