রংপুর ব্যুরো:
রংপুরে কালবৈশাখী ঝড় আর শিলা বৃষ্টিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম, ভুট্টা, গম, ধানসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও শিলার আঘাতে ঘর-বাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি ঝড়ে উড়ে গেছে স্থাপনা। তবে বৃষ্টির পানির চেয়ে শিলার তোপে মাটিতে নুয়ে পড়েছে কৃষকের সবুজ খেত। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) রাত ১২টার পর থেকে থেমে থেমে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টি আঘাত হানে। কৃষি বিভাগ ও আবহাওয়া অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৬৩ দশমিক শূন্য ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মধ্যরাতেই ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে হঠাৎ কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয় আকাশ। এর কিছুক্ষণ পর থেমে থেমে শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। তবে মধ্যরাত থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শিলা বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে পানির পরিমাণ কম হলেও প্রচুর শিলা ঝরেছে। শিলা বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও শিলার স্তূপ জমে যায়। তবে বৃষ্টির চেয়ে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল বলে জানা গেছে।
বদরগঞ্জ উপজেলা সদরের আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় কয়েকশ বিঘা জমির ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানান, ধানের গাছ এখন বেশ বাড়ন্ত। ধানও গজাতে শুরু করেছে। কিছু দিন পরই বেরো কাটা হতো। কিন্তু মঙ্গলবার এবং বুধবারের ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় ধান এখন মাটিতে হেলে পড়েছে। তবে শাক-সবজি ও উঠতি ফসলের ক্ষতি বেশি হয়েছে।
গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ার বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, শিলা বৃষ্টিতে আমগাছে আসা গুঁটি ঝরে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় আধপাকা কিংবা পাকা গম, ধান আর ভুট্টা মাটিতে শুয়ে পড়েছে। হাড়িভাঙ্গা আমের জন্য বিখ্যাত মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ, পদাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আম বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আমচাষিদের দাবি, শিলা বৃষ্টিতে গুঁটি আম ঝড়ে পড়েছে। এ রকম বৃষ্টি আর কয়েক দিন হলে এ বছর কাঙ্ক্ষিত আমের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, তার খেতের পাশের জমিতে সেচ মেশিনের ঘরটিও ঝড়ে উড়ে গেছে। গ্রামের অনেক বাড়ির পুরানো ঘরের টিনগুলো শিলা বৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম কামরুল হাসান জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানসহ প্রত্যন্ত এলাকাতে ঝড় ও শিলা বৃষ্টি হয়েছে। এতে গেল ২৪ ঘণ্টায় ৬৩ দশমিক শূন্য তিন মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে রাত ১২টার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ৬ মিলিমিটার এবং রাত ৩টার পর থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত থেকে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দু-একদিন রংপুর অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, মঙ্গলবার সকালে এবং মধ্যরাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড় এবং শিলা বৃষ্টি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকলে তা যাচাই-বাছাই করে সহযোগিতা করা হবে।
রাফিউল ইসলাম রাব্বি / এনভি