মুহা. ইকবাল আজাদ, ক্রীড়া প্রতিবেদক।
পাড়ার ক্রিকেটের টুর্নামেন্টে সহোদর ভাই কিংবা বন্ধুর বিপক্ষে খেলার আনন্দটা বরাবরই উপভোগ্য। আন্তজার্তিক ক্রিকেটে পারস্পারিক দেশ ভারত-পাকিস্তানের রসায়নটা জমে উঠে বেশ। তবে একই ঘরের দুই সন্তান যদি আকাশ পাতাল হয়, তবে জমে উঠার ব্যাপারটা সেভাবে পরিলক্ষিত হয় না। ক্রিকেটে ইংল্যান্ড আয়ারল্যান্ডের ব্যাপারটা তেমনই, খুব আলোচিত হয়ে উঠে না। ওয়ানডে সংস্করণের শীর্ষ দল ইংল্যান্ড এবং তালিকার তলানিতে থাকা আয়ারল্যান্ড এর পার্থক্যটা এখানেই। উভয়ের মেধা, দক্ষতা, বিচক্ষণতার তফাতখানি ক্রিকেট যুদ্ধের আমোদকে আড়াল করে দেয়।
প্রভাবশালী দেশগুলো পার্শ্ববর্তী ছোট দেশগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করবে, যুদ্ধের ময়দানে ধরাশায়ী করবে, এটাই জগতের নিয়ম। কিন্তু ছোটোরা যখন রণক্ষেত্রে বড়দের হারিয়ে দেয়, পরাভূত করে তখনই বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়। কেউবা পরাশক্তির পরাজয়ে আনন্দ পায়। গতকাল আয়ারল্যান্ডের কাছে ইংল্যান্ডের ৭ উইকেটের হারে তেমনি খুশি হয়েছে অনেক দেশ কিংবা বিশ্ব ক্রিকেটের একনিষ্ঠ কতিপয় ভক্ত।
২০০৬ সালে জুনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলে আয়ারল্যান্ড। গত ১৪ বছরে ১৩ ম্যাচ খেলেছে সদ্য বিশ্বকাপ-জয়ীদের বিপক্ষে। তাতে আইরিশদের ১০ ম্যাচে হারের (এক ম্যাচ পরিত্যক্ত) পাশাপাশি জয় মাত্র ২টি। শক্তিমত্তার বিচারে বড় দলের সাথে ছোট দলের ব্যবধানও হবে বড়সড়, এটাই অনুমেয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আইরিশদের জয় দুটি এসেছে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে। ৩০০ অধিক রান তাড়া করে। তার থেকে বড় আশ্চর্যের তথ্য হলো, উভয় জয়েই আয়ারল্যান্ড করেছে ৩২৯ রান।
রান তাড়ায় বালবির্নির দল বিশ্বমঞ্চেও সফল। ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ তিনবার তিনশো রান তাড়া করে জিতেছে আয়ারল্যান্ড। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ৩০৭ টার্গেটে হেসেখেলে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছিলো আইরিশরা। পুনরায় ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে সেই ৩০৭ রান তাড়া করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করেছিলো আয়ারল্যান্ড। বিশ্বকাপে তিনশো তাড়া আইরিশদের আরেকটি জয় ইংল্যান্ডের সাথে। ২০১১ সালের বিশ্বমঞ্চে কেভিন ও’ব্রায়েনের সেদিনের দ্রুততম সেঞ্চুরির মাইলফলক আজও শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। ইংল্যান্ডের দেওয়া তিনশো অধিক রানের টার্গেটে ৩২৯ রান করে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে হারায় উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের দল। দীর্ঘ ৮ বছর পর গতকাল সেই ৩২৯ এ ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয়বারের মতো ধরাশায়ী করে আইরিশরা। ব্যাপারটা এমন, ‘৩০৭’ এবং ‘৩২৯’ এ-ই যেন আইরিশদের গুপ্তধন।
মিলে যাওয়া ছন্দের এখানেই শেষ নয়। আইরিশরা চার বার ৩০০ রান তাড়া করে জেতার কাজে জন্ম দিয়েছে শত বিস্ময়। ইংল্যান্ডের সাথে দুবার ‘৩২৯’ রানে রয়েছে যথেষ্ট মিল। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ম্যাচে ইংল্যান্ডের হয়ে তিনজন পঞ্চাশোর্ধ্ব রান করেছিলেন। গতকালও করেছেন তিন ব্যাটসম্যান। সেবার আয়ারল্যান্ডের হয়ে সফল বোলার ছিলেন জন মুনি। এই ডানহাতি মিডিয়াম পেসারের সাফল্যে ইংল্যান্ডকে ৩২৭ রানে আটকে রাখতে পেরেছেন আইরিশরা। এবারও আয়ারল্যান্ডের সফল বোলার ক্রেইগ ইয়াং, একজন মিডিয়াম পেসার। সেবার উভয় অধিনায়কের কেউই হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি। এবার দুই অধিনায়ক-ই সেঞ্চুরি করেছেন।
বিশ্বকাপে ৩০০ রান তাড়ার ক্ষেত্রে বাকি দুই ম্যাচেও যেন কবির অন্তমিল কাব্য লিখেছেন আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দল। ২০১১ এর বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ৩০৭ রানের টার্গেটে জিতেছিলো আইরিশরা। আবার ২০১৫ এর বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৩০৭ রান করেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাস্ত করেছিলো পোর্টারফিল্ডের দল। উভয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানরা একটি শতক এবং একটি অর্ধশতক করেছিলো। আবার উভয় ম্যাচেই আইরিশ তিনজন ব্যাটসম্যান পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন। ২০১১ এ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষের ম্যাচে উভয়ই অধিনায়ক অর্ধশতাধিক রান করেছেন। ২০১৫ এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আয়ারল্যান্ডের ম্যাচে উভয়ই দলের উইকেটকিপার ১ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন।
প্রতিপক্ষের দেওয়া টার্গেট যদি হয় ৩০৭ কিংবা ৩২৯ এর কাছাকাছি। আইরিশরা যেন সেখানেই কাব্য লিখতে বসেন৷ একাধিকবার সেই কাব্য রচনা করে দেখিয়েছেন, ক্রিকেট প্রেমীদের তাক লাগিয়েছেন। ভবিষ্যতেও হয়তো এমন অন্তমিল পরিসংখ্যানের জন্ম দিতে মুখিয়ে থাকবেন। পাশাপাশি আইরিশদের সৌভাগ্যবান ‘৩০৭’ এবং ‘৩২৯’ রান তাড়া করার দিনে প্রতিপক্ষ কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসবেন, সতর্ক থাকবেন।