রংপুর ব্যুরো:
বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণাকে ধারণ করেই মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিকামী মানুষেরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন। এই ইতিহাস নিয়ে বিতর্কে যাওয়া বা কাউকে ছোট করার জন্য যারা চেষ্টা করেন, তাদের ধিক্কার জানাই।
শনিবার (৫ মার্চ) দুপুরে রংপুর নগর ভবন চত্বরে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র মোস্তফা বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসন, বৈষম্য ও অনাচারের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলার মানুষেরা সংগ্রাম করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন। স্বাধীনতার জন্য পৃথিবীর ইতিহাসে এই আত্মত্যাগ দৃষ্টান্ত। যাদের কারণে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদের যদি মূল্যায়ন না হয় সেটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। দেশ স্বাধীন না হলে পাকিস্তানিরা আমাদের পা চাটা গোলাম বানিয়ে রাখত। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে আমরা স্বাধীনতা, লাল-সবুজ পতাকা ও সার্বভৌম দেশ পেয়েছি। যে কোনো পরিস্থিতিতে তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে আমাদের আরও আন্তরিক হতে হবে।
মেয়র বলেন, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি শুধু আওয়ামী লীগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের স্বাধীনতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান সবচেয়ে বেশি রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, নাপিত, ধোপা, মুচিসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। এমন ঘটনাও আছে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের একটু আশ্রয় দেওয়ার কারণে পুরো পরিবারকে পাকিস্তানি হায়েনারা শেষ করেছে। এগুলো তো অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে মেয়র মোস্তফা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দেশপ্রেম প্রত্যেকটি নাগরিকের মধ্যে জাগ্রত হতে হবে। তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) আদর্শ, চেতনা ও দেশপ্রেম নতুন প্রজন্মকে ধারণ করতে হবে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের ইতিহাস জানতে হবে। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম ইতিহাস বিমুখ, তাদের বেশির ভাগই ইতিহাস অজানা। আমাদের সন্তানদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। নতুনরা সঠিক ইতিহাস জানলে ভবিষতে তা কেউই কলঙ্কিত করতে পারবে না।
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন মিঞার সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ। স্মৃতিচারণে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, এগারো দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপটসহ রংপুরের তখনকার সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
অনুষ্ঠানে প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু, সিটি কাউন্সিলর মাহাবুবার রহমান মঞ্জু, নজরুল ইসলাম দেওয়ানী, রহমত উল্লাহ্ বাবলা, হারাধন রায়সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছয় জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ সম্মানি উপহার প্রদান করা হয়। পরে বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পীসহ স্থানীয় শিল্পীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন।
রাফিউল ইসলাম রাব্বি / এনভি
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০