ঢাকাশুক্রবার , ২৯ মার্চ ২০২৪
  1. সর্বশেষ

আর রাগ করবো না!

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
৮ এপ্রিল ২০২১, ৯:২০ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

এম মিজানুর রহমান

রাগ নেই এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া বিরল।মানুষ মননে রাগ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা কতটুকু! অবশ্যই একটি ভারসাম্যপূর্ণ স্থানে অবস্থান করতে হবে।রাগের বশবর্তী হয়ে চরম উত্তেজিত হওয়া মানুষের সংখ্যা যেমন ঢের; তেমনি আবার এই জীবন বিনাশী রাগকে সংবরণ করার মানুষও কম নয়।

ভালো করে জানতে হবে রাগ কাকে বলে?এককথায় বলা যায় – তীব্র অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশকেই রাগ বা ক্রোধ বলা হয়।
বিভিন্ন কারণে আমরা রেগে যাই।যেমন- কোন কারণে কারো প্রতি ক্ষিপ্ততার সৃষ্টি হলে,কেউ মনে কষ্ট দিলে,কারো কথায় হতাশার উদ্ভব ঘটলে কিংবা দুই থেকে তিনবার কাউকে কল দিয়ে না পেলেই চরম উত্তেজিত হয়ে যাই।
এই রাগের ফলে আমাদের শারীরিক অঙ্গভঙ্গি কেমন হয়! বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন যে, ক্রুদ্ধ হলে মানুষের ভ্রু কুঁচকে যায়। নাসারন্ধ্র প্রসারিত হয়।চোয়ালের পুরুত্ব বেড়ে যায়।হৃৎস্পন্দনের বৃদ্ধি ঘটে।শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হয়ে যায়। ঘামতে শুরু করে এবং পরিপাক ক্রিয়া ধীরগতিতে চলতে থাকে।

এছাড়া আমাদের মুখাবয়বে আসে ভিন্ন অদ্ভুত পরিবর্তন। যা হঠাৎ কারো চোখে পড়লে নিশ্চিত ভয়ে চুপসে উঠবে।আর ছোট শিশু হলে হু হু করে কেঁদে উঠবে। অতিরিক্ত রাগের ফলে মানুষ কিলবিল করতে থাকে।হাতের সামনে যা পাবে তা নিমিষেই করে দিবে নিঃশেষ। মুখ থেকে বের হতে থাকে অযাচিত শব্দসমষ্টি। চরম উত্তেজিত হয়ে চোখের সামনে থাকা স্বীয়সন্তান কিংবা অন্য কাউকে বিনাদোষে প্রহার করতেও দ্বিধাবোধ করে না।এমনকি রাগের আধিক্যে প্রিয়তমা স্ত্রীকে তালাকও পর্যন্ত দিয়ে দেয়।সবমিলিয়ে মনে হয় সে তখন সুন্দরবন থেকে পালিয়ে আসা কোন হিংস্র প্রাণী।যে বহুদিন ধরে কোন আহার পাচ্ছে না।
কিছুদিন আগেই তো দেখলাম এক মজার ঘটনা।তারা নবদম্পতি। কি যেন একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়ার সৃষ্টিপাত হয়।এক পর্যায়ে রাগে ফেটে পড়ে স্বামী দা কুড়াল দিয়ে সদ্য বানানো বাড়িটি কুপিয়ে মুহুর্তেই লন্ডভন্ড করে দিল।পরে কি আর! দেখলাম তারা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অন্যের গৃহে থাকতে বাধ্য হয়।এই হলো রাগের বশবর্তী হয়ে মানুষ যা করে।

অতিরিক্ত রাগের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়। হার্ট-অ্যাটার্ক কিংবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে।
তবে ক্রোধ যখন কাউকে সাহসের সাথে একটি অবিচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রেরণা দেয় অথবা গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে ন্যায় বিচারের পটভূমি তৈরি করে তখন সেই রাগকে অবশ্যই ভালো বলতে হবে।
জীবন বিধ্বংসী এই রাগ দমন বা প্রতিহত করার উপায় কী!

একবার একটি ছেলে তার এক পরিচিত ভদ্রলোককে বললো- “আমার তো প্রচন্ড রাগ।এই রাগের কারণে ( আমার অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।) আমি এর প্রতিকার চাই” কিছুক্ষণ ভেবে ভদ্রলোকটি বললো- “তুমি বাজার থেকে ১ কেজি পেরেক নিয়ে এসো। দিনে যতবার তোমার রাগ উঠবে ততবারই একটি করে পেরেক তোমার ঘরের পাশ্ববর্তী কোন গাছে গেঁথে দিবে।”
এরপর ছেলেটি কথানুযায়ী পেরেক নিয়ে আসলো।প্রথমদিন সে যতবার রেগেছে ততবার একটি করে পেরেক গাছের মধ্যে গেঁথেছে। দ্বিতীয় দিন যতবার রাগলো ততবারই একই কাজ করলো।তবে প্রথমদিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে পেরেক কম গাঁথতে হলো।তার মনে একটি অনুশোচনার কাজ করলো।তৃতীয় দিনে আরো কমতে লাগলো।একসময় তার আর পেরেক গাঁথতে হলো না।অর্থাৎ তার রাগ কমে গেছে বিধায় আর পেরেক গাঁথতে হলো না।কিন্তু এর কারণ( কি?) কারণ হলো- তার মনে এ বোধটি জাগ্রত হয়েছে যে,রাগ জিনিসটি আসলেও ভালো না।তাছাড়া প্রতিবার রাগে গাছের মধ্যে একটি করে পেরেক গাঁথাটাও একটা কষ্টের কাজ।সে আরো ভাবলো- “আমি যদি রাগ না করি তাহলে তো আর আমাকে পেরেক গাঁথতে হয় না”!একসময় তার মনে প্রবল অনুশোচনার উদ্রেক হয়েছে।ফলে ধীরেধীরে রাগও কমে গেছে।রাগ সংবরণ করার ক্ষেত্রে চমৎকার এই ফর্মুলাটা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- [আর যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়।বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকেই অধিক ভালোবাসেন।]
এবার আমরা হাদিসের দিকে দৃষ্টিপাত করি-
একবার দুই ব্যক্তি রাসুল সা. এর সম্মুখে ঝগড়াবিবাদ করছিল।তাদের একজনের রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারানোর উপক্রম হয়েছিল। এ অবস্থা দেখে রাসুল সা. বললেন- [আমি এমন একটি বাক্য জানি, যদি কেউ এ বাক্যটি উচ্চারণ করে তাহলে তার উত্তেজনা প্রশমিত হবে।আর বাক্যটি হলো- আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রাজিম।]
[যখন তোমাদের কারো রাগ আসে, তখন সে দাঁড়িয়ে থাকলে যেন বসে পড়ে।তাতেও যদি রাগ দমন না হয়( তাহলে সে যেন বসে পড়ে)।]( তিরমিজি)
আবু দাউদ শরীফের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস।জানা যাক-
রাসুল সা. বলেন- [রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। শয়তান আগুনের তৈরি।আগুন নেভাতে লাগাতে পানি।তাই তোমরা যখন রেগে যাবে তখন অযু করে নিবে।]
প্রিয়নবী সা. কতই না চমৎকার ফর্মুলা আমাদেরকে দিয়েছেন!সুবহানাল্লাহ।
রাগ পারে আমাদের ফুলের মতো সুন্দর জীবনকে নিমিষেই নিঃশেষ করে দিতে।ব্যক্তি,পারিবারিক,সামাজিক,রাষ্ট্রীয় জীবনে বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে রাগ রাখে অন্যতম ভূমিকা।

এই রাগের বশবর্তী হয়ে কত যে মানুষ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে তার যেন ইয়ত্তা নেই।ব্যক্তি রাগ করার পরে শুধুই আফসোস করে।কিন্তু তখন আর কিছু করার অবকাশ থাকে না।
“রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।” এ কথাটি অন্তরে সর্বদা জাগরুক থাকা চাই।সত্তিকারার্থেই রেগে যাওয়া মানেই হেরে যাওয়া।যা রাগান্বিত ব্যক্তির রাগ চলে যাওয়ার পরে বোধগম্য হয়।
একজন মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানুষের অন্যতম আদর্শ থাকবে সে কখনোও রাগবে না।আর রাগলেও তড়িৎ সংবরণ করে নিবে।
যদিওবা রাগ দমন করা খুবই কষ্টের; তথাপি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালালে অবশ্যই সফলতার হাতছানি আসবেই।
তাই আজ থেকেই আমাদের এ শ্লোগান হোক-
“রাগবো না আর এখন থেকে
মিষ্টি কথা বলবো,
যতই বাঁধা আসুক তেড়ে
সুস্থ পথেই চলবো।”

লেখক:
সাহিত্য সম্পাদক,হিল সোসাইটি, রাঙ্গামাটি।

77 Views

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ নিহতের ঘটনার বিচার চেয়েছে নতুনধারা

চমেক হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে ওঝার কাছে, সাপে কাটা যুবক

নওগাঁর পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী সেবা প্রদানের জন্য এ্যামবুলেন্স প্রদান

র‍্যাবের ২৪ ঘন্টা অভিযানে ধর্ষন মামলার আসামী সেলিম গ্রেফতার

নকলায় পৃথক ঘটনায় দুই জনের মৃত্য

কক্সবাজারের রামুতে ছুরিকাঘাতে নিহত কৃষকলীগ নেতা নাজেম হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটক ২

গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স’র কর্ণধার নূর মোহাম্মদ গ্রেপ্তার

চকরিয়ার নবাগত সহকারী কমিশনার ভূমি এরফান উদ্দিন

চকরিয়া প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন
সাংবাদিকরাই পারে মানুষের আশার প্রতিফলন করতে- সাংসদ সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম 

“বদর দিবস” এর ইতিহাস, শিক্ষা ও তাৎপর্য

মাইশা আক্তার নিশিলার কবিতা “আসক্ত মেঘকণ্যা”

বোয়ালখালীর ৬টি দুস্থ পরিবারে এম এ হাশেম ফাউন্ডেশনের ঘর হস্তান্তর