গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট পাশ হওয়ার পর থেকেই অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে বলে খবর প্রকাশ হয়।
অনলাইন ক্লাসের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মোবাইল কিনতে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তা নাকচ করেছে কর্তৃপক্ষ।
যেসব শিক্ষার্থী আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না শুধু তাদেরকে একটা ‘গ্রহণযোগ্য পন্থায়’ যতটুকু সহায়তা করা সম্ভব, তা করার চেষ্টা চলছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য ৮৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন হয়। এরপর থেকেই অনলাইন ক্লাসের জন্য অর্থ সহায়তার ওই খবর ছড়ায়।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। তিন মাসের বেশি সময় পরে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে অনলাইনে ক্লাস।
অনলাইন ক্লাসের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার দাবি উঠলেও এবারের বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি।
তবে বাজেট বইয়ের মুখবন্ধে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন অনলাইনে ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্য স্মার্টফোন কিনতে ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার একটি প্রস্তাব করেছিলেন।
সেখানে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হল ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম। এ কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে, কিন্তু ব্যাপক ব্যয় অব্যাহত রয়েছে। সুতরাং বাস্তব সরকারি তথা জনগণের অর্থের যথার্থ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন মহল হতে অনলাইন ক্লাস শুরুর প্রস্তাব আসছে, তবে এক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্যেও অর্থ বরাদ্দসহ কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
“অনলাইন ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে যদি ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকা করে স্মার্টফোন কেনার জন্য অনুদান দেওয়া হয়, তবে ৪০ কোটি টাকার প্রয়োজন। বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা ৫ম গ্রেড বা তদুর্ধ্ব গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন তাদের মূল বেতন এক বৎসরের জন্য ৩% বা ৫% কমিয়ে দিলে প্রায় ১০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহলি হতে আরও ১০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া সম্ভব। বাকি ২০ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন তহবিল থেকে দেওয়া যেতে পারে। অথবা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরকারের নিকট হতে ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের আবেদন করা যেতে পারে।”
কোষাধ্যক্ষের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালও এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করে।
এদিকে এ বছরের বাজেটই কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীনের শেষ বাজেট ছিল। গত ৯ জুলাই তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে এখনও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ না হওয়ায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ এবার সিনেটে বাজেট উত্থাপন করেছেন।
বাজেট বইয়ের মুখবন্ধে অনলাইন ক্লাসের জন্য ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন। তবে তার ওই প্রস্তাব সিনেট অধিবেশনে তোলাই হয়নি।
বাজেট বইয়ের মুখবন্ধে অনলাইন ক্লাসের জন্য ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন। তবে তার ওই প্রস্তাব সিনেট অধিবেশনে তোলাই হয়নি।
শিক্ষার্থীদের সহায়তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক সামাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই প্রস্তাবটা কোষাধ্যক্ষ বাজেট বইয়ের ড্রাফটে লিখেছিলেন। এটা তিনি উদাহরণ হিসেবে লিখেছিলেন। এটা প্রস্তাব আকারে সিনেটে পেশ হয়নি।
“তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর তো মোবাইল কেনার প্রয়োজন নেই। যাদের অনলাইন ক্লাস করার জন্য ডিভাইস নেই, তাদের জন্য ইউজিসি বা সরকার চাইলে একটা থোক বরাদ্দ দিতে পারে।”
গত ২৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রধানদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সভায় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে সীমিত সামর্থ্য দিয়েই পুরোপুরি অনলাইন ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে নীতিমালা প্রণয়ন, তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণ, আর্থিক বিষয়সহ আনুসঙ্গিক বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্য সভা থেকে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামালকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়৷
এই কমিটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে জরিপ চালিয়ে অনলাইন ক্লাসের প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।
এছাড়া অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাহিদা জানতে রেজিস্টার অফিসের শিক্ষা বিভাগ থেকে একটি চিঠি ইস্যু করে বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেসব শিক্ষার্থী আর্থিক সমস্যার জন্য ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না, তাদের যুক্ত করতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আগামী সপ্তাহে হয়ত একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।
“তবে এটা কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয় নয়। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সাথে সম্পৃক্ত রাখতে এবং শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য আমরা তাদের সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখছি।”
তিনি বলেন, “প্যানডেমিক প্রলম্বিত হলে অনলাইনেই আমাদের পাঠদান চালিয়ে যেতে হবে। যাদের প্রতিবন্ধকতা আছে, একটা গ্রহণযোগ্য পন্থায় তাদের সমস্যা সমাধান করা হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিভাগ বা অনুষদ অথবা কেন্দ্রীয়ভাবে হলেও যতটুকু সহায়তা করা সম্ভব, সেটা দেওয়া হবে।”
মাকসুদ কামাল বলেন, “প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে আমাদের শিক্ষক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদ অসহায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে থাকছে। এখন অনলাইন ক্লাসেও তাদের যুক্ত রাখতে যটটুকু সম্ভব সহায়তা করা হবে।এজন্য আমরা বিভিন্ন মহলের সাথে কথা বলছি।”
শিক্ষার্থীদের সুলভমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দিতে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনলাইন ক্লাসের জন্য কমিটি আছে। সেই কমিটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাহিদা নিরূপণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাপাসিটির আলোকে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রয়োজন হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সহায়তা চাওয়া হবে।”
বিডিনিউজ২৪