মোঃ কাওসার, ক্যাম্পাস সম্পাদক :
এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় খ ইউনিটে ১২ তম হয়ে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী হাবিবা নুসরাত মীম। তিনি খুলনা এম এম সিটি কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন। তিনি ভার্সিটি পরীক্ষার জন্য কোচিং করেছেন ‘ফোকাস’ নামক একটি কোচিং সেন্টারে। কিন্তু ইউসিসি নামক আরেকটি কোচিং সেন্টার দাবি করে যে নুসরাত ইউসিসিতে কোচিং করেছে। এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঐ শিক্ষার্থী নিজেই।
নুসরাত UCC Group নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে তাকে নিয়ে দেওয়া পোস্টের কমেন্টে লিখেন,
” আমি কোনোদিনও ইউসিসির স্টুডেন্ট ছিলাম না। আন্দাজে পোস্ট দেন নাকি? আমি আপনাদেরকে বারবার নিষেধ করার পরও আমার নামে মিথ্যা পোস্ট কেন দিয়েছেন? আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু ফোকাস খুলনা শাখায় কোচিং করছি।”
এছাড়াও নুসরাত তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেও তিনি নিশ্চিত করেন যে তিনি শুধু ফোকাস খুলনা শাখায় কোচিং করেছে এবং তাকে নিয়ে কোচিংগুলোকে বিভ্রান্তি না ছড়াতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটে ১ম হয়েছে খুলনা এম এম সিটি কলেজের আরেক শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী মন্ডল। তাকে নিয়েও বিভিন্ন কোচিংগুলোর মধ্যে নিজেদের শিক্ষার্থী দাবি করতে দেখা যায়।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে নানা রুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বিভিন্ন কোচিংয়ের পোস্টের ছবি শেয়ার করে রসাত্মকভাবে শিরোনাম দিয়েছেন ” বিধি, তুমি বলে দাও আমি কার”! নানান বিভ্রান্তির মধ্যে শিক্ষার্থী নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে তিনি জানিয়েছেন যে তিনি ফোকাস কোচিংয়ে কোচিং করেছেন। এছাড়াও তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকেও নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।
এবছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় A ইউনিটে ১ম হয়েছে দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা,ঢাকা এর শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান। তাকে নিয়ে আইকন প্লাস নামক একটি কোচিং সেন্টারের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট দিয়ে দাবি করতে দেখা যায় যে তিনি আইকন প্লাস কোচিংয়ের শিক্ষার্থী। কিন্তু ঐ পোস্টেই শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান নিজেই সরাসরি কমেন্ট করে তার প্রতিবাদ জানান। হাবিবুর রহমান বলেন, ” আসসালামু আলাইকুম। ভাই, আমি ফোকাস উত্তরা শাখার নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলাম। এবং ফোকাসের প্রত্যেকটি ক্লাস করেছি। icon plus এ কোন ক্লাস এবং কোন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়নি। অনুমতি ছাড়া আমার ছবি ব্যবহার করা উচিৎ হয়নি। আশা করি সংশোধন করবেন।”
এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় খ ইউনিটে ৪র্থ হয়েছেন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম। তাকে ইউসিসি নামক কোচিংটি ইউসিসি কোচিংয়ের শিক্ষার্থী বলে দাবি করলেও ঐ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তিনি ইউসিসিতে কোনো ক্লাশ করেনি।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মোঃ জাকারিয়া নামক এক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে ১ম হয়েছিলেন। আইকন প্লাস নামক একটি কোচিং তাকে তাদের কোচিংয়ের ছাত্র বলে দাবি করেন এবং তাকে স্বীকার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন, কিন্তু এর প্রতিবাদে যখন শিক্ষার্থী নিজে বলেন ” আমি শুধু ফোকাসেই কোচিং করেছি, ফোকাস ছাড়া অন্য কোন কোচিংয়ে আমি কোচিং করি নাই” , তখন আইকন প্লাস কোচিংয়ের লোকজন দলবল নিয়ে ঐ শিক্ষার্থীর উপর হামলা করে,ফলে ঐ শিক্ষার্থী আহত হন।
এভাবেই প্রতিবছর বিভিন্ন কোচিংগুলোকে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে দেখা যায় যাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন ইউসিসি, আইকন প্লাস ।
কোচিংগুলোর এমন মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো নিয়ে হচ্ছে নানান আলোচনা সমালোচনা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ‘এভাবে মিথ্যাচার ছড়িয়ে কোচিংগুলোর লাভ কী?’ কোচিংগুলোর এমন মিথ্যা প্রচারণায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সমাজ সবাইকেই বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।
ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীকে চান্স পেতে কোচিং অনেক বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চান্সপ্রাপ্ত সিংহভাগ শিক্ষার্থীদেরকেই কোনো না কোনো কোচিংয়ে ক্লাশ করতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে এক কোচিং শিক্ষক বলেন,” একজন শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সবচেয়ে বড় অবদান হলো তার স্কুল কলেজ বা একাডেমি প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখানেই তার ভিত্তি তৈরি হয়। তবে সেখানের পড়াশোনা একটু ভিন্ন রকম। কোচিংগুলোতে ভার্সিটিতে পড়ুয়া অভিজ্ঞ মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার আলোকে পড়ান যেটা শিক্ষার্থী জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লক্ষ্য করলে দেখবেন ভার্সিটিতে শীর্ষস্থান দখল সহ যারা চান্স পায় মোটামুটি সবাই কোথাও না কোথাও কোচিং করেছে “।
তবে প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট প্রকাশের পর কোচিংগুলোর টানাহেঁচড়ায় বিব্রত হন শিক্ষার্থী নিজেও। এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো নিয়ে বিরক্ত অনেকেই। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন কোচিং বাণিজ্য এবং নৈতিকতাসহ শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য নিয়েও।