ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ ২০২৪
  1. সর্বশেষ

দেশ থেকে ধর্ষণ নিপাত যাক ।

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
৩ অক্টোবর ২০২০, ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

—————————-

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা পাঠ্যক্রমে পড়ে আসছি সুন্দর একটি বাক্য। কিন্তু বাস্তবে আমাদের চোখে পড়ে অন্য কিছু। আজ আমাদের সমাজের যুবকেরা সবচেয়ে বেশি বিপথগামী হচ্ছে। অবশ্য তার উপযুক্ত কারণও আছে। আমাদের সমাজে একটি অঘোষিত নিয়ম হয়ে গিয়েছে যে আগে চাকরি করতে হবে, লাইফে সেটেল হতে হবে। তারপর বিয়ে। এর আগে বিয়ের কথা কল্পনা করা সমাজের কাছে পাপ বলে গণ্য হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে ছেলেমেয়েরা প্রেম-ভালোবাসায় লিপ্ত হলে সেটা সাধারণ বিষয় মনে করা হয়। আসলে তারা প্রেম ভালোবাসা নয় অবৈধ সম্পর্কে, পরকীয়ায় লিপ্ত হচ্ছে যা আমাদের সমাজের জন্য ভবিষ্যতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি।

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার কথা আমরা পত্রিকা-মিডিয়ায় নিয়মিত দেখতে পাই। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন মেধাবী ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। যা সত্যি আমাদের জন্য অশনি সংকেত। উন্নত বিশ্বের যেখানে জন্মদানে উৎসাহ দেওয়া হয় সেখানে আমাদের দেশে রাস্তায়, ডাস্টবিনে,বাগানে নবজাতক পড়ে থাকতে দেখা যায়। দেখতে পাই ডাস্টবিনে পড়ে আছে অপরিপক্ক দেহ। আমাদের দেশে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নবজাতক পড়ে থাকতে দেখা যায় যাদের অধিকাংশ মৃত। ২০১৮ সালে দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নবজাতকের লাশ পাওয়া যায়। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হল থেকে ট্রাঙ্ক বন্ধ অবস্থায় নবজাতক উদ্ধার করা হয়।

কিন্তু এর কারণ কি? এর কারণ হলো আমাদের সমাজে বিয়ে টা অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে।
আমাদের সমাজে নৈতিকতার কোন স্থান নেই। আমাদের সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের সমাজ চাকরির আগে বিয়ে করাকে কখনো সুনজরে দেখে না। কিন্তু তাঁরা ভাবে প্রেম-ভালোবাসা ছেলে-মেয়েদের মধ্যে স্বাভাবিক ব্যাপার। এমন চিন্তা ভাবনা সত্যি অশনি সংকেত হতে পারে আমাদের সমাজের জন্য।

আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমি যখন আমার বন্ধুদের বিয়ে করার কথা বলি তখন তারা হাসি ঠাট্টা করে। তাদের ধারণা বিয়ে করলে ক্যারিয়ারে সকল হওয়া যায় না। অথচ তারা প্রায় সকলেই অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত। তারা নিয়মিত যিনা করছে। একজন মেয়ের ১৩ বছর বয়স এবং একজন ছেলে ১৫ বছর বয়স হলেই তাদের যৌন আকাঙ্খা শুরু হয় পুরোদমে। কিন্তু গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকরি পেয়ে বিয়ে করতে করতে আমাদের ৩০ বছর পার হয়ে যায়। তাহলে প্রায় ১৫ বছর যৌবন ধরে রাখতে হচ্ছে। কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব? আমাদের যেমন খিদে লাগলে খেতে হয় ঠিক তেমনি যৌন আকাঙ্খা খিদের মতূ। প্রত্যেকেরই এই খিদে থাকে। মানুষ যখন বৈধ উপায়ে তা মেটাতে পারে না তখনই তারা অবৈধভাবে পথে চলে যায়। এভাবেই যুবকেরা তাদের যৌন ক্ষুধা বৈধ উপায়ে মিটাতে না পেরে অবৈধ পথ বেছে নেয়। এ সময় কবি রফিক আজাদের একটি কথা মনে হচ্ছে, “ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাব”।

এভাবে যুবকেরা বৈধ উপায়ে যৌন ক্ষুধা মিটাতে না পেরে ধর্ষণের মতো মারাত্মক অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ সম্পর্ক-ব্যভিচার লিপ্ত হচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৯০% ছেলে আজকাল হস্তমৈথুনের সাথে জড়িত। হস্তমৈথুনে মেয়েদের সংখ্যাও দিনদিন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এটা কত মারাত্মক একটা খারাপ অভ্যাস তা আমরা সকলেই অবগত আছি। এর ফলে তাদের মারাত্মক নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে।

কিন্তু এর থেকে যুবসমাজকে বাঁচানোর কি উপায়?আমার মনে হয় আমাদের সমাজে বিয়েকে সহজ লভ্য করে দিতে হবে।আর সবথেকে যেটা বেশি দরকার সেটা হলো নৈতিক শিক্ষা যা আমাদের সমাজ, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের কখনো দেয় না। যার কারণে আমরা দেখি যত দুর্নীতি, যত বড় বড় অপকর্ম সব শিক্ষিত মানুষেরা করে। এরা আসলে কি শিক্ষা অর্জন করে? নৈতিক শিক্ষা আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর নৈতিক শিক্ষার সর্বোত্তম উৎস ধর্মগ্রন্থ। প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থে নৈতিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে ধর্ম ও নীতিহীনতাই সকল ও শৃঙ্খলার মূল। সুতরাং ধর্মীয় মূল্যবোধই এর থেকে মুক্তির লাভের উত্তম উপায় ।

এখন আমি পবিত্র আল কোরআন থেকে কয়েকটা আয়াত উল্লেখ করছি।

“ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ;তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক এবং মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।[সূরা নূর ২]

‘হে নবি পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। যার ফলে সে ব্যক্তির কুবাসনা সৃষ্টি হয়, যার অন্তরে আসক্তি আছে। তোমরা উত্তম (সংযত) কথাবার্তা বলো।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৩২)

‘(হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তাআলা সে ব্যাপারে খবর রাখেন।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩০)

“আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।”(সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৩২)

“ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের উপর এটা হারাম করা হয়েছে।”[সূরা আন-নূর: ৩]

এরকম প্রত্যেক ধর্ম গ্রন্থে বলা হয়েছে নৈতিকতা সম্পর্কে।প্রেম-ভালোবাসার অবৈধ সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে হলে আমাদের যুব সমাজকে ধর্মগ্রন্থ আপন করে নিতে হবে। কোন মুসলমান যদি এই আয়াত গুলো জানে এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করে তাহলে তার দ্বারা কখনো খারাপ কাজ করা সম্ভব নয়।আমাদের সব সময় ভাবতে হবে কেউ একজন আমাদের দেখছেন তিনি সব হিসাব রাখছেন এবং তার প্রতিফল একদিন আমাকে পেতে হবে। এই চিন্তা মাথায় থাকলে কারো দ্বারা কখনো খারাপ কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের সমাজ সব সময় তাদের ছেলে-মেয়েদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতে চেষ্টা করে। তাদের ধারণা, ইংলিশ মিডিয়াম পড়লে জীবনে অনেক বড় কিছু হওয়া যায়। কিন্তু পরকালে? পরকালে সফলতা লাভের চেষ্টা কখনো কেউ করেনা। আমি ইংরেজি শিক্ষা, আধুনিক শিক্ষার বিরুদ্ধে বলছি না। আমি বলছি তার সাথে অবশ্যই ধর্মীয় নৈতিকতার শিক্ষা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর অর্জন করা উচিত। এবং সরকারের অবশ্য কর্তব্য তার ব্যবস্থা করে দেওয়া। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন হাদিসে উপর কোর্স রাখা উচিত।

কিন্তু আমাদের সুশীল সমাজ কখনো তাদের ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পাঠানোর চিন্তাভাবনা করে না। যা সত্যি লজ্জাজনক। সত্যি কথা বলতে কি, মাদ্রাসা স্টুডেন্ট সারাদেশ ছড়িয়ে রয়েছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে, প্রত্যেক হলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মাদ্রাসার স্টুডেন্ট স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। তাই দিনবদলের সময় এসেছে। আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। জাতির কাছে আমার একটা প্রশ্ন। আপনাদের এতো সুখ, এতো স্বাচ্ছন্দ, এতো শক্তি, এতো দুঃখ, এতো কষ্ট,কিন্তু মৃত্যুবরণ তো করতেই হবে। তারপর তারপর কি হবে ?

সর্বোপরি বলতে চাই যদি বিয়ে সহজ করে দেওয়া হয় এবং নৈতিকতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে যুবসমাজ কখনো বিপথগামী হবে না। ধর্ষণও মহামারী আকার ধারণ করবে না।

মোঃ লেমন বিশ্বাস
শিক্ষার্থী:রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

92 Views

আরও পড়ুন

নওগাঁর পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী সেবা প্রদানের জন্য এ্যামবুলেন্স প্রদান

র‍্যাবের ২৪ ঘন্টা অভিযানে ধর্ষন মামলার আসামী সেলিম গ্রেফতার

নকলায় পৃথক ঘটনায় দুই জনের মৃত্য

কক্সবাজারের রামুতে ছুরিকাঘাতে নিহত কৃষকলীগ নেতা নাজেম হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটক ২

গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স’র কর্ণধার নূর মোহাম্মদ গ্রেপ্তার

চকরিয়ার নবাগত সহকারী কমিশনার ভূমি এরফান উদ্দিন

চকরিয়া প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন
সাংবাদিকরাই পারে মানুষের আশার প্রতিফলন করতে- সাংসদ সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম 

“বদর দিবস” এর ইতিহাস, শিক্ষা ও তাৎপর্য

মাইশা আক্তার নিশিলার কবিতা “আসক্ত মেঘকণ্যা”

বোয়ালখালীর ৬টি দুস্থ পরিবারে এম এ হাশেম ফাউন্ডেশনের ঘর হস্তান্তর

” আনজুমনে নওজোয়ান ” বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা শাখার অনুমোদন

শান্তিগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত