মোঃ রাসেল ইসলাম,বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি:
তীব্র যানজটে বেনাপোল স্থলবন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে ও প্রধান সড়কের আশে পাশের সড়কে যানজটে পথচারিসহ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অনেকে পায়ে হেঁটে চেকপোস্টে যেতে দেখা গেছে। একদিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকল থেকে বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য লোড আনলোড করতে আসা কয়েকশ‘ ট্রাক এক সাথে বন্দরে প্রবেশ ও ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকগুলো সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে একদিন পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য খালাস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩শ‘ ৬৮টি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে ২০ কোটি টাকা রাজস্ব জমা পড়েছে বেনাপোল সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি শাখায়।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকায় বুধবার সকাল থেকে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল এলাকায় ভয়াবহ ট্রাক সংকট দেখা দেয়। বুধবার গভীর রাতে স্বরাস্ট্র মন্ত্রীর সাথে ফলপ্রশু আলোচনার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয় তারা। বুধবার কয়েকটি ট্রাক পণ্য পরিবহন করলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য চালান খালাস প্রক্রিয়া শুরু হলে এক সাথে সব ট্রাক প্রবেশ করতে গিয়ে যানজট লাগিয়ে ফেলে। সময় বাড়ার সাথে সাথে সাথে যানজটও বাড়তে থাকে। শত শত বাংলাদেশি ও ভারতীয় পণ্যবোঝাই এবং খালি ট্রাক মূল সড়কের দু‘পাশে আছে। ট্রাক জটের কারণে পরিবহন, প্রাইভেটকার, রিকশা-ভ্যানও যাতায়াত করতে পারছে না। ফলে পথচারিসহ পাসপোর্টধারীযাত্রীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। কলকাতাগামী ও ঢাকাগামী বাস গুলো চলাচল করলেও আন্ত: জেলার মধ্যে চলাচলকারী বাস বন্ধ রয়েছে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী জানান, বন্দর থেকে মালামাল ডেলিভারি নেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শতশত ট্রাক বন্দরের বিভিন্ন গেটে অবস্থান করছে। ব্যবসায়ীক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বন্দর ব্যবহারকারী সকল ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল খালাস নেওয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ট্রাক ও ক্যার্ভাডভ্যান ধর্মঘটেনর কারনে বেনাপোল বন্দরে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক ও ক্যার্ভাড ভ্যানের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ১৭ হাজার টাকার ভাড়া এখন ২৮/২৯ হাজার টাকা পড়ছে। তবুও পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। ফেরিঘাটসহ মালিকের গ্যারেজে ট্রাক থাকায় সেগুলো সময়মত বন্দরে পৌছাতে পারেনি। আগামী রোববার থেকে স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।
বেনাপোল সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক রকিবুল হাসান বলেন, অন্যান্য সময়ের চেয়ে বৃহস্পতিবার কাস্টমসের রাজস্বের টাকা বেশি জমা পড়েছে। অন্যান্য দিন ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা জমা হলেও এ দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২০ কোটির বেশি রাজস্বের টাকা জমা পড়েছে এ শাখায়। রাত ৮টা পর্যন্ত রাজস্বের টাকা জমা হবে। সেই হিসেবে আরো বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের এক জন কর্মকর্তা জানান, বেনাপোল বন্দরে দৈনিক গড়ে ১৫ থেকে ১৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। ধর্মঘটে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক আমদানিকারকরা পণ্য খালাশ নেন না। তবে বুধবার প্রায় ৭০ ট্রাক পণ্য খালাস করে ট্রাক বন্দর থেকে ছেড়ে গেছে। একদিন বন্ধ থাকলে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেয়। তবে পরের দিন তা সমন্নয় হয়ে যায়।
বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল জানান, পরিবহন ধর্মঘটের কারনে এ রকম অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাস করা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাতের মধ্যেই সব শুল্ক পরিশোধকৃত পণ্য খালাস দেওয়া হবে।