মো.সফিকুল আলম দোলন, প্রতিনিধি,পঞ্চগড়ঃ
সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় চৈত্র্য মাসের সুপারি বাগান ছোট ছোট আকারে অনেক বৃদ্ধি হওয়ায় এখন সুপারি বাণিজ্যিক ভাবে রপ্তানি করা হচ্ছে সারা দেশজুড়ে এবং স্থানীয় কৃষকরা বাগানে লাভবান হওয়ায় এর ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জেলায় বছরের চৈত্র মাসের দিকে সুপারি পরিপূর্ণতা হলে এলাকার বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়ন হাটবাজার গুলোতে বেচাকেনা শুরু হতে থাকে আর এভাবে পঞ্চগড়ের সুপারি যাচ্ছে সারাদেশে।স¤্রাট আকবরের আমল থেকে হালখাতা বাঙ্গালীর সুপ্রাচীন কালের ঐতিহ্য পান-সুপারির ব্যবহার। সেই থেকে এর ব্যবহারের কারণে ভোজন শেষে কিংবা অতিথি আপ্যায়নে চায়ের পাশাপাশি পান-সুপারি যেন নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার।দেশে প্রায় সর্বত্রই সুপারি উৎপাদন হলেও সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সুপারি স্বাদে গুণে অন্যতম। ফলন, স্বাদে এবং দামে পার্থক্য থাকায় এর ব্যাপক চাহিদা এবং বাণিজ্যিক ভাবে রপ্তানি হচ্ছে সারা দেশজুড়ে।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে এ এলাকায় এবং পাশাপাশি পানের চাষ শুরু হয়েছে এ জেলায়।সাধারণত উঁচু জায়গা গুলোতে স্বল্প খরচে সুপারির বাগানের চাষ করা হয়। খরচ স্বল্প হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সুপারির উৎপাদন। উচু জায়গা গুলোতে সারি সারি করে এবং বসত বাড়ির চার পাশ আঙ্গিনায় গড়ে উঠেছে এসব সুপারির বাগান। আবার এলাকায় চা বাগান উঁচু হওয়ার কারণে চার পাশে সুপারির গাছ রোপণ করে প্রতি বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত মোটা অঙ্কের টাকা। চলতি মৌসুমে সুপারি প্রতি পনে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং মৌসুমের মাঝামাঝির দিকে প্রতি পন সুপারি বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের সুপারি চাষি মোজাম্মেল হক তিনি জানান, এবারে আবহওয়া ভাল থাকায় প্রতি গাছে প্রায় ২ থেকে ৩ পণ পর্যন্ত সুপারি হয় প্রতি এক পন সুপারি ৮০ পিছ। বর্তমানে বড় আকারের সুপারি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং মাঝারি আকার সুপারি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত।অন্যান্য ফসলের মত সুপারি গাছের তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না কিংবা কীটনাশক ও সেচের ব্যবহার।
তিনি আরও বলেন আমার বাগানে প্রায় ২০০ শত গাছ আছে এবাগান থেকে প্রতি বছরে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হয়। বোদা সদর ইউনিয়নের বালাভীড় গোয়াল পাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে সুপারির বাগান করছি। ৫০শতক জমিতে প্রায় ৪০০ সুপারির গাছ আছে প্রতি বছরে এক লক্ষ টাকার সুপারি বিক্রি করে থাকি এবছরে বিক্রি করবো।
সদর উপজেলার সবচেয়ে সুপারি বড় হাট টুনিরহাট ও বোদা উপজেলার বোদা নগরকুমারী হাট এখানকার ব্যবসায়ীরা বলেন, পঞ্চগড়ের সুপারি অন্য এলাকার চেয়ে আকার, স্বাদ ও রং তুলনামূলক ভাবে অনেক ভাল। এর কারণে সারা দেশজুড়ে এ এলাকার সুপারির চাহিদা ব্যাপক। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ব্যবসায়ীরা এ এলাকার বিভিন্ন হাটবাজার গুলোতে সুপারি কিনে নিয়ে যান। সুপারির মৌসুম শুরু হওয়ায় জেলার ৫ উপজেলায় জমে উঠেছে সুপারির বাজার। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হাটবাজার গুলোতে সুপারি বেচাকেনা করছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে সুপারির উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় যোগ হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। এদিকে স্থানীয় মৌসুম ব্যবসায়ীরা ভাল মানের সুপারি খরিদ করে মাটিতে পুঁতে রেখে পরবর্তিত্বে বেশি লাভে বিক্রি করে থাকেন।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মোঃ শামীম জানান, জেলা সদর, আটোয়ারী, তেঁতুলিয়া, ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মোট ৪৪৫ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। সুপারি চাষে আগ্রহী করতে চাষিদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে।