রংপুর ব্যুরো:
হয়রানি ও অনিয়ম বন্ধে অটোমেশনের মাধ্যমে কর আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
তিনি বলেছেন, আমরা হয়রানির অভিযোগ শুনতে চাই না। অনিয়ম বন্ধ করতে চাই। এজন্য অটোমেশনের মাধ্যমে কর আদায়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা হলে হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগ কমানো সম্ভব হবে। অটোমেশন পদ্ধতি চালু হলে কম সময়েই কর প্রদান করা যাবে। তবে কর প্রদানে আমাদের আরও বেশি আগ্রহী হতে হবে। কারণ রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে দেশের উন্নয়নের সম্পর্ক রয়েছে।
শনিবার (৬ মার্চ) দুপুরে রংপুর নগরীর আরডিআরএস ভবনের রোকেয়া হলে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এ সভার আয়োজন করে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশের উন্নয়নে কর দেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে আমাদের পরনির্ভশীলতা কমাতে হবে। দেশীয় পণ্যের উন্নতির আমদানিজাত পণ্যের ওপর আমাদের নজরদারি কড়াকড়ি। আমদানির ওপর ভ্যাট প্রতিবন্ধকতাকে জুলুম অত্যাচার মনে করবেন না। দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদা বাড়ানো জন্য আমরা এটা করে থাকি।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে রহমাতুল মুনিম আরও বলেন, কর দেয়াকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব মনে করুন। রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে আপনারা গর্বিত অংশীদার হচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করব, রাজস্ব আদায়ে যে সমস্যাগুলো রয়েছে, তা সমাধান করার। কর আদায়ে হয়রানি ও অনিয়ম বন্ধে আগামীতে অটোমেশনের মাধ্যমে কর নেয়া হবে। এতে করদাতা এবং গ্রহীতার মধ্যে কোনো ধরনের দেখা সাক্ষাতের সুযোগ থাকবে না। নির্দিষ্ট অ্যাপস এর মাধ্যমে কাগজপত্র জমা দিলেই অটোমেটিক কর নির্ধারণ ও দেয়া যাবে। আপনারা কাগজপত্র, হিসাব-নিকেষসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিবেন। অটোমেটিম আপনার ভ্যাট ট্যাক্স কালেকশন হবে। তবে যখন সন্দেহের সৃষ্টি হবে, কাগজপত্র-হিসেব-নিকেশে গড়মিল মনে হবে তখন ডেকে নেয়া হবে। আমরা চাচ্ছি, ভ্যাটের রিটার্ন থেকে সবকিছুই অটোমেশনে নিয়ে আসতে।
রংপুর বিভাগ অবহেলিত নয় দাবি করে তিনি বলেন, রংপুর বিভাগ এখন অনেক এগিয়ে গেছে। এখান থেকে প্রচুর কর পাই আমরা। তাই বিভাগটিকে গুরুত্ব দেই। দিন দিন রংপুরের উন্নয়ন হচ্ছে। আপনারা নিজেরাই অনেক কিছু অর্জন করতে পারেন। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (কর নীতি) সদস্য আলমগীর হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (কাস্টসম নীতি ও আইসিটি) সদস্য গোলাম কিবরিয়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (মূসক নীতি) সদস্য মাসুদ সাদিক, কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুর বিভাগের কমিশনার শওকত আলী সাদী।
সভায় রংপুর বিভাগের আট জেলার চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। তারা আসন্ন ২০২১-২০২২ বাজেটে রংপুরকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে বলেন, পিছিয়েপড়া রংপুর অঞ্চলে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে বিনিয়োগ সহায়তা দিতে আলাদা শিল্পনীতি, করনীতি, ভ্যাটনীতি, শুল্কনীতি ও ঋণনীতি জরুরি ভিত্তিতে ঘোষণা করতে হবে। কেননা সমৃদ্ধশালী ও পশ্চাৎপদ অঞ্চলে একই হারে কর, ভ্যাট ও সুদ হার নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত নয়। উন্নয়ন হচ্ছে বাংলাদেশের। তবে দেশের সকল অঞ্চলে সমানতালে এ উন্নয়ন সাধিত হয়নি। বাজেট বৈষম্য রংপুর অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ কম রাখায় ধারবাহিকতার কারণে এই বিভাগের প্রতিটি জেলাই এখন শিল্পে অনুন্নত জেলা হিসেবে চিহ্নিত।