সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
হামলা, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া,সংঘর্ষ ও গুলি বর্ষণের মধ্য দিয়ে ৩য় ধাপে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জে ১৩ টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ রবিবার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়।
জানা গেছে,একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে উধাও গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আবু সালেহ মোঃ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ। চার পুলিশ হত্যাসহ ১৩ মামলার আসামি আজিজ প্রকাশ্যে না থাকলেও, তার দল জামায়াতের আখড়া হিসেবে উপজেলাটি এখনও ব্যাপক পরিচিত ও সমালোচিত।
তবে বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন জাতীয় পার্টির নেতা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের বেহাল দশায় রূপ নিয়েছে। উপজেলার কোনো ইউনিয়নে জাপার লাঙ্গল প্রার্থী জয়লাভ করতে পারেনি বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে । অন্য দিকে আওয়ামী লীগের নৌকার হয়েছে ভরাডুবি। পুরো উপজেলায় মাত্র ২ জন প্রার্থী নৌকা মার্কা থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
জাপা’র এমন পরিস্থিতি দেখে হতাশা বিরাজ করছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে। প্রশ্ন তুলেছেন জাপার সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররা। উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে দহবন্দ ইউনিয়নে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে এসেছেন একজন সাধারণ ভোটার। নাম প্রকাশ করার না শর্তে জানান,উপজেলায় এমপি আছেন জাতীয় পার্টির, তাই ভোটটাও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে লাঙ্গল মার্কায় দিয়েছি। কিন্তু লাঙল মার্কা দহবন্দ ইউনিয়নসহ পুরো উপজেলায় হেরে যাবে,তা ভাবিনি এর দায় কার? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
অন্য দিকে পুরো উপজেলায় নৌকা মার্কা মনোনীত মাত্র দুই জন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকার এমন ভরাডুবি দেখে ক্ষোভ বিরাজ করছে নৌকা সমর্থকদের মাঝে। পরীক্ষিত ও জনপ্রিয় নেতাদের নৌকা প্রতীক না দেয়ায় নৌকার টিকিট নিয়ে বৈতরণী পাড় হওয়া দুঃস্বপ্নই রয়ে গেলো বলে দাবী নৌকা সমর্থকদের।
উল্লেখ্য যে,সহিংসতার ঘটনায় ২ ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত করা হয় বলে জানা গেছে। পরে রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ সেকেন্দার আলী ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করেন।
চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন যারাঃ
উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আব্দুল জব্বার মিয়া (মোটরসাইকেল), সোনারায় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ বদিরুল আহসান সেলিম (চশমা), তারাপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম (মোটরসাইকেল), বেলকা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ (দুটি পাতা), দহবন্দ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল আলম সরকার রেজা (নৌকা), সর্বানন্দ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জহুরুল ইসলাম (মোটরসাইকেল), রামজীবন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শামছুল হুদা (আনারস), ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোখলেছুর রহমান মন্ডল (ঘোড়া), ছাপড়হাটী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কনক কুমার গোস্বামী (নৌকা), শান্তিরাম ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবিএম মিজানুর রহমান খোকন (দুটি পাতা) এবং কাপাসিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মঞ্জু মিয়া (চশমা) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ১০৩ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ২১৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৫৫৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১০ হাজার ৩০৩ জন।