৩১ মে প্রতিবছর বিশ্ব ধূমপান বর্জন দিবস পালন করা হয়। ধূমপান বর্জন আহবান জানিয়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দিবসটি পালন করা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর দিবস পালন করা,আইন করা হলেও ধূমপায়ীদের সংখ্যা দিন দিন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বেড়েই চলছে। বিশেষ করে তরুণদের বর্তমানে ধূমপান একটি ফ্যাশন বা স্মাটনেস অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। তারুণ্য মানে ধুমপান,তারুণ্য মানে সিগারেট। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র অঙ্গনসহ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোও নিরাপদ ধূমপান চর্চার কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। তাই দেশকে ধূমপান মুক্ত করার জন্য দেশের তরুণ সমাজকেই আগে ধূমপান মুক্ত করতে হবে। অথচ এ তরুণ সমাজ আজ সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যেই সুখ খোঁজে। তাই তারুণ্যের শপথ হোক ধূমপান মুক্ত দেশ গড়ার। এটাই হোক বিশ্ব ধূমপান বর্জন দিবসের তরুণ সমাজের অঙ্গীকার।
ধূমপান এক ধরনের নেশা। সাধারণভাবে ধূমপানকে সামাজিক অপরাধ হিসাবে দেখা হয় না। কিন্তু সকল মাদকাসক্তদের প্রাথমিক স্তর হচ্ছে ধূমপান। ধূমপানের মাধ্যেমেই মাদক জীবনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধিরে ধিরে তা মাদকাসক্তের দিকে নিয়ে যায় যুব সমাজকে। ধূমপান থেকে মাদক,এক মাদক অন্য মাদক গ্রহন,এভাবে মাদকের ভয়ংকর কবলে পড়ে জীবন ও যৌবন উভয়ই অকালেই বিসর্জন দিচ্ছে দেশের সম্ভবনাময়ী যুব সমাজ এবং ধ্বংস করছে দেশ ও জাতিকে। এ মাদকাসক্তই বর্তমান বিশ্বে সমগ্র মানব জাতি সভ্যতার জন্য অত্যন্ত বড় হুমকি। এটি একটি অভ্যাসগত রোগ এবং তা ধিরে ধিরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। আর এ মাদকাসক্তই বর্তমানে পৃথিবী বিধ্বংসী ভয়ংকর রোগ এইডস উৎপত্তির অন্যতম প্রধান কারণে পরিনত হয়েছে। তাই ধূমপানকে বিষপানের চেয়েও মারাত্মক বলা হয়েছে। কারণ বিষপানে জীবনের তাৎক্ষনিক মৃত্যু ঘটে,কিন্তু ধূমপানে মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরে। ধূমপান একটি বাজে অভ্যাস,অর্থ অপচয়,শরীরের ক্ষতি ও পরিচ্ছন্নতা পরিপন্থী কাজ। ধূমপানের ক্ষতি কর দিক উপলব্ধি করে এক প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী বলেছেন, ‘‘উৎরহশ ঢ়ড়রংড়হ নঁঃ ষবধাব ংসড়শরহম’’
* বাংলাদেশে ধূমপান ও ধূমপায়ীদের পরিসংখ্যান ঃ-
বাংলাদেশে ২০-৩৪ বছর বয়সী ধূমপায়ীর সংখ্যা শতকরা ৮১ জন। যার অধিকাংশই শিক্ষার্থী। ধূমপানের মূল উপকরণ হচ্ছে তামাক পাতা। দেশে প্রতি বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের জাষ হয়। মোট চাষযোগ্য জমির ০.৩৩% জমি তামাক চাষে ব্যবহৃত হয়। বছরে ৪০ হাজার মেট্টিকটন তামাক উৎপাদিত হয়। আর ৬ হাজার ৭শ ১২ মেট্টিকটন তামাক পাতা আমদানি এবং ৪ হাজার ৫শ ৫৪ মেট্টিকটন তামাক পাতা রফতানি হয়। বছরে ২০ হাজার ৩শ মিলিয়ন সিগারেট এবং আনুমানিক ১লাখ ৮ হাজার মিলিয়ন বিড়ি উৎপাদিত হয়। দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক জসগোষ্ঠীর মধ্যে ৩৬.৮% কোন না কোনভাবে তামাক ব্যবহার করছেন। আর ৪১% পুরুষ ও ১.৮% মহিলা ধূমপান করছেন। দেশে বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ধূমপায়ীদের মধ্যে সিগারেটের তুলনায় বিড়ির ব্যবহার অনেক বেশি। বিড়ি সস্তা হওয়ায় এ পণ্য যে কোন মানুষের ক্রয় সীমার মধ্যে রয়েছে (দৈনিক নয়া দিগন্ত) । ১২ থেকে ২৪ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীদের মধ্যে ১.৮% সিগারেট পান এবং ৪.০% অন্যান্য তামাক ব্যবহার করছে। এছাড়া রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি,ও বান্দরবানে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪০ বছরের বেশি বয়স্ক নারী পুরুষদের ৯০ ভাগই তামাক পাতা ও তাগজ মোড়ানো পাতা সিগারেট পানে অভ্যস্ত (দৈনিক কর্ণফুলী)। দেশে মোট ধূমপায়ীর সংখ্যার মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংখ্যায় বেশি। জ্ঞান বিজ্ঞান ও মানুষ তৈরির কারখানা বিশ্ববিদ্যালয় যেন আজ ধূমপান ও আড্ডাখানায় পরিনত হয়েছে। দৈনিক পত্রিকায় এক রির্পোটে হতে জানা যায়,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বানের মতো ঢুকছে সিগারেট। এখানে শুধু ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যেবাকো (বিডি) লিমিেিটড প্রতিদিন ৬৫ হাজার ২৫০ টাকার (২৯ হাজার ৭৫০টি) সিগারেট বিক্রি করে। সপ্তায় তিন দিন সিগারেট বিক্রি করে এ কোম্পানী। আকিজ গ্রুপ বিক্রি করে আট হাজার ৮৬৬ টাকার সিগারেট। সে হিসাবে ক্যাম্পাসে প্রতিদিন ৭৩ হাজার ৮৬৬ টাকার সিগারেট বিক্রি হয়। সিগারেটের বড় গ্রাহক ছাত্র,কর্মচারী ও শিক্ষকেরা। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের মধ্যে সিগারেট খাওয়ার প্রবনতা একটু বেশি। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়,ক্যাম্পাাসে ১১০ টি দোকানে সিগারেট বিক্রি করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী আছে প্রায় ১৭ হাজার ৯২৮ জন। এর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১৩ হাজার ২৫৪ জন। এ ছাড়া শিক্ষকের সংখ্যা ৬৭৬,কর্মকর্তা ২৯৬,তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ৪৭৮,চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ১ হাজার ১৮০। মোট শিক্ষক কর্মচারীর চার ভাগের এক ভাগ নারী। ছাত্রদের একটি বড় অংশ ধূমপান করে। শিক্ষকদের অনেকেও ধূমপান করে,তবে তারা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে করে না। বেশ কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো লিমিটেডের সিগারেট। এই কোম্পানীর সিগারেটের মধ্যে রয়েছে বেনসন,গোল্ডলিফ,পালমাল,ক্যাপাস্টার,সিজর স্টার ফিলটার,ভাই সরয় ব্র্যান্ডের সিগারেট। সিগারেটের মূল ক্রেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র,শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ১০০ জন ছাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁরা ধূমপান করেন কিনা,করলে কয়টা করে,এর মধ্যে ৭০ জন ছাত্রই বলেছেন তারা নিয়মিত ধূমপান করেন। প্রতিদিন তারা ক্যাম্পাসে ৮-১০ টা সিগারেট খান। বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র কাউসার আলম জানান, প্রতিদিন তিনি ২০-২৪ টা গোল্ডলিফ খান। একই অনুষদের আরেক ছাত্র ফারুক প্রতিদিন ১০-১২ টা বেনসন সিগারেট খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রদের মধ্যে ধূমপান করার প্রবনতা একটু বেশি। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইউনুস জানান.ক্যাম্পাসে এসে সিগারেট খেতে ভালো লাগে,নিজেকে একটু বড় মনে হয়। নেশার শুরু সিগারেট দিয়ে। দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অবস্থা হলে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর কি অবস্থা হতে পারে? উচ্চ শিক্ষার শুরুতেই যদি এরা বিষাক্ত ধূমপানে এভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে লেখাপড়া শেষ করতে করতে এরা বড় মাদকাসক্ততে পরিনত হবে। এদের কাছ থেকে দেশ জাতি কি আশা করতে পারে? সিগারেটের ধোঁয়ায় এরা সব সম্ভবনা শেষ করে দিচ্ছে।
* ধূমপানের উপকরণ ঃ- ধূমপানের মূল উপকরণ অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর মূল উপাদান হলো তামাক ও গাঁজা পাতা। স্টককৃত তামাক পাতা শুকিয়ে কুচি কুচি করে কেটে এর সাথে বারবা মোলাগুড মিশিয়ে এক ধরনের মন্ড তৈরি করা হয়। এ তামাক গুঁড়া অন্যান্য উপাদানের সংমিশ্রনে কাগজে মুড়িয়ে বিড়ি বা সিগারেট তৈরি করা হয়। এ সিগারেটে আগুন লাগিয়ে তার ধোঁয়া পান করা হয়। এটাই হলো ধূমপান। ধূমপান মাদকতা সৃষ্টি না হলেও এটা দেহ মনের নানা ধরনের এটা দেহ মনের নানা ধরনের বিরুপ প্রতিক্রিয়া সুষ্টি করে।
* ধূমপানের অপকারিতা ঃ- ধূমপান শুধু শারিরীক ও মানসিক ক্ষতিই করে না,বরং এটা দেশ ও জাতিকে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
# মৃত্যু ঃ- মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা “মানস’’ এক পরিসংখ্যানে বলা হয়-প্রতি সাড়ে ৬ সেকেন্ডে একজন করে মাদকাসক্ত বা ধূমপায়ীর মৃত্যু হয়,ঘন্টায় এ সংখ্যা ৪৫০ জন।
অথীনীতি সমিতির এক গবেষনায় বলা হয়-বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ১৬ ভাগের জন্য ধূমপানই দায়ী। জাতিসংঘের মাদকবিষয়ক এক রির্পোটে বলা হয়-ধূমপানের কারনে প্রতি বছর বিশ্বে ৫০ লাখ মানুষ মারা যায়। এছাড়া আগামী ২০৩০ সাল নাগাত পৃথিবীতে তামাকজনিত রোগে ১কোটি লোক মারা যাবে। যার ৭০% ই আমাদের মতো দেশের লোক।
@ প্রতিবছর ধূমপানের কারনে বাংলাদেশে ৫৭ হাজার লোকের অকাল মৃত্যু হয় (দৈনিক সংগ্রাম)।
# রোগাত্রান্ত/পঙ্গুত্ববরন ঃ- জাতিসংঘের মাদক বিষয়ক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে-প্রতি বছর দেশে ১২ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারের কারনে আটটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এবং ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরন করেন। তামাকে ৪০০ এর বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আছে, যার মধ্যে ৪৩ টি শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। মানসের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়-একটি সিগারেটে ক্যান্সার উৎপাদক ২৮ টি উপাদান রয়েছে। পরিসংখ্যানে আরো বলা হয়েছে-ধূমপান থেকে যক্ষা,হাঁপানি,ক্যান্সার,বন্ধ্যা,যৌন শক্তির স্বল্পতা সহ বিভিন্ন রোগ হয়। এছাড়া ধূমপানে হৃদরোগের ঝুঁকি দশগুন বেড়ে যায়। ধূমপানকে বলা হয় বিষ পান। কারন বিষপানে অত্যল্প সময়ে জীবনের অবসান ঘটে আর ধূমপানে ধিরে ধিরে মানবদেহে বিষক্রিয়া করে জীবনের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। তাছাড়া ধূমপান সুস্থ সবল দেহের জন্য সব সময় ক্ষতিকর।
# অর্থনৈতিক ক্ষতি ঃ- অর্থনীতি সমিতির এক রির্পোটে বলা হয়-তামাকজনিত ৮ টি রোগে দেশে প্রতি বছর ব্যয় হয় ১১ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রত্যক্ষ ব্যয় ৫ হাজার কোটি টাকা। পরোক্ষ ব্যয় (অকাল মৃত্যু,পঙ্গুত্বজনিত) ৬ হাজার কোটি টাকা। গবেষনা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয় ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর এক রির্পোটে বলা হয়-তামাক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বছরে নীট ক্ষতি হচ্ছে দুই হাজার ছয়শ কোটি টাকা। অথচ তামাক খাতে বছরে আয় হয় দুই হাজার চারশ কোটি টাকা। জাতিসংঘের তামাক বিষয়ক রির্পোটে বলা হয়-তামাক চাষের কারনে সারা বিশ্বে ২ লাখ হেক্টর বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশে ৩৩ হেক্টর চাষযোগ্য জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে,এবং পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন বনভূমি উজাড় করে তামাক চাষ করা হচ্ছে। যা দেশের অর্থনীতিকে রুগ্ন করে দিচ্ছে।
# মানসিক ক্ষতি ঃ- ধূমপান সুস্থ মানসিকতাকে নষ্ট করে দেয়। ধূমপানের ফলে যে শারীরিক ক্ষতি হয়,তা ক্রমান্বয়ে সুস্থ মানসিকতাকে ও নষ্ট করে দেয়। তাছাড়া ক্রমাগত নেশাই ধিরে ধিরে মানুষকে মাদকাসক্তের দিকে নিয়ে যায়। তাই ধূমপানকে ভয়ংকর মাদক বলা হয়ে থাকে-‘‘ ংসড়শরহম রং ঃযব ভরৎংঃ ংঃবঢ় ড়ভ রহঃড়ীরপধহঃ’’। মানসের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে ধূমপায়ীরা শতকরা ৪২ জন কোন না কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। ধূমপায়ীরা সাধারণত বিভিন্ন অনাচার পাপচারে জড়িয়ে পড়ে। বড়দের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ কমে যায়। এক গবেষনায় দেখা যায়-সমবয়স্ক ও সমপর্যায়ে দূমপায়ীদের মধ্যে আচরণের অস্বাভিকতা অনেক বেশি। ধূমপায়ীরা সহজে ধার কর্জ এমনকি অন্যের কাছে হাত পাততেও দ্বিধাবোধ করে না ( প্রথম আলো)।
# আর্থিক অপচয় ঃ- আমাদের মতো দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য ধূমপান একটি অমানবিক আর্থিক অপচয়। যে দেশের মানুষ দু’মুঠো অন্নের জন্য হাহাকার করে, বিবস্ত্র অবস্থায় পথে ঘাটে ঘোরে বেড়ায়। বসত বাড়ির অভাবে ফুটপাতে ঘুমায়। সে দেশে ধূমপানের ক্ষতিকর খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় সত্যিই এক বিস্ময়কর ব্যাপার। ধূমপান কেন্দ্রিক দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্প কারখানা,যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক পরিশ্রম করছে দিন রাত। এসব তৎপরতা ও পরিশ্রম মূল্যহীন। শুধু মূল্যহীনই নয়,বরং দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ধরনের শ্রম ও সাধনা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যয়িত হলে তা সত্যিই দেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্যেন্নয়নের কাজে আসত। ধূমপান ব্যক্তি সমাজ ও জাতির জন্যও এক জীবন্ত অভিশাপ। এ অভিশাপে সমগ্র সমাজকে গ্রাস করেছে। এটি আমাদের সমাজকে দুষিত করছে। তাই মুক্ত করতে হবে সমাজকে,দেশকে,জাতিকে এ অভিশাপ থেকে আর তা একমাত্র সম্ভব তারুণ্যের শক্তির মাধ্যমে।
# তারুণ্যের শপথ হোক ধূমপান থাকার ঃ- হে তরুণ,হে যুব সমাজ! তোমরাই দেশ ও জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিক। তোমাদের নিয়েই জাতি সোনার বাংলা,ক্ষুধা ও দারিদ্রতা মুক্ত স্বনির্ভর বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখে। তোমরা যদি সেই স্বপ্ন পূরন করার পরিবর্তে সিগারেটের ধোঁয়ায় ,তামাকের বিষাক্ত ছোবলে তারুণ্যকে শেষ করে দাও,তাহলে দেশ ও জাতি কাকে নিয়ে স্বপ্নের দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখবে? তাই ভয়ংকর সর্বনাশা এ সিগারেটকে ,ধূমপানকে,তামাককে ছেড়ে দিয়ে দেশ ও জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিকে হও,তারুণ্যের শপথ নাও শুধু নিজে নয়,সমাজ ও দেশকে ধূমপানমুক্ত করার। তাই এসো হে যুব সমাজ তারুণ্রের প্রেরনায় শপথ নিই
ধূমপান করব না
অকালে মরব না
এটাই হোক বিশ্ব ধূমপান বর্জন দিবসে যুব সমাজের অঙ্গীকার।
# ধূমপান প্রতিরোধে করনীয় ঃ-
ধূমপান এক ধরনের নেশা। এতে একবার অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তা বর্জন করা বেশ কঠিন। ধূমপান বর্জন করার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন যুব সমাজের প্রবল ইচ্ছাশক্তি। প্রবল ইচ্ছা শক্তির জোরে এ বাজে অভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত করা সম্ভব। ধূমপান প্রতিরোধের জন্য নিন্মের পদক্ষেপ সমূহ গ্রহন করা যেতে পারে।
১. ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সমূহ আগে সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। হৃদয় মন দিয়ে যদি ক্ষতি সমূহ বুঝতে পারা যায়, তাহলে নিজেদের স্বাস্থ্যকে রক্ষায়, পরিবেশকে রক্ষার জন্য ধূমপান বর্জন সহজ হবে।
২. রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সমূহ ব্যাপক ভিত্তিতে মিডিয়ায় তুলে ধরতে হবে।
৩. তামাক উৎপাদন ও আমদানির উপর কঠোরতা আরোপ করতে পারে। ক্ষতিকর সকল তামাক নিষিদ্ধ করতে হবে।
৪. সকল পর্যায়ে সামাজিক ভাবে এন্টি এসমোকিন মুভমেন্ট গড়ে তুলতে হবে।
৫. পরিবারের অভিভাবক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অত্যন্ত সচেতনতার সাথে এ ব্যাপারে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাতে পরবর্তী বংশ ধরদের মাঝে এ অভ্যাস সৃষ্টি হতে না পারে।
৬. দেশের সকল সমাজকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শরীরের জন্য,দেশের জন্য ক্ষতিকর এ সিগারেট বিক্রি না করার। ব্যবসায়ীদের এরকম একটি সিদ্ধান্তই পারে দেশের ধূমপানকে অনেকাংশে কমিয়ে দিতে।
৭. ধূমপানকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করতে হবে। ব্যাপক ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। দেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধূমপান প্রতিরোধ কমিটি করে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এবং সমাজে ব্যাপক ভিত্তিতে ধর্মীয় প্রভাব সৃষ্টি করে ধূমপান বন্ধ করতে হবে।
৮.শুধু আইন পাশ করে কাজ শেষ করলে হবে না,সে আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরী।
৯. সর্বোপরি ধূমপানের শারীরিক সামাজিক নৈতিক ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
১০.সকল প্রচার মাধ্যমে তামাকজাত পন্যের প্রচার প্রচারনা ও বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করতে হবে।
ধূমপান সমাজের জন্য ক্ষতিকারক একটি বাজে অভ্যাস। ধূমপানে শরীরে কোন লাভ নেই,ক্ষতি ছাড়া। ধূমপায়ীদের সামাজিক ভাবে বয়কট করতে হবে। ধূমপায়ীদের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক না করা, তাহলেই ধূমপায়ীরা আস্তে আস্তে ধূমপান ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। আসুন নিজের স্বার্থে,দেশের স্বার্থে,অর্থনীতির স্বার্থে,আগামী প্রজন্মের স্বার্থে ধূমপানকে না বলি। শপথ বদ্ধ হয় ধূমপানমুক্ত দেশ গড়ার।
লেখক: ছানাউল্লাহ
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইউটিউভার
ই-মেইল: Sanaullahcoxs62@gmail.com