রংপুর ব্যুরো:
রংপুরের মিঠাপুকুরে ভুট্টা খেত থেকে মোসলেমা খাতুন (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্রেমের সম্পর্ক থেকে চাচাতো ভাই নাহিদ হাসান (২২) ওড়না পেঁচিয়ে ওই স্কুলছাত্রীকে হত্যা করে। গর্ভের সন্তান (ভ্রূণ) নষ্ট করতে না চাওয়ায় মেয়েটিকে হত্যা করা হয়।
রোববার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে নাহিদ হাসান আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করে পুলিশসহ পিবিআই ও সিআইডি। শনিবার (২৪ এপ্রিল) মোসলেমার মরদেহ উদ্ধারের ১২ ঘণ্টা পার না হতেই প্রেমিক নাহিদ হাসানকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
নাহিদ হাসান মিঠাপুকুর উপজেলার দলসিংহপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। মোসলেমা খাতুন সম্পর্কে তার চাচাতো বোন। তাদের মধ্যে প্রায় এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও হয়। মোসলেমা খাতুন স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নাহিদ হাসান জানান, তার প্রেমিকা মোসলেমা খাতুনের সঙ্গে সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তার শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর নাহিদ দিনাজপুরে চাকরির জন্য চলে যায়। ঘটনার ১৫ দিন আগে মোসলেমা তার গর্ভে সন্তান আসার কথা নাহিদকে জানায়। কিন্তু নাহিদ তা অস্বীকার করলে তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়।
ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নাহিদকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলেন মোসলেমা। কিন্তু নাহিদ প্রথমে দেখা করতে আপত্তি জানালেও পরে মোসলেমার চাপে দেখা করতে রাজি হন। মোসলেমাদের বাড়ির পাশের একটি ভুট্টা খেতে গিয়ে নাহিদ দেখা করেন।
ওই সময় মোসলেমা তার গর্ভের ভ্রূণ রাখতে চেয়ে বিয়ের দাবি করেন। কিন্তু নাহিদ এতে আপত্তি তুলে যে কোনোভাবে ভ্রূণ নষ্ট করতে বলেন। মোসলেমা এতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে নাহিদ রেগে গিয়ে ভুট্টা খেতেই তাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মেরে ফেলেন। এরপর বাসায় গিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে থাকেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে মিঠাপুকুর উপজেলার মোসলেমা বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরে পরিবারের লোকজন মোসলেমাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে মিঠপুকুর থানা পুলিশকে জানায়। দুই দিন পর শনিবার রাতে একটি ভুট্টা খেত থেকে মোসলেমার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মোসলেমার বাবা বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মিঠাপুকুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) জাকির হোসেন জানান, পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডির তৎপরতায় অল্প সময়ের মধ্যে মোসলেমা হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নাহিদ হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা রহস্য বেরিয়ে আসে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০