চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ নামক প্যানেলের দুই নারী প্রার্থীকে সাইবার বুলিং, স্লাডশ্লেমিং ও ফ্লেমিংসহ অনলাইনে হয়রানির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির ও ভুক্তভোগী দুই নারী প্রার্থী।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ২য় তলার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ ও প্রমাণপত্র দেন প্যানেলের সহ-দপ্তর সম্পাদক পদপ্রার্থী জান্নাতুল আদন নুসরাত ও নির্বাহী সদস্যপ্রার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস সানজিদা।
সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটের ফেসবুকে পেজে জান্নাতুল আদনান নুসরাতের প্রচারের ছবিতে রায়হান খান নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘শিবিরের প্রিয় দাসী।’ একই পেজে জান্নাতুল ফেরদাউস সানজিদার পোস্ট করা ছবিতে গল্প জীবনের আইডি থেকে মন্তব্য করা হয়, ‘জাহান্নামী খূর, শিবিরের যৌন সাথী।’
অভিযোগ দায়েরের সময় উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রশিবিরের জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ ও অর্থ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, আসন্ন চাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন বট আইডি, ভুয়া ফেইসবুক পেইজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদেরকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে নানাবিধ মানহানিকর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষত সাইবার বুলিং, স্লাটশেমিং, ট্যাগিং ও ভুয়া ফ্রেমিংয়ের মাধ্যমে তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এ ধরনের কার্যকলাপ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও মানসিক সুস্থতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, এই অমানবিক ও অনৈতিক কার্যক্রম কেবল নারী শিক্ষার্থীদের সম্মানহানিই ঘটাচ্ছে না, বরং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশকে কলুষিত করছে। অতএব, বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। অভিযোগ পত্রে ভুক্তভোগীরা অভিযুক্ত আইডি, পেইজ ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি যুক্ত করেন।
নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের শেষে ভুক্তভোগী জান্নাতুল আদন নুসরাত বলেন, প্রথমে দপ্তর সম্পাদক এবং সহ-দপ্তর সম্পাদক পদটি শুধু ছেলেদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রক্ষিতে এই পদটি ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তখনই আমি সহ-দপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিই। তবে আমরা দেখছি বিভিন্নভাবে আমাদেরকে সাইবার বুলিং, স্লাডশেমিং (চরিত্রহনন) করা হচ্ছে। এসবের প্রমাণসহ আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনের নিকট অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি, আমরা এর প্রতিকার পাব।
বিভিন্ন বট আইডি থেকে চরিত্রহননের চেষ্টা চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ জানান, আমাদের প্যানেলের দুই নারী প্রার্থীকে ফেসবুকে অকথ্য ও নোংরা ভাষায় বিভিন্ন মন্তব্য করা হচ্ছে। এসব বট আইডি থেকে এমন এমন অকথ্য ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে কমেন্ট করা হচ্ছে, যা মুখে উচ্চারণের মত না। তিনি আরো জানান, আমরা নির্বাচন কমিশনারের কাছে নারীদের নিয়ে এসব সাইবার বুলিংয়ের প্রতিকারের জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এটার প্রতিকার করবেন।
শ্ল্যাডশেমিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানার প্রধান নির্বাচন কশিমনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের নিকট তারা লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জমা দিয়েছে। আমরা নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসারে এটির ব্যবস্থা নেব। অভিযুক্তকে যেহেতু এখনো চিহ্নিত করা যায়নি, সেহেতু অভিযুক্ত আইডি যদি কোনো প্রার্থীর হয়, তার জন্য এক ধরনের শাস্তি হবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী হলে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।