জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর :
দিগন্ত ফসলের মাঠে পাকা সোনালি ধান। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে শ্রমিক সংকটের মধ্যেই ধান কাটতে ব্যস্ত কৃষক। তবে প্রতিদিনই আকাশে মেঘের ঘনঘটা, মাঝেমধ্যে ঝড় বৃষ্টি। এমন প্রতিকূলতা মাড়িয়ে বোরো ধান কাটতে হচ্ছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে ধান ঘরে তোলা নিয়ে উদ্বিগ্ন যশোর অঞ্চলের কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বোরো ধান উৎপাদন হয় যশোরে। জেলায় এবার বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে।
উপজেলাগুলোতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকটের মধ্যে ঝড় বৃষ্টিতে ধান বাড়ি নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে জেলা কৃষি বিভাগ এ অবস্থায় কৃষকের ধান ঘরে তুলতে ৬২টি ধান কাটার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
যশোর আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছেন, গত ছয় দিনে জেলায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে গত শনিবার ২০
মিলিমিটার সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে।
গতকাল সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠের ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে ধান কাটতে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ বৃষ্টিতে ভেজা ধান রোদে উল্টে দিচ্ছেন। কেউবা দ্রুত ধান বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
এসময় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিক সংকটের মধ্যে স্থানীয়দের নিয়ে ধান কাটতে শুরু করেছেন তারা। কিন্তু কয়েক দিনে ধরে ঝড় বৃষ্টিতে যেন পাকা ধানে মই দেওয়া অবস্থা হয়েছে।
পুলেরহাট গ্রামের কৃষক জহিরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক সংকটের মধ্যেও সাড়ে ৪ বিঘা বোরো ধান কেটেছিলাম। গত দুই দিনে বৃষ্টি ও ঝড়ে ধান পানিতে ভাসছে। আজ আবার রোদ উঠেছে। সেগুলো রোদে শুকাচ্ছি।
একই এলাকার কৃষক সামাদ আলি জানান, ১ বিঘা জমির ধান কেটেছি। খুব কষ্ট করে বাড়ি নিয়ে গেছি। আকাশের অবস্থা ভালো না। এই মেঘ এই বৃষ্টি। এই পরিস্থিতিতে ধান কাটতে আর আগ্রহী না। তাছাড়া জমিতেই ধান পেকে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা গ্রামের কৃষক সালাম হোসেন বলেন, জমিতে ধান পেকে গেছে। স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটার চিন্তা করছিলাম। কিন্তু আকাশের অবস্থা ভালো না। গত দুই দিনের ঝড় বৃষ্টিতে নিচু জমির ধানের জমিতে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে।
তাছাড়া অনেক কৃষককের কেটে রাখা ধান আবার পানিতে ভাসছে। সবমিলেই ধান নিয়ে বিপাকে আছি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, যশোরের আট উপজেলায় বোরো ধানের ভালো ফলন
হয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জেলায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলায় ৫০ শতাংশ বেশি ধান কাটা শেষ হয়েছে। শ্রমিক সংকট কমাতে জেলায় ৬২টি ধান কাটার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটছে কৃষি বিভাগ। তিনি আরো বলেন, আবহাওয়ার অবস্থা বেশি ভালো না। তাই কৃষকদের দ্রুত মাঠ থেকে ধান বাড়ি নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।