রংপুরে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে শনিবার (১ জানুয়ারি) সকালে বাড়িতে চুলার আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত দগ্ধ হন তিনি। শরীরে ৬০ শতাংশ দগ্ধতা নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি মারা যান বলে জানান তার মেয়ে রাজিয়া সুলতানা।
ওই নারীর নাম শামসুন্নাহার বেগম (৫৫)। তিনি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সন্তোসপুর গ্রামের বাসিন্দা।
দগ্ধ শামসুন্নাহারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ হামিদ পলাশ।
তিনি বলেন, শীত নিবারণ করতে গিয়ে খড়কুটোর আগুনে দগ্ধ হয়েছিলেন শামসুন্নাহার। তার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে শ্বাসনালি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাকে আর বাঁচানো যায়নি। এবার শীত মৌসুমে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দগ্ধ রোগীদের মধ্যে এটি প্রথম মৃত্যু।
বর্তমানে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ২২ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে সবশেষ গত পাঁচ দিনে ভর্তি হয়েছেন ১৩ জন। চিকিৎসাধীন দগ্ধ রোগীদের মধ্যে এক বৃদ্ধাসহ আরও তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট ঘুরে দেখা গেছে, রংপুরসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে আসা অগ্নিদগ্ধ বিভিন্ন বয়সী শিশু ও নারীদের সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের শরীরের ২০ থেকে ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। বেশির ভাগ দগ্ধ রোগী নারী ও শিশু। এসব রোগী এখন পোড়া ক্ষতের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।
দগ্ধ রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, রংপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোয় এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। শীত নিবারণে গ্রামাঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর প্রবণতা বেড়েছে। আগুন পোহাতে গিয়েই সতর্কতার অভাবে অনেকে দগ্ধ হয়েছেন।
হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক এম এ হামিদ পলাশ আরও জানান, চিকিৎসাধীন বেশির ভাগ রোগীই শীতের তীব্রতা থেকে উষ্ণতা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। প্রতি শীত মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিদগ্ধের এমন ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বার্ন ইউনিটসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত বছর শীত মৌসুমে ২৫ জনের বেশি নারী ও শিশু দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রংপুর জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশা শীতের তীব্রতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি মাসেই তিনটি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে রংপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাসেল মিয়া বলেন, শীতের শুরুতেই রংপুরে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫২ হাজার ৬০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ১ কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা থেকে শীতবস্ত্র ক্রয় করে বিতরণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
রাফিউল ইসলাম রাব্বি / এলআর
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০