রংপুর ব্যুরো:
বাজারে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন দিনমজুর সুবল চন্দ্র। বাজারের পাশেই বিশাল স্কুল মাঠ। জনগণের সামনে থেকে সেই মাঠেই নিয়ে যাওয়া হয় সুবলকে। সেখানে চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকেরা মিলে দিনমজুর সুবল চন্দ্রকে এলোপাথাড়ি মারধর করেন। এতে তার ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তার পায়েও প্রচণ্ড আঘাত করা করা হয়। উঠে দাড়াতে পারছিল না দিনমজুর সুবল। তারপরও চেয়ারম্যানের অমানবিক নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সেই মাঠ থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বলদীপুকুর বাজারের আলু ব্যবসায়ী নুরুন্নবী মিয়ার গুদামঘরে নিয়ে গিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সেই ঘর থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বলদীপুকুর বাজারে নির্যাতনের শিকার হন দিনমজুর সুবল চন্দ্র (৪১)। সে উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বলদীপুকুর সন্তোষপাড়া গ্রামের ছুয়া কান্তের ছেলে।
অভিযুক্ত আবু ফরহাদ পুটু মিঠাপুকুর উপজেলার ২ নং রানীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিনে রানীপুকুর ইউনিয়নে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয়রা চরম উৎকণ্ঠায় দিনযাপন করছেন। চুরি হওয়ার হাত থেকে ঘরের গবাদিপশু রক্ষায় অনেকেই পাড়া-মহল্লায় রাত্রে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়াও সম্প্রতি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ছাড়াও কয়েকটি বাড়িতে গরু ও নির্মাণ সামগ্রী চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চুরি ছিনতাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে রানীপুকুর ইউনিয়নের চৌকিদার ও দফাদাররা রাত্রিকালীন বিভিন্ন মোড়ে ও রাস্তায় পাহারা দিচ্ছেন। এ নিয়ে চায়ের দোকানে আলাপচারিতায় সুবল নামে ওই দিনমজুর মন্তব্য করেন চেয়ারম্যানের লোকজন ঠিক নেই তাই আগের চেয়ে চুরি বেড়েছে। দিনমজুরের এমন মন্তব্যের কথা জানতে পেরে চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ পুটু তাৎক্ষণিক বলদীপুকুর বাজারে এসে চায়ের দোকানে থাকা দিনমজুর সুবলকে মারপিট শুরু করেন। এ ঘটনায় ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। আহত দিনমজুর অর্থাভাবে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নির্যাতনের শিকার সুবল চন্দ্র বলেন, আমি চেয়ারম্যানের নামে কিছু বলিনি। আমি শুধু বলেছি আগের চেয়ে চুরি বেড়ে গিয়েছে। আমি গরীব মানুষ দিন আনি দিন খাই। আমি কি এমন করেছি চেয়ারম্যান আমাকে চোরের মতো মারলো। আমি বিচার চাই।
এ বিষয়ে রানীপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ পুটু বলেন, আমার সামনেই সুবল চন্দ বলেছিলো চেয়ারম্যানের লোকজন চুরি করছে, তাই তাকে শাসন করা হয়েছে। তার চিকিৎসার প্রয়োজন হলে আমি তা বহন করবো। এনিয়ে লেখালেখির দরকার নেই।
মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০