সারা বিশ্বে মেসি, নেইমার বা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ফুটবলের জাদুকর হিসেবে পরিচিতি হলেও এ যেন আরেক ফুটবল জাদুকর। একবার বা দুইবার বরং ২৩ বার নাম লিখেছেন গিনেস বুক ওফ ওয়াল্ড রেকর্ডে। নাম তার কনক কর্মকার। আর নিউজ ভিশন বিডির পক্ষ থেকে কনক কর্মকারের গল্প শোনাচ্ছেন শাহরিয়ার নাবিল –
সময়টা তখন ২০১৮ সাল ইউটিউবে একদিন হঠাৎ করে একটি ভিডিও দেখি যেখানে ফুটবল ফ্রিস্টাইল জানতে পারি এবং তারা অনেক ভাবে ফুটবলটাকে প্রদর্শন করতেছে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি আমার প্রচুর ঝোঁক ছিল। আমি তখন এলাকায় মোটামুটি ভালো ফুটবল খেলতাম। তখন আমার ওয়াল্ড রেকর্ডে নাম লেখানোর চিন্তা আসে। তারপর আমি ছয় মাস অনুশীলন করতে থাকি। আমি তখন মোটামুটি ফুটবল ফ্রিস্টাইলের সাথে পরিচয় হয়, এর মাঝে আমি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ওয়াল্ড রেকর্ড সম্পর্কে জানতে পারি। আমি যেহেতু ফুটবল ভালো আঙুলে ঘুরাতে পারতাম আমি চেষ্টা করতেছিলাম আঙুলে ফুটবল ঘুরানোর উপর কোনো রেকর্ড করা যায় কি না? এখন আমি এটি রেকর্ড করতে চাই। কিন্তু এটার উপর গিনেস বুকে কোনো রেকর্ড নেই। আমি কিছুদিন পরে জানতে পারি গিনেস বুক দুইটা উপায় রেকর্ড করা যায় একটা হলো টাকা দিয়ে নতুন কোনো রেকর্ড করা, আর দ্বিতীয়টা হলো অন্য কারো রেকর্ড ভেঙে ফেলা। যেহেতু আমি ছাত্র ছিলাম তো টাকা ছাড়া যেটা করা যায় সেটা আমার জন্য ভালো। এই কারণ আমি আঙুলে ঘুরানোর উপর রেকর্ডটা করতে পারি নি। তাছাড়া আমি কোনো কিছু ব্যালেঞ্চ করতে ভালো পারতাম। তারপর আমি গিনেস বুক অফ ওয়াল্ড রেকর্ড ওয়েবসাইট গিয়ে জানতে পারি “কপালে কাগজের কাপ ব্যালেঞ্জ করা” এবং তখন এইটার রেকর্ডটা ছিল ৩২০ টি কাপের উপর করা। তারপর আমি এই রেকর্ডটা ভেঙে ১,১৫০ টি কাপ নিয়ে গিনেস বুকে রেকর্ড করি ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ। আমার অফিশিয়াল ভাবে রেকর্ডের একমাস পর সার্টিফিকেট হাতে আসে।
কয়েকদিন আগে কনক কর্মকার মাত্র ১ দিনে ৩টি ওয়াল্ড রেকর্ডে গড়েন। এ সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,
গতমাসে আমি একদিনেই পাঁচটা রেকর্ড করেছিলাম, এগুলো নির্ভর করে অনুশীলনের উপর। এর তিনটা ভাগ আছে। আমি যে তিনটা রেকর্ড করেছি এগুলো মিডিয়াম ক্যাটাগরির রেকর্ড ছিল। মিডিয়াম ক্যাটাগরির রেকর্ড একসাথে তিন থেকে চারটা করা যায়, যদি আপনি তিন-চার মাস ধরে অনুশীলন করেন। আমি অনুশীলন করে সিদ্ধান্ত নিলাম একদিনে তিনটা রেকর্ড করব। সেই থেকে এই তিনটি রেকর্ড করা।
কনক আরও জানালেন, তার রেকর্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে কপালে ১,১৫০ টি কাগজের কাপ ৬৬ সেকেন্ড রাখা, কপালের উপর ২৫ মিনিট গিটার ব্যালেন্স করা, ঘাড় দিয়ে এক মিনিটে ৩৬ বার বাস্কেটবল ক্যাচ ধরা, থুতনিতে ১৫ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড গিটার ব্যালেন্স করা, হাতের তালুর বিপরীত পাশে ১৫টি ডিম ব্যালেন্স করে রাখা, এক মিনিটে সর্বোচ্চ (১৬৩) বার হাঁটুর উপর ফুটবল ড্রপ দেওয়া, হাঁটুর উপর ৪ মিনিট ৬ সেকেন্ড ফুটবল ব্যালান্স করা, থুতনির উপর চেয়ার ৩৫ মিনিট ১০ সেকেন্ড ব্যালেন্স করা, এক মিনিটে ১৬২ বার হাঁটুতে ফুটবল বাউন্স করানো। এছাড়া আরও রয়েছে চিবুকের উপর দীর্ঘ ৩৫ মিনিট চেয়ার ব্যালেন্স করা, মাথার উপর ১৫টি টয়লেট পেপারের রোল ব্যালেন্স করা, ৩০ সেকেন্ডে ৫০টি কয়েনের স্তূপীকৃত টাওয়ার (দুই জনের দল) তৈরি, এক মিনিটে ৭৫টি কয়েনের স্তূপীকৃত টাওয়ার (দুই জনের দল) তৈরি, এক মিনিটে ৭৬ বার ফুটবল আর্ম রোল করা, ৬৩ বার ফুটবল (সকার বল) হেড স্টল থেকে নোজ স্টলে স্থানান্তর, এক মিনিটে সবচেয়ে বেশিবার ফুটবলে (সকার) পায়ের আঙুলের টোকা দেওয়া, বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দিয়ে সবচেয়ে বড় আকারের বাক্য লেখা, একটানা সবচেয়ে বেশিবার স্পিনিং বাস্কেটবল ক্যাচ ধরা, ৩০ সেকেন্ডে সর্বাধিক আর্ম রোল (ফুটবল) করা এবং ৩০ সেকেন্ডে সবচেয়ে বেশি ফুটবল ‘হটস্টেপার’ বল নিয়ন্ত্রণের কৌশল এবং তার সর্বশেষ রেকর্ড হলো ১ মিনিটে সবচেয়ে বেশি ফুটবল ‘হটস্টেপার” বল নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ৩০ সেকেন্ড এক পায়ে ফুটবল ‘হটস্টেপার’ বল নিয়ন্ত্রণের কৌশল।
কনক কর্মকার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী। কনকের ২৩টি রেকর্ড করতে সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর। তিনি ১ম বাংলাদেশী হিসেবে ১ বছরে ১০টি বিশ্ব রেকর্ড করেছেন।
কনকের জন্ম ও পৈতৃক নিবাস কুমিল্লায়। তবে তিনি বেড়ে উঠেছেন নোয়াখালীতে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। অর্জনের প্রতি পদে পদে ছিল সমাজের বাধা। এছাড়া শারীরিকভাবেও কিছুটা দুর্বল হওয়ায় সব সময় পেয়েছেন মানুষের অবহেলা, শুনেছেন নানা কটুকথা। শুধু তিনি একা নন, তার পরিবারকেও সহ্য করতে হয়েছে মানুষের নানা কথা। তবে দমে যাননি। হাল ছাড়েননি এগিয়ে গিয়েছেন দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে।
কনক বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন। তিনি ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি তার ব্যস্ততা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড নিয়ে। কনকের স্বপ্ন তিনি তার এই রেকর্ডকে শততম রেকর্ড নিয়ে যাবেন এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে লাল-সবুজের পতাকাকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরার।