ফাহমিদা কানন :
প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। আন্তর্জাতিক স্তরে পালনীয় সেই দিবসগুলির মধ্যে একটি হল “আন্তর্জাতিক হলোকাস্ট স্মরণ দিবস (International Holocaust Remembrance Day)” হলোকাস্ট মেমোরিয়াল ডে ট্রাস্ট কতৃক নির্বাচিত এই বছরের প্রতিপাদ্য হল ‘Fragility of Freedom’.
প্রতি বছর ২৭ জানুয়ারি সমগ্র বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক হলোকস্ট স্মরণ দিবস। জার্মানির স্বৈরাচারী নেতা অ্যাডলফ হিটলারের তত্ত্বাবধানে ঘটে যাওয়া নৃশংস গণহত্যায় মৃতদের স্মরণ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব, সহিংসতা দমনের মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই এই দিবসটি পালন করা হয়। ইহুদি-বিরোধিতা কিংবা অন্য যেকোনো রকমের বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তোলা এবং যে কোনো রকমের অসহিষ্ণুতা কাটিয়ে ওঠার জন্যই আন্তর্জাতিক মহলে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এই বিশেষ দিনে রাষ্ট্রসংঘ তার সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে হলোকাস্টে নিহত প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদি এবং নাৎসিদের অত্যাচারে নিহত আরও অগণিত মানুষকে স্মরণ করার অনুরোধ জানায়। শিক্ষা ও সচেতনতার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে যাতে আর এই রকম নৃশংস গণহত্যা না ঘটে সে চেষ্টা করে রাষ্ট্রসংঘ আর তাই প্রতিটি বিশ্ববাসীর কাছে আন্তর্জাতিক হলোকস্ট স্মরণ দিবস বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
২৭ জানুয়ারি দিনটি একাধারে আউশভিৎস এবং বিরখানাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মুক্তির দিন হিসেবেও বিবেচিত হয়। ২০০৫ সালের ১ নভেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে ৬০/৭ নামাঙ্কিত সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রথম আন্তর্জাতিক হলোকাস্ট দিবস পালনের কথা ঘোষিত হয়।
এই বিশেষ দিনটির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রসংঘ শুধুমাত্র নাৎসিদের গণহত্যার বিরুদ্ধাচরণ করে এমন নয় বরং পৃথিবীর সর্বত্র ঘটে চলা যেকোনো রকম গণহত্যা, নির্দিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে নৃশংসতা, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে সরব হয়। ২০০৬ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রথম নিউ ইয়র্ক সিটিতে রাষ্ট্রসংঘের সদর দপ্তরে এই দিনটি পালিত হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে এই দিনটি সমগ্র বিশ্বজুড়েই রাষ্ট্রসংঘের দপ্তরে এবং দেশগুলিতে পালিত হয়ে আসছে।