অলিউর রহমান,স্টাফ রিপোর্টার ছাতকঃ
সুনামগঞ্জের ছাতকে সরকারি জায়গা থেকে বৃক্ষ নিধনে সংঘাতের আশঙ্কা দু’গ্রামবাসীর । এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হলেও রহস্যজনক কারণে প্রয়োজনীয় কার্যকরি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে বৃক্ষ নিধনকারিরা শাস্তি থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। আর এ ঘটনা নিয়ে দু’গ্রামের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে যে কোন সময় সংঘাতের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের পীরপুর বাজার সংলগ্ন পাটিয়া নদীর দক্ষিণ পার দিয়ে খাগামুড়া হয়ে দোলারবাজার পর্যন্ত একটি রাস্তা রয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে গোয়াশপুর গ্রামবাসীসহ এলাকার লোকজন চলাচল করে থাকেন। সরকারি এ রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় অসংখ্য বৃক্ষ রয়েছে। এ বৃক্ষের নীচে ছাঁয়া পেতে পথচারি, ময়না কিত্তার কৃষক-শ্রমিক, গরু রাখালরা গরমের সময় আরামের জন্য অবস্থান নিয়ে থাকে। খাগামুড়া গ্রামের আবদুল মছব্বির কালা মিয়ার বাড়ি থেকে শওকতুল ইসলাম সোনাধনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে বরই, রেন্টি, ছাম্বুল, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০টি বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে। ফলে এখানকার পরিবেশ পড়েছে হুমকির মুখে। এ ঘটনায় খাগামুড়া গ্রামের আসমান গনী, আজাদুল ইসলাম, আবদুন নুর, আবদুল গণি, আবদুল মতিন, হেলাল, মতি মিয়া, সমছু মিয়াদের নাম উল্লেখ করে ৭ নভেম্বর গোয়াশপুর গ্রামবাসীর পক্ষে ফজলুল হকসহ ৪৪জন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়ের করেন। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ফরেষ্ট অফিসার বরাবরে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়। গোয়াশপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার নজরুল হক, আবদুল হান্নান, ইছাক আলী, আবদুস ছোবহান, আছদ্দর আলী, আফরোজ আলী, হুসন আলী, ময়নুল হক, আনোয়ার, আবদুস সালাম, তাজুল, আবুল কালাম, আশিক আলী, আল আমীন, ছালেহ আহমদ, রাসেলরা অভিযোগ করে বলেন, ১৭ অক্টোবর রাতের আধারে ইউপি সদস্য আনোয়ার আলীর নেতৃত্বে সরকারি রাস্তা থেকে বরইসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৭/৮টি গাছ নিধন করে আত্মসাত করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, প্রায় দু’বছর আগে পাটিয়া নদী নিয়ে দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সৃষ্ট ঘটনা নিস্পত্তি করেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমানসহ এলাকার গণ্যমান্যরা। তাদের দেয়া সিদ্ধান্তক্রমে পাটিয়া নদীর গভীর অংশকে দু’টি ভাগে বিভক্ত করে দেয়া হয় মাছ আহরনের জন্য। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত খাগামুড়া গ্রামবাসী এখন মানছেন না। তারা নদীর দু’অংশকেই জোর পূর্বক দখল নিতে চায়। এ ঘটনায় উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাপশ শীল ও উপজেলা ফরেষ্ট অফিসের বিট অফিসার তিতীষ চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনোয়ার আলী বলেন, তিনি ৩নং ওয়ার্ডের সকল নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কোন পক্ষের হয়ে সরকারি গাছ কর্তন এমন অন্যায় কাজ করেন নি। কে বা কারা গাছগুলো কর্তন করেছে তিনি দেখেন নি। বরং দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সৃষ্ট ঘটনা নিস্পত্তির জন্য এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গেছেন। তিনি আরো বলেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নদীতে মাছ আহরনে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন এবং মাছ থাকার জন্য নদীতে ফেলা কাটা তুলে ফেলার নির্দেশ দিলে উপস্থিত লোকজন সবগুলো কাটা নিয়ে যান। অভিযুক্ত আসমান গণি বলেন ৮বছর আগে তিনি দুবাই থেকে এসেছেন। এর মধ্যে বাড়িতে একটি গাছও লাগাতে পারেন নি কাটাতো দূরের কথা। অভিযুক্ত ফয়জুন নূর বলেন, পিতার রেখে যাওয়া ভিটে ছাড়া ময়না কিত্তায় তার কোন জায়গা জমি নেই। পীরপুর বাজার সংলগ্ন পাটিয়া নদীর দক্ষিনে ৭/৮টি গাছ গ্রামের লোকজন বিক্রি করে গ্রামের মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়েছে। রইছ আলী, আনোয়ার হোসেন রনি, মখলিছুর রহমানরা বলেন, দু’গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধের বিষয়টি নিম্পত্তির জন্য তারা ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চেয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাপশ শীল বলেন, নদী দখলের অভিযোগের পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় নির্দেশ দিয়ে নদীতে ফেলা কাটাগুলো তুলে সরিয়ে ফেলার পর এগুলো স্থানীয়রা নিয়ে গেছেন। দু’গ্রামবাসীর মধ্যে পাল্টা পাল্টি অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারি জায়গার উপর বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় গোয়াশপুর-খাাগামুড়া দু’গ্রামের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে যে কোন সময় এলাকায় সংঘাতের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা ।