নব্বই দশকে যারা প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়েছে তাদের অধিকাংশই এডসন অ্যারনটিস দো নাসিমেন্টের ভক্ত। কারন তখন বাংলা বইয়ে ‘কালো মানিক’ গল্প ছিলো। গল্পের লেখক ছিলেন শামসুজ্জামান খান যদিও গল্পে লেখকের নাম দেওয়া ছিলো না৷ বাংলাদেশে ভিনদেশী ফুটবলের প্রতি আকর্ষন পরিবারতন্ত্র থেকেই পেয়ে আসে সেই সুত্রে বলা যায় বর্তমানে বাংলাদেশের বিশাল ব্রাজিলিয়ান সমর্থক গোষ্ঠীর পিছনে “কালো মানিক গল্পে’র” বড় অবদান রয়েছে৷ ফুটবলের এই কালো মানিকের জন্ম ব্রাজিলের ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাকোয়েস শহরের এক বস্তিতে। প্রথমে বস্তির গলিতে মোজার ভিতর খবরের কাজ ভরে ফুটবল বানিয়ে পায়ের জাদু দেখানো শুরু করেন ডিকো। বস্তির সবাই তাকে ডিকো নামেই চিনতো। রেলস্টেশনে ঝাড়ু দেওয়া, চায়ের দোকানে কাজ করা, জুতা পরিস্কার করা এইরকম আরো বিভিন্ন কাজ করতে হয়েছে ফুটবলের এই কালো মানিকের দরিদ্র পরিবারের অভাব মেটানোর জন্য। মাত্র ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অভিষেক হয় পেলের। অভিষেক ম্যাচেই গোল করে সর্বকনিষ্ঠ প্লেয়ার হিসাবে গোল করার রেকর্ড গড়েন পেলে। এরপর আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি পেলেকে।পুরো ক্যারিয়ারে হাজারের উপর গোল করেন পেলে। ১৯৫৮,১৯৬২,১৯৬৬ ও ১৯৭০ বিশ্বকাপ খেলেন পেলে তারমধ্য ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৬৬ সালে ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার হিসাবে তিনটা বিশ্বকাপ নিজের করে নেন কালো মানিক। ক্যারিয়ার এর পুরোটা সময় খেলেছেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোস এর হয়ে৷ পেলেকে একনজর দেখার জন্য নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেমে গিয়েছিল। এখানেই ফুটবলের এই সেরা শিল্পর সৌন্দর্য। মাত্র ২৬ বছর বয়সে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল থেকে অবসর নেনে পেলে। তখন প্রতিপক্ষের আক্রমনের মূল লক্ষ হয়েছিলেন পেলে৷ অবসরের সময় তিনি বলেন “আক্রমনাত্মক সুন্দর খেলা নয়, বরং খেলোয়াড়দের আক্রমন করে খেলাই এখনকার বৈশিষ্ট হয়ে দাড়িয়েছে। বল নয়, মানুষই যখন লক্ষ্য তখন ফুটবল তার সৌন্দর্য হারাতে বাধ্য”। রয়টার্স, অলিম্পিক কমিটি, ইউনিসেফ, বিবিসি, ফুটবলের গোল্ডেন বলজয়ী ফুটবলারদের ভোটেও গত শতকের সেরা ক্রীড়াব্যাক্তিত্ব নির্বাচিত হয় পেলে।
এডসন অ্যারনটিস দো নাসিমেন্ট (১৯৪০-২০২২) বিদায় কিংবদন্তি।
রাকিব ইসলাম ফারাবী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়