এম এ মোতালিব ভুঁইয়া :
করোনা’ প্রাদুর্ভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ফলে আসন্ন কোরবানকে ঘিরে দোয়ারাবাজার উপজেলার ছোট-বড় শতাধিক গো-খামার ও কৃষকের ঘরে মোটাতাজা করা কয়েক হাজার দেশী-বিদেশী জাতের কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে চিন্তিত গো-খামারীরা। কোরবানির পশু বিক্রি বা দাম সঠিকভাবে পাওয়া যাবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে আছেন দোয়ারাবাজারের ১২৮ টি গরু লালন-পালনকারী খামারি ।
এছাড়া উপজেলার গ্রামে-গঞ্জের হাজারো কৃষক নিজ গৃহে কয়েক হাজার দেশী বলদ,ষাড় মোটাতাজা করে থাকে। কৃষকের ছোট-মাঝারী গরু থাকলেও ক্রেতা শুণ্য ! ফলে খামারে মোটাতাজা করা গরু নিয়ে চিন্তিত গো-খামারীরা। গরু বিক্রি করতে পারবেন কি-না অথবা সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে হতাশায় ভুগছেন।
মুনাফা লাভের আশায় যে গরু তারা লালন-পালন করেছেন সঠিক দাম না পেলে অনেক খামারিকে পথে বসতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে। স্বল্প আয়ের পরিবারের যারা গরু পেলেছেন তারা আরো বিপদে পড়বেন। করোনার এমন পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোরবানির গরু ব্যবসায়ী ও লালন-পালনকারী পরিবারগুলো যাতে করে সঠিক দাম পায় সেদিকে সরকারের সাহায্য চান তারা। তারা আরো বলেন, দোয়ারাবাজারের দুটি পশুর হাট- বাংলাবাজার ও বোগলাবাজার হাটটি যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রশাসন যদি খুলে দেয় তাহলে আমাদের গরুগুলো বিক্রয় করতে পারব।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, কোরবানিতে অন্যান্য বারের চেয়ে একটু বেশি দাম পেয়ে কোরবানির পশু বিক্রি করে অধিক মুনাফার আশায় দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৩৮৯৮টি গরু, ছাগল ও ভেড়া লালন পালন করছেন ১২৮টি খামারি ও ব্যবসায়ী। কিন্তু করোনার কারণে এবার কোরবানিতে পশু বিক্রি করতে পারবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে আছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। একদিকে গরু বিক্রি আর অন্যদিকে সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তিত এরা।
বিগত সময়ে কোরবানকে ঘিরে এখানকার হাট-বাজার,গ্রামে-গঞ্জে পাইকারদের আনা-গোনায় মূখরিত হয়ে উঠে কোরবানের বেচা-কেনা। আর এ বছর ‘করোনা’ আতংকে এখনো পর্যন্ত জনপদের কোথাও কোরবানের গরুর খোঁজে কেউই আসেনি।
উপজেলার কুশিউড়া গ্রামের পশু চিকিৎসক মহিউদ্দিন বলেন, প্রতি বছর কোরবানির বাজারে দেশী গরুর চাহিদা অতুলনীয়। কোরবানের এক দেড় মাস আগ থেকেই শহরের ব্যবসায়ীরা গরুর খোঁজে বাড়ি বাড়ি আসতে শুরু করেন। যার ফলে এখানকার ঘরে ঘরে কম-বেশি দেশী বলদ, ষাঁড় দেশী পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হয়।অনেকে আবার এ খাতে ২০/৫০ লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গরু বর্গা দিয়ে রাখেন।
উপজেলার ঝুমগাও গ্রামের হাছিব উদ্দিন মেম্বার, কুশিউড়া গ্রামের আকবর আলী ও ঢালিয়া গ্রামের আব্দুল বারিক বলেন, আমরা নিজ বাড়ীতে দেশীয় পদ্ধতিতে যৎসামান্য পুঁজি বিনিয়োগ করে ৫/৭টি দেশীয় বলদ, ষাঁড় লালন-পালন করে কোরবানে বিক্রি করে থাকি। এ বছর ‘করোনা’র ছোবলে দূর্বিসহ জনজীবনে কোরবানের আনন্দে ভাটা পড়ার আশংকা রয়েছে! ফলে এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।
উপজেলার ঝুমগাও গ্রামের গরুর খামারি সিরাজ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ বছর আমার খামারে দেশি জাতের ১০টি গরু আছে। কিন্তু করোনার কারণে কোনো ক্রেতা আসছে না। আবার খাবারের দামও খুব বেশি। একটা গরু প্রস্তুত করতে
৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই অবস্থায় যদি গরু বিক্রি করতে না পারি তাহলে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আবার দোয়ারাবাজারে করোনার কারণে পশুর হাটগুলো বন্ধ রয়েছে। অনলাইনে কিভাবে গরু বিক্রি করতে হয় সেই বিষয়ে ভালো বুঝি না। তাই প্রশাসন যদি পশুর হাটগুলো খুলে দেয় তাহলে গরুগুলো বিক্রি করতে পারব। তবে যাতে ন্যায্যমূল্য পাই সেজন্য সরকারের সহায়তা কামনা করছি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো:আব্দুল কাহির বলেন, জরিপ অনুযায়ী, দোয়ারাবাজার উপজেলা গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে ৩৮৯৮টি গরু, ছাগল ও ভেড়া লালন পালন করছেন ১২৮টি খামারি ও ব্যবসায়ী। খামারিদের অতিরিক্ত দামে দানাদার খাদ্য ক্রয় করতে হয়েছে। গরু যখন বিক্রির সময় হয়েছে ঠিক সেই সময় তারা হতাশায় ভুগছেন গরুর ন্যায্য দামের চিন্তায়। এসময় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলার পশুর হাটগুলো যদি খুলে দেওয়া হয়, তাহলে খামারি ও ব্যবসায়ীরা তাদের গরুগুলো ন্যায্য দামে বিক্রি করে উপকৃত হবেন। তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের অনলাইন পেজে পশুর ছবি দিয়ে পশু বিক্রির জন্য খামারিদের সহযোগী ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।