ঢাকাসোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

পথ শিশুদের ব্যাপারে ইসলাম যা বলে

প্রতিবেদক
রফিকুল ইসলাম জসিম
২ অক্টোবর ২০২২, ৬:৪২ অপরাহ্ণ

Link Copied!

আমরা এখন যারা আছি আগামীকাল তারা থাকবো না। তাই বলে কি বিশ্ব শেষ হয়ে যাবে? না, শেষ হবে না তবে আগামীকাল থাকবে আমাদের শিশুরা। আগামী বিশ্ব গড়ে ওঠবে আজকের শিশুর হাত ধরেই। তাই ইসলাম শিশুকে স্নেহ-মমতা ও আদর-যত্ন দিয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জোর তাগিদ দিয়েছে। যাতে তারা প্রকৃত মানুষ ও সুনাগরিক হয়ে, দেশ ও দশের কল্যাণে কাজ করতে পারে।

কারণ একটা শিশুকে ভালো শিক্ষা ও পরিবেশে গড়ে তুলতে পারলেই তার দ্বারা আগামীর সুন্দর পৃথিবী নির্মাণ সম্ভব। যদি অবহেলায় অকারণে একটি শিশু ঝরে যায়; তাহলে কেমন যেন সম্ভাবনার একটি আগামী ঝরে পড়লো। তাই শিশুদের প্রাপ্য অধিকার অধিকার নিশ্চিত বাস্তবায়ন করতে হবে। এটাই ঈমানের দাবি ও দায়িত্ব, রাষ্ট্রের দাবি ও দায়িত্ব।

কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো খবরের কাগজে ও গণমাধ্যমের স্কেনে চোখ ফিরালেই দেখা যায়, আমাদের দেশে বর্তমানে শিশু নির্যাতনের বিস্ময়কর চিত্র ও দৃশ্য। দারিদ্র্যপীড়িত শিশুরা তো লেখাপড়া ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেই, কারণে অকারণে অনেক শিশুর জীবন অকালে ঝরে পড়ছে। সমাজ পরিবার ও ব্যক্তির অসচেতনতার কারণে আমাদের সমাজে শিশুরা অঙ্কুরেই হারিয়ে যাচ্ছে অশিক্ষা ও অমানবিকতার গহ্বরে।

পত্রিকার রিপোর্টে জানা যায়- জীবনের তাগিদে তারা বিত্তবানদের ঘরে কাজ করে। কাজ করতে গিয়ে তারা অনেক সময় গৃহকর্ত্রী বা অন্যদের হাতে অমানবিক পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়। এদের মধ্যে অনেকে আবার মারা যাওয়ার সংবাদও চোখে পড়ে। এই যে এখানে শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে, তারা একটি অনিরাপদ ব্যবস্থাপনায় বেড়ে উঠছে এক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা কি? ইসলাম তো সবক্ষেত্রে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও কর্তব্য পালন করে। একজন মুমিনের কি এখানে দায়িত্ব নেই? আছে অবশ্যই আছে। চলুন জেনে নেয়া যাক পথশিশু সম্পর্কে ইসলামের দর্শন।

শিশুর প্রতি কিরূপ আচরণ করতে হবে সেই কথা জানিয়ে মহানবী (সা.) আমাদের জানাচ্ছেন-

রাসূল (সা.) বলেন ‘যে ব্যক্তি শিশুকে স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান দেখায় না সে আমাদের দলভুক্ত নয়। ’ (তিরমিজি : হাদিস নং ১৯২১)
হাদিসে বর্ণিত শেষ অংশটা আবার পড়ি ‘সে আমাদের দলভুক্ত নয়’। দলভুক্ত নয় এই কথার অর্থ হলো সে ইসলাম থেকে বহিষ্কার। ওলামায়ে কেরাম বলেন, ছোটদের প্রতি দুর্ব্যবহার কবিরা গুনাহের সমপর্যায়ের। তাই আল্লাহর করুণা লাভ করতে ছোটদের প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ আবশ্যক।

হাদীসের পাতায় দেখি হযরত মহানবী রাসূল (সা.) নিজ নাতি হাসান (রা.)-কে চুমু খেলেন। ‘একবার সে সময় তার কাছে আকরা বিন হারেস উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি দশ সন্তানের জনক। কিন্তু আমি কখনও তাদের আদর করে চুমু খাইনি। তখন মহানবী রাসূল (সা.)তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না’। (বোখারি : হাদিস নং ৫৬৫১)

উপরোক্ত হাদিস ও ছোট্ট ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি শিশুর প্রতি ভালোবাসা ও স্নেহ শুধু নিজের বাচ্চাদের প্রতি সীমাবদ্ধ নয়। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে সব শিশুর প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা প্রকাশ আবশ্যক। বিশেষ করে মা-বাবার মমতা হারা শিশুদের স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ করা চাই। তাদের প্রতি সাহায্য-সহায়তার হাত বাড়ানো জরুরি। অনাথ শিশুদের প্রতি ভালোবাসার তাগিদ দিয়ে রাসুলুল্লাহ ইরশাদ বলেন ‘আমি ও অনাথ এতিম শিশুপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকবো। ’ এই বলে তিনি তার  হাতের তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলির মধ্যে সামান্য ফাঁক রাখেন। (বুখারি : হাদিস নং ৪৯৯৮) আমরা রাসূল (সা.) এর জীবনীতে দেখতে পাই- তিনি শুধু শিশুদের ভালোই বাসতেন না। বরং তাদের খোঁজখবরও নিতেন। মাঝে-মধ্যে তাদের সঙ্গে আনন্দ-রসিকতা করতেন। ঘোড়া সেজে অনেক সময় নাতি হাসান ও হোসাইন রা.কে পিঠে নিয়ে মজাও করতেন।

নবীজি রাসূল (সা.) এর চরিত্রের একটি অংশই ছিল ছোটদের আদর করা। শুধু আদর করতেন এমন নয়। অন্যদের আদেশও দিতেন।

আজকে আমাদের সমাজে চারদিকে শিশুরা নির্যাতিত। দিকে দিকে অধিকার হারা শিশুদের মিছিল ভারি। এই সব শিশু যাদের প্রতি নূন্যতম আদর ও আহলাদ দেখানো হয় না! এখানে আমাদের দায়িত্ববোধ নেই? একবার রাসূল (সা.) ঈদের নামাযে বের হয়েছেন। পথিমধ্যে এক শিশুর সঙ্গে সাক্ষাত। শিশু কেঁদে কেঁদে অভিযোগ করলো অমুক যুদ্ধে আমার বাবা আপনার সঙ্গে যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়েছে। আজকে আমার বাবা নেই, আমাকে কেউ ঈদে নিয়ে যায় না। ঈদের আনন্দ আমি পাইনা। তখন রাসূল (সা.) তাকে নিয়ে বাড়িতে চলে এলেন আম্মাজান আয়েশা (রা.) কে বললেন  তাকে গোসল করাও। নতুন কাপড় পড়াও। রাসূল (সা.) ওই ছেলেকে বলে এখন থেকে আমি তোমার পিতা আর হজরত আয়েশা তোমার আম্মা। তুমি কি খুশি না? সেই শিশু তো খুশিতেতে বাকবাকুম। এইভাবেই অনাথ অসহায় শিশুদের অধিকার বাস্তবায়ন করেছেন আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (সা.)।

হজরত আনাস (রা.) বলেন আমার ভাই আবু উমায়ের একটি বুলবুলি পাখি ছিল। সে তার প্রিয় পাখিটি নিয়ে খেলা করতো। তার খেলার সাথী পাখি সম্পর্কে রাসূলে (সা.) জানতো। একদিন সেই পাখিটি মারা গেল। তখন মহানবী (সা.) বললেন, তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে কৌতুক সুরে ‘হে আবু উমায়ের! কী করেছে তোমার নুগায়ের?’ (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৯৭১)

আবদুল্লাহ বিন জাফর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) যখন কোনো সফর শেষ করে মদীনায় ফিরতেন তখন এলাকার সকল শিশুকিশোররা তাকে স্বাগত জানাতো। তার আগমনে সকল শিশু আনন্দ ভোগ করতো। মাঝে মধ্যে তার বাহনে সামনে পিছনে কোন কোন শিশু বাচ্চাকে উঠিতে তাদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দিতেন। অথচ সেই শিশুগুলো নবীজির আপন কেউ ছিল না। আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখযোগ্য যে, মক্কা বিজয়ের দিন শিশুরা তার কাছে দৌড়ে আসলে তিনি তাদের বুকে আগলে ধরেন। এখান থেকেই আমাদের কথা বিবেচনা করা দরকার।

আজকে আমাদের চোখের সামনে শিশুরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর কোন প্রতিকার আমাদের সমাজে নেই। শিশু অধিকার বাস্তবায়নের স্লোগানের অভাব হয় না, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে মাঠে  ময়দানে মানবদরদী মানুষ পাওয়া যায় না। ইসলাম এক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশা দেয়- শিশুর প্রতি তোমার ভালোবাসা প্রদর্শন করো। এই ভালোবাসা মানেই হলো তার অধিকার নিশ্চিত করো, তার জন্য সুন্দর পরিবেশ গড়ো, তার খাদ্য বাসস্থান নিরাপদ চিকিৎসা ও শিক্ষা বাস্তবায়ন করো। যদি করতে না পারো; তুমি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। মক্কা বিজয়ের দিনের বিবরণ দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, বিজয়ীবেশে রাসূল (সা.) যখন মক্কায় প্রবেশ করেন তখন আবদুল মুত্তালিব বংশের ছোট ছোট ছেলেরা তার কাছে আসে। তিনি তাদের একজনকে নিজ বাহনের সামনে বসালেন এবং অপরজনকে পেছনে বসালেন। (বুখারি : হাদিস নং ১৭০৪)

আজকে আমরা বেশি বেশি নিজ শিশুদের প্রতি মায়া ভালোবাসা আদর আহলাদ পোষণ করি। কেউ কেউ তো আবার দুনিয়ার ব্যস্ততার কারণে নিজের শিশু সন্তানদেরও আদর আহলাদ করার সময় পায় না। তাদের ব্যাপারেও হাদিস শরীফে হুশিয়ারী রয়েছে। যা রা শিশুদের ভালোবাসে না তাদের অন্তর হয় পাষণ্ড ও রূঢ়। এই কারণে রাসূল (সা.) বলেন যদি কারো অন্তর শীতল ও কোমল করতে চাও, তাহলে এতিম বাচ্চাদের আদর করো, স্নেহ-ভালোবাসা প্রদান করো, তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও, তাদের খাবার দাও। তবেই তোমার অন্তর কোমল হবে।

তাই আসুন, সমাজের সর্বস্তরের শিশুর প্রতি স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসপূর্ণ আচরণে সচেষ্ট হই। অসময়ে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের পথ রুদ্ধ করি। মানবতার স্বার্থে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সর্বোপরি আমি ঈমানী দায়িত্ব পালনার্থে সমাজের অনাথ এতিম শিশুর প্রতি দায়িত্বশীল ইহ। এই কাজের পয়গাম নিজে বুকে ধারণ করি, অন্যের মাঝে এই পয়গাম ছড়িয়ে দিই। তাহলে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র সুন্দর হবে, হবে আগোয়ান। আল্লাহ আমাদের প্রতি সহায় হোন। আমিন।”

295 Views

আরও পড়ুন

বুটেক্স শিক্ষার্থীদের উপর ঢাকা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের হামলা, আহত অর্ধ শতাধিক

পাঠকের অনুভূতিতে ❝কলিজার আধখান❞

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে বিএনপি সন্দেহ করছে–ড. হুমায়ুন কবির

বিশ্বরূপ চন্দ্র বিশ্বাসের কবিতা:- হাসি

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণসংবর্ধনা ও কাউন্সিল শুক্রবার

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণ সমাবেশ সফল করার লক্ষে সংবাদ সম্মেলন

আইডিইবির ৫৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের র‌্যালি ও আলোচনা সভা

দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন