সাত্তার সিকদার, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
শাহ্ সাহেব কেবলা চুনতী কর্তৃক প্রবর্তিত ১৯ দিনব্যাপী ৫২তম আন্তর্জাতিক মাহফিলে সীরতুন্নবী (সা.) এর সমাপনী (১৯তম) দিনের অনুষ্ঠান ২৬ অক্টোবর (বুধবার) চট্টগ্রাম লোহাগাড়া চুনতীস্থ শাহ্ মনজিল সীরত ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অধিবেশনে ছদরে মাহফিল ছিলেন ১৯দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরতুন্নবী (সা.) মুতাওয়াল্লি কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা হাফিজুর ইসলাম আবুল কালাম আজাদ,ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাওলানা আহসান সাঈদ, লোহাগাড়া বড় হাতিয়া এশায়াতুল উলুম ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা আবু নসর হাসান।
কালামে পাক থেকে তেলাওয়াত করেন মুজাহিদুর রহমান, হাফেজ শহিদুল ইসলাম মিসবাহ, আরহাজ্ব ক্বারী মাওলানা মুহাম্মদ রবিউল্লাহ, ক্বারী মাওলানা জালাল উদ্দীন মুনিরী, ক্বারী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আব্বাসী।
না’আতে রসূল (সা.) পরিবেশন করেন মাওলানা শামসুদ্দিন, মাওলানা ইউনুস আলী, আবু দাউদ মুহাম্মদ শাহ শরীফ ইকবাল, মবরুর হোছাইন ছিদ্দিকী, হাফেজ মাওলানা আবদুল হামিদ, আবদুল্লাহ আল আকরাম আল হাদী,শাহজাদা মাওলানা ইমাম বায়হাকী (ইতমাম), মুহি উদ্দিন তানভীর,মুহাম্মদ শাহেদুল আনোয়ার সাদ, হাফেজ মুহাম্মদ বাহরুল আছরার, শোয়াইব বিন হাবিব, শায়ের আবদুস শুকুর।
দরসে কুরআন পাঠ করেন চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা কামাল উদ্দিন।
সকালের অধিবেশনে “ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ ও ঘুষের ভয়াবহ পরিণতি বর্ণনা” বিষয়ে আলোচনা করেন আমিরাবাদ সুফিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা শাহাদত হোছাইন।
বাদ যোহর অধিবেশনে “প্রকৃত আওলিয়া কিরামের পরিচয়। বানিয়ে সীরত হযরত শাহ্ সাহেব কেবলা (রহ.) এর কারামতপূর্ণ জীবনের বিভিন্ন দিক” বিষয়ে আলোচনা করেন লোহাগাড়া আধুনগর সুফি মিয়াজি পাড়ার আলহাজ্ব কাজী মাওলানা মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন ও “বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কারের বিবরণ” বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকার ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক আলহাজ্ব ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী।
বাদ আছর অধিবেশনে “ইসলাম ধর্মের প্রেষ্ঠত্বের বিবরণ” বিষয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাওলানা আ.ক.ম. আবদুল কাদের।
বাদ মাগরিব অধিবেশনে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম রাহবারে বায়তুশ শরফ আলহাজ্ব শাহ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী ও “বদরের যুদ্ধের বর্ণনা” বিষয়ে আলোচনা করেন লোহাগাড়া পদুয়া আজদ নগর শাহজাদা মাওলানা ফানাফিল্লাহ বিন আজাদ।
বাদ এশার অধিবেশনে “বিদায় হজ্বে রসূল (সা.) এর প্রদত্ত ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য” বিষয়ে আলোচনা করেন পটিয়া আল জামিয়াতুল ইসলামিয়ার মহাপরিচালক আলহাজ্ব মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা, ঢাকার আলহাজ্ব মাওলানা শহিদুল ইসলাম বারাকাতি, “শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ (সা.)” বিষয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম ওমরগণি এম.ই.এস কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান আলহাজ্ব ড. মাওলানা আ.ফ.ম. খালেদ হোসাইন, “মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এর শ্রেষ্ঠতম মু’যিজা আল কুরআন” বিষয়ে আলোচনা করেন চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ শাহে আলম, “সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় রসূলুল্লাহ (সা.) এর অবদান” বিষয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাওলানা গিয়াস উদ্দীন তালুকদার, নারায়নগঞ্জ জৈনপুরী দরবার থেকে আগত আলহাজ্ব মাওলানা এহসান উল্লাহ আব্বাসী, “ইয়ারমুকের যুদ্ধের বর্ণনা ও খতমে নবুয়্যত আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা” বিষয়ে আলোচনা করেন নরায়নগঞ্জ জৈনপুরী দরবারের পীর সাহেব আলহাজ্ব ড. মাওলানা এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী আস্ ছিদ্দিকী।
আলোচনায় ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী বলেন, আমাদের সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন ও সজাগ করতে আলেম-উলামা, মসজিদের ইমাম-খতিব, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সমাজ উন্নয়ন কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। দেশ ও জাতি হীনমন্যতা থেকে উদ্ধার করে উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে এসব অলিক ও ধরাণাপ্রসূত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের পরিবর্তন অতীব জরুরি। তিনি সংস্কৃতি চর্চার নামে যুব সমাজ বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যেসব অপসংস্কৃতির সয়লাব বয়ে যাচ্ছে তার পরিণতি সম্পর্কে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক করেন।মাওলানা শাহাদত হোছাইন বলেন, সুদের গুনাহ ব্যভিচারের চাইতেও অধিক ক্ষতিকর সুদ দেয়া ও গ্রহণ করা একটি হারাম এবং চরম ঘৃণিত কাজ। পবিত্র কোরআন এবং হাদীস শরীফে সুদ সম্পর্কে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। হাদীস শরীফে এসেছে ‘সুদের সত্তরটি স্তর রয়েছে। সবচেয়ে নিন্মটি হলো নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করা’; ‘জেনেশুনে এক দিরহাম পরিমান সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ছত্রিশ বার ব্যভিচারের চাইতেও অধিক গুনাহের কাজ। ড. মাওলানা আ. ক. ম. আবদুল কাদের বলেন,ইসলাম নামটি হল সার্বজনিন, ইসলাম হলো শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এক ও অদ্বিতীয় মহাপ্রতিপালক (আল্লাহ)-এর সমীপে সার্বিক দিক থেকে আত্মসমর্পণ করা। বলা যায়, ইসলাম সত্য ও ন্যায়বিচারের ধর্ম। ইসলাম নিছক কোনো ধর্ম নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। মানব জাতির প্রত্যেকটি সমস্যার ‘সহজ’ সমাধান ইসলামেই রয়েছে। ইসলাম মানুষকে সর্বোচ্চ চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দেয়। সে জন্য যে যতো ইসলাম পালন করে সে ততো চরিত্রবান ও ভদ্র হয়। শাহজাদা ফানাফিল্লাহ বিন আজাদ বদরের যুদ্ধের বর্ণনায় বলেন, এটা নিছক কোনো যুদ্ধ ছিল না। এটা ছিল ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। এর প্রকৃত রূপ ছিল অকল্পনীয় রকম কঠিন এবং প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ বদর, যা নানাভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই যুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা প্রথম সত্য-মিথ্যার বিভাজন স্পষ্ট করেছিলেন। ইসলামকে সম্মানিত ও কুফরি শক্তিকে অপদস্থ করেছিলেন। ইসলামের প্রধান শত্রুদেরও আল্লাহ বিনাশ করেছিলেন বদরের প্রান্তে। মানব ইতিহাসের নজিরবিহীন এই ঘটনাকে বলা হয় মুসলিম উম্মাহর সাফল্যের প্রবেশপথ, যা যুগ যুগ ধরে এই জাতিকে সত্যের পথে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে আসছে। মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা বলেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণ ছিল ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য স্থায়ী দিক নির্দেশক। মাওলানা মুহাম্মদ শাহে আলম বলেন, মানব জীবনের সব বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। যিনি তার বান্দার প্রতি ফায়সালা গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হয়। পৃথিবীতে কোরআন একমাত্র গ্রন্থ; যার ব্যাপারে আল্লাহ চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মানুষের প্রতি। কোরআন ছাড়া অদ্বিতীয় কোনো গ্রন্থের ব্যাপারে নির্ভুল বলে চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়নি। আল্লাহ বলেন, ‘এটা সেই গ্রন্থ যাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকিনদের জন্য এটা পথ নির্দেশ। ড. মাওলানা আ. ফ. ম. খালেদ হোসাইন বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় রাসূলুল্লাহ (সা:) যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তা ছিল যুগান্তকারী ও বৈপ্লবিক। মদীনায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজ কাঠামোতে যে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছিল পৃথিবীর অন্য কোনো সমাজে তার নজির পাওয়া মুশকিল। রাসূলুল্লাহ্ (স:)-এর শিক্ষা ও আদর্শের অনুসরণে খুলাফায়ে রাশেদিন যে সমাজব্যবস্থা কায়েম করেন, তা ছিল পুরাপুরি সুবিচার ও ন্যায়-ইনসাফ নির্ভর। মানুষের প্রতি ন্যায়বিচারের যে নজির ইসলামের মহান রাসূল (সা:) দুনিয়ার বুকে স্থাপন করে গেছেন, তার আলোক শিখা এখনো পৃথিবীতে অনির্বাণ।
চুনতি হাকিমিয়া অনার্স মাস্টার্স মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফারুক হোসাইন ও সিনিয়র শিক্ষক জিয়াউল করিম এর যৌথ সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য আলহাজ্ব আবু তাহের, চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ হাফিজুল হক নিজামী,মাওলানা মাহমদুল হক,ড.ওয়ালিউল্লাহ মঈন,মাহফিল মোতওয়াল্লী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাদা আব্দুল মালেক ইবনে দিনার নাজাত,মোহাম্মদ ইসমাইল মানিক,মোহাম্মদ অলি উদ্দিন,মোহাাম্মদ মাহবুবুল হক,সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ তারেক,শাহজাদা তৈয়বুল হক বেদার,মোহাম্মদ কাজী আরিফ,শাহযাদা আনোয়ার উল্লাহ সুজাত,শাহযাদা আসমাউল্লাহ ইমরাত,মোহাম্মদ নাঈম,মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান,মোহাম্মদ ফোরখান প্রমুখ।