রংপুর সিটি করপোরেশনে (রসিক) সাড়া ফেলেছে করোনার ভ্রাম্যমাণ গণটিকা কার্যক্রম। ছুটির দিন শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিনই দেখা মিলছে রসিকের স্বাস্থ্যকর্মীদের। মোটরসাইকেল নিয়ে পাড়া-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা। টিকাদানের পাশাপাশি হাটবাজার থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় ছড়াচ্ছেন স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা।
রসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরাতন পনেরোটি ওয়ার্ডে করোনার ভ্রাম্যমাণ গণটিকা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকাদানের ব্যবস্থা থাকায় সেখানে আপাতত এই কার্যক্রম চালু করা হয়নি। পুরাতন ১৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অনেকেই দূর-দূরান্তের হওয়াতে টিকাকেন্দ্রে যেতে চান না। আবার বিভিন্ন কারণেও অনেকেই টিকার আওতা থেকে বাইরে রয়েছেন। এমন সব মানুষদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা ছাড়াও সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকলকে টিকার আওতার আনতেই ভ্রাম্যমাণ টিকাদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, রসিকের ২০৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে করোনার টিকাকেন্দ্র রয়েছে মাত্র ছয়টি। এর মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল টিকাকেন্দ্র, রংপুর নগর ভবন টিকাকেন্দ্র, মাহিগঞ্জ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এরশাদ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জুম্মাপাড়া নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং শিক্ষার্থীদের জন্য স্টেশন ক্লাব টিকাকেন্দ্র রয়েছে। এই ছয়টি টিকাকেন্দ্রে নিয়মিত টিকাপ্রদান করা হচ্ছে। এর বাইরে বাদ পড়া নারী-পুরুষসহ ১৮ বছর বয়সী সবাইকে টিকার আওতায় আনতে পুরাতন ১৫টি ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমাণ গণটিকা কার্যক্রম চালু করেছে রংপুর সিটি করপোরেশন।
গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে করোনার ভ্রাম্যমাণ গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয়দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত করোনার টিকা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। শুরুতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ১৫টি দল ওয়ার্ড ভিত্তিক কাজ করলেও বর্তমানে চারটি দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকাপ্রদান করছে।
সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে সেখানে টিকা নিচ্ছেন বাদপড়া নারী-পুরুষেরা। আবার যারা অনলাইনে টিকার নিবন্ধন করেও টিকা নিতে পারেননি তারাও সহজেরই এই কার্যক্রমে সুবিধা পাচ্ছেন। মুঠোফোনে খুদে বার্তার অপেক্ষায় না থেকে দ্রুত টিকা নেওয়ার এই ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থাতে সাধারণ মানুষও বেশ আগ্রহী।
সোমবার দুপুরে নগরীর ট্রাক টার্মিনাল দর্শনা রেলওয়ে এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী সুজন ইসলামকে মোটরসাইকেলের পেছনে করোনার টিকা নিয়ে ছুটতে দেখা যায়। তার সঙ্গে একজন স্বেচ্ছাসেবকও ছিলেন। দুজনে মিলে একটি ভ্রাম্যমাণ দল। এমন চারটি দল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতিদিন কাজ করছেন বলে জানান ওই স্বাস্থ্যকর্মী।
সুজন ইসলাম বলেন, আমাদের লক্ষ্য প্রতিদিন অন্তত ১০০ জনকে টিকার আওতায় নেওয়া। এ জন্য আমরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষকে টিকা নেওয়ার জন্য আহ্বান করছি। এ কার্যক্রমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া খুব সহজ। এ কারণে সাধারণ মানুষ নিজ ইচ্ছায় এসে টিকা নিচ্ছেন। নিবন্ধন করা থেকে শুরু করে টিকা দেওয়া দশ মিনিটেরও কম সময় লাগছে। দূর-দূরান্ত থেকে নির্ধারিত টিকাকেন্দ্রে না গিয়েই নিজ বাড়িতে ও মহল্লায় টিকা নিতে পারায় মানুষজন ভীষণ খুশি।
নিবন্ধন করেও শুধুমাত্র লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার জটিলতার কারণে এত দিন টিকা নেননি সুমি আকতার। এবার তাকে বাড়িতে গিয়েই করোনার টিকা প্রদান করেছে রসিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই নারী বলেন, শুনেছি লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকা নিতে হয়। আমার স্বামী ও ছেলেরা টিকা নিয়েছে। কিন্তু লাইনে দাঁড়ানো এবং সময় স্বল্পতার কারণে শহরে গিয়ে টিকা নেওয়া হয়নি। এবার বাড়ি বাড়ি এসে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়াতে আমরা উপকৃত হয়েছি।
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কামরুজ্জামান তাজ বলেন, সারাদেশের মধ্যে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও টিকাদান কার্যক্রমে রংপুর প্রথম অবস্থানে রয়েছে। সব মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেকেই বাড়ির কাছে টিকাকেন্দ্র না থাকায় টিকা নেননি। এখন সেই সমস্যা থাকার কথা নয়, কারণ সবার দ্বারে দ্বারে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর হতে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পাড়া-মহল্লায় গিয়ে ৬ হাজার ৩৪৭ জনকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। পুরাতন ১৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় স্থানীয় কাউন্সিলররাও টিকাদান কার্যক্রমের ব্যাপারে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও বয়স্করা ভ্রাম্যমাণ টিকাদান কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।