ঢাকাবুধবার , ২৪ এপ্রিল ২০২৪
  1. সর্বশেষ

জুবায়েদ মোস্তফার গল্পঃ সফল অবাধ্য

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
৫ জুন ২০২০, ১০:২৬ অপরাহ্ণ

Link Copied!

(১ম খন্ড)
——————-
ব্যক্তিগত জীবনে আমি যথেষ্টই নম্র ভদ্র।এটার প্রমাণ ছোট থেকে এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে।আমার গাঁয়ে কিংবা স্কুল, কলেজের কোন শিক্ষকের শরণাপন্ন হলে, তা মুহূর্তেই পরিষ্কার হয়ে যাবে আমার সম্পর্কে যে কারো ধারণা।তারাই বলে দেবে আমি কেমন?
আমার আচার- আচরণ, চলা -ফেরা কেমন?

আরেকদিকে আমি মা বাবার অতি আদরের সন্তান। অতি আদরের শুধু নয় পাশাপাশি একান্ত বাধ্যগতও বটে।মা বাবার সকল কথা নির্দ্বিধায় মেনে নেয়।মা বাবার সকল সিদ্ধান্ত মেনে চলার সক্ষমতা আমার আছে।বরং অবাধ্য হওয়ার সাহস এবং ক্ষমতা আমার নেয়।কারণ আমি মা বাবাকে খুবই শ্রদ্ধা করি, সম্মান ও করি।

আর আমি যে শুধু মা বাবার বাধ্যগত তা নয়।এখানেই শেষ নয় অজানা আরো অনেক গল্প আছে।এগুলো না হয় অজানা রয়ে যাক।

কবির ভাষা বলিঃ

সব সময় সব কিছু হয় না প্রকাশ
কিছু কিছু জিনিষে কারো থাকে না জানার অবকাশ
কিছু কথা রয়ে যায় না বলা
বলা হয় নি বলেই
বাস্তব সত্য গুলোকে করো না কেহ অবহেলা।

আমি যেমন মা বাবার বাধ্যগত তেমনি শিক্ষকদেরও তাই।তাই শিক্ষকেরা আজও আমায় অতি আদরের কাছে টেনে নেয়। তাদের দৃষ্টিতে আমি আজও আগের মতই সেই ছোট জুবায়েদ।আমার ভালোর জন্য শিক্ষকেরা কতোই না ভালবাসা দিত।সেই স্মৃতিগুলো আজও এ হৃদয়ে তাঁজা।মনের পাঁজরে প্রায় সময় সোনালি সব স্মৃতি মনের অজান্তে উঁকি দেয়।
বাধ্যগত ছিলাম বলেই, সব সময় শিক্ষকেদের অতি ভালবাসার পাত্র ছিলাম।
ওনাদের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে মুক্তহস্তে উদার প্রাণে ওনাদের তরে তাই লিখে দিতে চায় দুটি চরণ-

ওনাদের হাত ধরেই হয়েছে আমার জয় যাত্রা শুরু
তাই তো শ্রদ্ধাভরে স্বীকার করি,
ওনারা যে আমার পিতৃতুল্য শ্রদ্ধেয় শিক্ষা গুরু
কেমনে ভুলিবে তাদের অবদান
আমার জন্য সব সময় ছিল নমনীয়
কখনো হতে দেখেনি ওনাদের আমি পাষাণ।

আমার তরে আছে তাদের অজস্র আত্মত্যাগ
সব সময় চেয়েছেন আমার মুখে ফোটাতে হাসি
আজ যদিও তাদের কাছে নেয় আমি
তবু যে মোর গুরুদের বড্ড ভালবাসি।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আপনি এত বাধ্যগত তাহলে গল্পে কেন অবাধ্য শব্দটা ব্যবহৃত হল?
আমি নিজেই শেষ প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেব।

২০১৮ সালের শেষের দিকে এডমিশন প্রায় শেষ।
আমি বেশ কয়েক জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দিলাম।
কিন্তু আশানুরূপ ফলাফল আসল না।কোথাও ভর্তি হতে পারলাম না।যদিও এক জায়গায় আশা জেগেও ভর্তি হওয়া উঠেনি।

নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পজিশন ছিল ১০৮৮।শোনা গেল, প্রতিবারই নাকি ১৫০০ + যায়।এমনকি এর আগের বছরও নাকি ১৫০০ গিয়েছিল।
তাছাড়া সেবার আবার ১৭০ টা সিট বাড়িয়েছিল। সব মিলে অনেক আশায় বুক বাঁধলাম। ১ম কলে ডাক পেলাম ভর্তির সুযোগ হয়নি। ২য় কলের অপেক্ষায় দীর্ঘ দিন। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটল, কিন্তু দুর্নীতির কাছে হেরে গেলাম।
দুর্নীতি করে ভি.সি সিট ফিল আপ করে ফেলছে। ২য় কলে দেখানো হয়েছে সিট খালির সংখ্যা শূন্য।
যা কোনদিন ও মেনে নেয়ার মতো না। বরং এতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে এটা বড় ধরণের দুর্নীতি। এমনকি ভি.সির দুর্নীতি নিয়ে পত্রিকায়ও ছাপা হয়ছে নিউজ।
সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যমেও প্রচুর লেখালেখি হয়েছে।
কারণ এজন্য দুর্নীতি যে ধরা পড়েছিল।
সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ইউনিটের(ঘ ইউনিট)
পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল। ১ম বার প্রশ্ন আউটের অভিযোগ উঠল এবং প্রমাণও মেলে। তারপর পুনরায়
পরীক্ষা ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে যারা পাশ করেছে শুধু তারাই অংশগ্রহণ করবে। তার মানে নিঃসন্দেহে মেধাবীদের খেলা।আমিও সে পরীক্ষা অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিল। এই পরীক্ষা হয়েছিল নোবিপ্রবিতে ভর্তির পর।

নোবিপ্রবিতে ভর্তি অনেক ছাত্রই আছে যাদের ঢাবিতে চান্স পেয়ে চলে গেয়েছিল। তাহলে সেই সিটগুলো কোথায় গেল?
এজন্য আরো প্রশ্নবিদ্ধ হল।

সমস্ত পরীক্ষা শেষে আমি তখন হতাশায় বাড়ি ফিরলাম। ভাগ্যের সাথে সেবার পেরে উঠতে পারিনি।

এমন সময় আব্বু এসে বলল, সারা দেশ তো ঘুরে দেখলা। কোন লাভ হয় নি তো?
কি আর করার আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাও। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও ১ম বার ভর্তি হয়নি। তখন জাবির পরীক্ষার জন্য ঢাকা ছিলাম। আসা সম্ভব হয় নি তাই ভর্তি হতে পারে নি।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেরা কলেজেও ভর্তি পারিনি নিজের অবহেলার কারণে। এ ভেবে মনটা যথেষ্ট খারাপ হয়েছিল। রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে পাশের উপজেলায় অবস্থিত , ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজে বাংলায় মনোনীত হয়েছি ।আব্বু বলল যাও ভর্তি হয়ে আসো।

বিকল্প কোন পথ খুলা নেয় তাই বাধ্য ছেলের মতো ভর্তি হয়ে আসলাম। ভর্তি হলে কি হবে আমি মোটেও কলেজে যায় নি।
ওখানে আমার মোটেও মন বসে না যে।

আব্বু প্রায়ই বলে, কি ব্যাপার কলেজে যাও না কেন?

-আমি বলি, জ্বি আব্বু যাব।

এভাবেই কেটে গেল আরো ৩ মাস।

(১ম অংশ)

—————–

লেখকঃ

জুবায়েদ মোস্তফা
লোকপ্রশাসন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

48 Views

আরও পড়ুন