কাজী ফাহমিদা কানন, কু্বি :
সময় গিয়াছে, নূতন হইয়াছে পুরাতন। দ্বার খোলো আবার, আবার আসিয়াছে নূতন, লও তাহারে বরণ করিয়া।
নতুনদের আগমন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ এমন কথাই বলেছিলেন। নবীনদের বরণ করে নেওয়ার গুরু দায়িত্ব থাকে প্রবীণ শিক্ষার্থীদের উপর। নানান আয়োজনে বরণের সাথে সাথে নবীন শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশের সাথে পরিচয় গড়ে উঠে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে সম্পূর্ণ মুক্ত জ্ঞান চর্চার রাজ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন স্কুল ও কলেজের পাঠ চুকিয়ে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একটিতে নিজের আসন নিশ্চিত করা। শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ মানেই নতুনত্বের হাতছানি।
পাহাড় ঘেঁষা ৫০ একরের ছোট্ট বিশ্ববিদ্যালয় কুবি। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি পার করেছে ১ যুগেরও বেশি সময়। ইতিহাস সমৃদ্ধ শালবনবিহার ছিলো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জ্ঞানচর্চার তীর্থস্থান। তারই পাশে বর্তমান শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র কুমিল্লা বিদ্যালয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাদের ভাবনার কথা জানিয়েছে কয়েকজন নবীন শিক্ষার্থী।
ভাইস চ্যান্সেলর এর নেতৃত্বে কুবি এখন একটি উদীয়মান বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আসলে বলে বোঝানোর মতো না। গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যখন রেজাল্ট দেয়া হয়, তখন থেকেই এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। পরিবার ছেড়ে নতুন পরিবেশে, নতুন মানুষজনের সাথে আগামী ৪টি বছর কিভাবে কাটবে এই নিয়ে আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করছিল। যেদিন জানলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ই আমার গন্তব্য সেদিন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আগ্রহটা যেন আরো কয়েক ধাপ বেড়ে যায়। অবশেষে ৩রা সেপ্টেম্বর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে। সম্মানিত শিক্ষক, সহপাঠি আর সিনিয়রদের সান্নিধ্যে এসে মনে হচ্ছিল যেন আমি আমার জীবনের নতুন একটি ধাপে পা ফেলেছি৷
কলেজ লাইফ এ থাকতেই মূলত আমি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে যতটুকু ভাবনা ছিলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সেই চাহিদার সবটুকু পূরণ করতে না পারলেও অনেকাংশেই পেরেছে বলে আমি মনে করি। তবে ভাইস চ্যান্সেলর এর নেতৃত্বে কুবি এখন একটি উদীয়মান বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সাথে কুমিল্লা হতে দেশের সর্বত্র যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আগ্রহী বলে আমি মনে করি।
তাবাসসুম ইশা, মার্কেটিং বিভাগ
————
কুবিতে আমার সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি একটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র(টিএসসি)
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সবারই অনেক ধরণের আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা।প্রথম দিনেই কুবির সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। বাড়ি ছেড়ে আসায় কিছুটা মন খারাপ থাকলেও কুবির চারপাশের সৌন্দর্য আর ব্যাচমেট-সিনিয়রদের সাথে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠায় মন খারাপটা দূর হয়ে যায়। আমার বিভাগের শিক্ষকগণও খুব আন্তরিক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার প্রথম চাওয়াই ছিল বন্ধুত্বপুর্ণ একটি বিভাগ, যেটি আমি পেয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে কুবিতে আমার সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি একটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র(টিএসসি)। আশা করি আমাদের নতুন ক্যাম্পাসে সকল সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
তারপর ও পড়াশোনা,গবেষণা সহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নতির কারণে কুবি এখন আমার মত অনেক শিক্ষার্থীরই পছন্দের একটি বিশ্ববিদ্যালয় যার ফলস্বরুপ ২০২২-২৩ সালের গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার আবেদন সংখ্যায় শীর্ষে ছিল।
রেজওয়ানুল আমিন সিয়াম, রসায়ন বিভাগ
————-
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তার উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য প্রশংসার দাবিদার
একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্যই স্বপ্ন। আর সেখানে যখন আমরা নিজেদের স্থান করে নিতে পারি তখন তার অনুভূতিটা একদমই ভিন্ন সাধের থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমি যখন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলাম তখন আমি খুবই আগ্রহভরা মন নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনের জন্য। আবার অন্যদিকে শঙ্কায়ও ছিলাম যে জীবনের নতুন একটা অধ্যায় নতুন পরিবেশ আমি কী পারবো নিজেকে খাপ খায়িয়ে নিতে? অবশেষে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আমাকে দারুণভাবে আশ্চর্যান্বিত করলো। আমি পেলাম জীবন কে দেখার জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই পছন্দের তালিকায় ছিলো অন্যতম। নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় ভেবেছিলাম হয়তো বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে থাকবো কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিনের পর দিন তার বিভিন্ন নতুন নতুন কার্যক্রমের মাধ্যমে আমার ভাবনা সম্পূর্ণ রূপে ভুল প্রমান করে যাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি গুচ্ছ অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের তালিকায় থাকছে হাজারো শিক্ষার্থীর। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তার উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য প্রশংসার দাবিদার।
এমএ শিলা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
———————–
কুবি’তে এমন একটি পরিবেশ কামনা করবো যেখানে বিদ্যার্থীদের মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটবে।
সময়ের পরিক্রমায় আমাদের বিভিন্ন সময় অভিজ্ঞতা কিংবা প্রণালীবদ্ধ জ্ঞান অর্জনের জন্য— বিভিন্ন দ্বারে যেতে হয়। তারই ধারাবাহিকতায়– বেশ কয়েকটি ধাপ পার হয়ে‚ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে‚ একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। জ্ঞান- গবেষণা, আর্ট-কালচার, ‘আইডেন্টিটি’ কিংবা ‘আপওয়ার্ড’ স্যোশাল মবিলিটি বজায় রাখার নিরিখে একজন শিক্ষার্থী তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়। সেইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্বিক দিক থেকে একটি অনুকূল পরিবেশ আশা করে।
যেহেতু ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটি জ্ঞান উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত, তাই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই রীতিসিদ্ধ চিন্তার স্বাধীনতা থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সকলের রূচি, পোষাক, সংস্কৃতি, ভাষা ও চিন্তা-চেতনার বৈচিত্র আমলে নিয়েই প্রত্যেকের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তাছাড়া‚ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষার বিভিন্ন অপরিহার্য নিয়ামক সমূহের অপ্রতুলতা চোখে পড়ার মতোই। যার ফলে আমরা চাইলেও পর্যাপ্ত রিসোর্সের অভাবে শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি অনেকাংশে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। তাই আমরা আশা করবো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের প্রয়োজনীয় সকল চাহিদা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো আমলে নিবে।
পরিশেষে‚ সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি পরিবেশ কামনা করবো যেখানে বিদ্যার্থীদের অনুসন্ধিচ্ছা ও মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটবে। তাই আমরা চাইবো সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক গড়ার প্রেক্ষিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করবে।
তানভীর মাহিম, আইন বিভাগ
——————