মুহা. ইকবাল আজাদ :
এশিয়া কাপের উদ্দেশ্যে আজ দেশ ছেড়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিমানবন্দরে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও ভক্তদের জন্য মিডিয়ার সামনে কোন সুখবর দেননি টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা কোন ক্রিকেটার। অবশ্য এবারের এশিয়া কাপ থেকে খুব বেশি আশাও করছেন না ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান। তবুও এতটুকু আশাবাদী যে, এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশ নতুন মোড়কে গড়ে উঠবে। হয়তো ভক্তকূল সব ব্যর্থতা মেনে নিয়েই এশিয়া কাপ দেখতে বসবেন। কিন্তু সব ছাপিয়ে একটা প্রশ্ন থাকছেই, বাংলাদেশ পারবে তো নিজেদের উন্নতির শুরুটা করতে?
ওয়ানডে বাংলাদেশ অন্যতম পরাশক্তি হলেও টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে পারফরম্যান্সের অবস্থা যাচ্ছেতাই। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টির দুরাবস্থা কোনভাবেই মানার মতো না। সম্প্রতি জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজ হেরে নিজেদের দুর্বলতা আরেকবার উন্মোচিত করেছে মুস্তাফিজ-আফিফরা। শেষ ওয়েস্ট উন্ডিজ সিরিজে ধবোলধোলাই হয়ে এসেছিল রক্ষনশীল রিয়াদের দল। এরপর বিসিবি নড়চড়ে বসেছে। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে এবার একটু উন্নতি চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। এর মাঝে পরিবর্তন আনা হয়েছে কোচ আর অধিনায়কত্বে।
বাংলাদেশ কেন টি-টোয়েন্টিতে উন্নতি করতে পারছে না? কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে এর উত্তরটা দিয়েছিলেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি বলেন, “টি-টোয়েন্টি জিততে হলে আমাদের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের ১৮০-২০০ এর জন্য খেলতে হবে। তাতে আপনি একদিন সফল হবেন, একদিন অল্প রানে আউট হবেন। কিন্তু কোনভাবেই আপনার এগ্রেসিভ মাইন্ডসেটকে সরানো যাবে না।” মূলত বাংলাদেশ এই ব্যাপারটা সরবরাহ করতে পারে না বলেই প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করছে। নতুন অধিনায়ক, নতুন পরামর্শকের সাথে যদি বাংলাদেশের ব্যাটাররা একটু নতুন মাইন্ডসেটে ব্যাটিং করতে পারে তবে হয়তো শীঘ্রই নতুনভাবে জিততে শিখবে বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপে যাওয়ার আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলো বাংলাদেশ দল। তাতে আহামরি উন্নতি না দেখা গেলেও ব্যাটিংয়ে কিছু বিনোদন দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক-সাকিবরা। তবে বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে ছিলো হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ফিল্ডিংয়ের এই দৈনদশা গত বিশ্বকাপেও ভুগিয়েছে সাকিবদের। এর মাঝে ফিল্ডিং কোচ পরিবর্তন হলেও ভুল শুধরাতে পারেনি বাংলাদেশ দল। তবে নিজেদের ফিল্ডিংয়ের প্রতি একটু আন্তিরক হতে পারলে পাল্টে যেতে পারে এশিয়া কাপের ভাগ্য।
ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও আলাদা করে নজর দেওয়ার সময় এসেছে টাইগারদের। বোলিংয়ে নিজেদের কিছুটা ভালো বললেও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তার প্রমাণ দিচ্ছে না। শেষ জিম্বাবুয়ে সফরে মুস্তাফিজদের অবস্থা ছিলো নাজুক। শুরুতে ভালো করলেও ডেথ ওভারে এসে নিজেদের খেই হারিয়ে ফেলেছেন। শেষ দিকে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ইয়ার্কার, স্লোয়ার করতে ভুলেই যেতেন ফাস্ট বোলাররা। গত সিরিজে সাকিব না থাকলেও এশিয়া কাপে সাকিবের উপস্থিতি বোলিংয়ে আলাদা মাত্রা যুক্ত করবে। সাথে বাকিরা যদি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বল করতে পারে তবে প্রতিপক্ষকে অল্পতেই আটকে রাখা সম্ভব।
পাওয়ার হিটারনামক সৌভাগ্য বাংলাদেশের নেই। কিংবা একজন খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করে ম্যাচ জেতারও সুযোগ নেই সাকিবদের হাতে। দলকে জিততে হলে অবশ্যই দলগত পারফরম্যান্স লাগবে। খেলোয়াড়দের নিজেদের রোলে সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে। হয়তো এশিয়া কাপে ভালো করতে নিজেদের সেরাটা দিতেই মুুখিয়ে থাকবেন খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমন্টেসহ দলের প্রতিটি স্টাফ। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।