————————–=====—
কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব।সামর্থ্য থাকা সত্তে¦ও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদিস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।
সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিস:৩১২৩,মুস্তাদরাকে হাকেম,হাদীস:৩৫১৯,আত্তারগীব ওয়্াত্তারহীব,হাদিস:১০৭২।
ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক সুন্নাহ অনুযায়ী সম্পাদন করা।
এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ করা হল।কলেবর বড় হওয়ার আশংকায় কুরআন, হাদিস এবং ফিকহি ইবারত উল্লেখ করা হয়নি।
যার উপর কুরবানী ওয়াজিব:
মাসয়ালা-১: প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, ১০যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা,সোনা-রূপা,অলঙ্কার,বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যাবসায়িক পণ্য এবং অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। আলমুহীতুল বুরহানী:৮/৪৫৫,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৩৬-৩৩৭,ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪০৫।
নেসাবের পরিমাণ:
মাসয়ালা-২: আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি (৮৭.৪৮ গ্রাম), রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি (৬১২.৩৫ গ্রাম), টাকা পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা-রূপা কিংবা টাকা -পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক ব¯ুÍ মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও কুরবানী করা ওয়াজিব। কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তির ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুুদের উপের ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।
আলমুহীতুল বুরহানী:৮/৪৫৫,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৩৬-৩৩৭,ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪০৫।
নেসাবের মেয়াদ:
মাসয়ালা-৩: কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয় বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো এক দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।বাদায়েউস সানায়ে:৪/১৯৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৩৯, রদ্দুল মুহতার:৬/৩১২।
কোন দিন কুরবানী করা উত্তম :
মাসআলা-৪: ১০,১১ও১২ এ তিন দিনরে মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন।
বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২৩, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪১৬, ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪০,রদ্দুল মুহতার:৬/৩১৬।
বিদেশে অবস্থানরত ব্যাক্তির কুরবানী নিজ দেশে করা:
মাসআলা-৫: বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয। ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৩,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৩, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪২২,আদ্দুররুল মুখতার:৬/৩১৮।
স্ত্রী বা সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী :
মাসআলা-৬:স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো। এক্ষেত্রে যদি কুরবানীদাতার উপর কুরবানী আবশ্যক হয় নিজের নামে কুরবানী আদায় না করলে তার উপর ওয়াজিব বলবৎ থাকবে।সহীহ বুখারী,হাদিস:৫৫৫৯,সহীহ ইবনে হিব্বান,হাদিস:৩৯২৭,ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৩, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪০৫,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৮।
হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী:
মাসআলা-১৭: যেসকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি হবে।
মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক,হাদিস:৮১৪৪,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার:৬/৩১৫. বাদায়েউস সানায়ে:৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া:২/১৬৬।
দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম:
মাসআলা-১৮: দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো প্রাণী কেনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়।মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক,হাদিস:৮১৪৩,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৩৬,বাদায়েউস সানায়ে:৪/১৯২ ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৪।
মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী:
মাসআলা-২০: মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়্যত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসাবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরা খেতে পারবে এবং আতœীয় স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানির ওসিয়্যত করে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরিব মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে।মুসনাদে আহমদ, হাদিস:৮৪৫, ইলাউস সুনান:১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার:৬/৩২৬, ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৮,বাদায়েউস সানায়ে:৪/২১০, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪৫৪।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা:
মাসআলা-২১: সামর্থবান ব্যক্তির রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রা:) কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন তাই তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন।সুনানে আবু দাউদ,হাদিস:২৭৯০, জামে তিরমিযী,হাদিস:১৪৯৫, ইলাউস সুনান:১৭/২৬৮।
সাত শরিকের কুরবানী:
মাসআলা-২৪: সাতজনের মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তামাংশের কম হতে পারবে না। যেমন, কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কুরবানীই সহিহ হবে না।সহীহ মুসলিম,হাদিস:১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক,হাদিস:১০২৭, ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৭, বাদায়েউস সানায়ে:৪/২০৭, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৫১।
কুরবানরি সাথে আকিকা:
মাসআলা-২৭: গরু, মহিষ ও উটে কুরবানীর সাথে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এত কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহিহ হবে।হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর:৪/১৬৬,রদ্দুল মুহতার:৬/৩৬২ বাদায়েউস সানায়ে:৪/২০৯, ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৬,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৫১।
কুরবানীর প্রাণীর বয়সসীমা:
মাসআলা-৩১: উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে।গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে।তবে ভেড়া দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয় কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারা ও কুরবানী করা জায়েয।অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।উল্লেখ্য,ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে না।
সুনানে আবু দাউদ,হাদীস:২৭৯৯,ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৫, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪২৫, বাদায়েউস সানায়ে:৪/২০৫-২০৬,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৩।
করবানীর উত্তম প্রাণী:
মাসআলা-৩৬: কুরবানীর প্রানী হৃষ্টপুষ্ঠ হওয়া উত্তম।
মুসনাদে আহমদ:৬/১৩৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৬,বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২৩।
খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী:
মাসআলা-৩৭: খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম।
সহীহ বুখারী, হাদীস:১৫৪৮,ফাতহুল কাদীর:৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর:৪/২২৪, ইলাউস সুনান:১৭/৪৫৩ বাদায়েউস সানায়ে:৪/২০৫ ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৫।
যে প্রাণীর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে:
মাসআলা-৪৫: যে প্রাণীর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে প্রাণীর কুরবানী করা জায়েয নয়।পক্ষান্তরে যে প্রাণীর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে অথবা শিং একবারে উঠেনি সে প্রাণীর কুরবানী করা জায়েয।
জামে তিরমিযী, হাদিস:১৫০৪, সুনানে আবু দাউদ,হাদিস:৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে:৪/২১৬, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪২৬, রদ্দুল মুহতার:৬/৩২৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৩।
কুরবানীর প্রাণী বাচ্চা হলে:
মাসআলা-৪৮: কুরবানীর প্রাণী বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে, তহলে কুরবানীর প্রাণীর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।
মুয়াত্তা মালেক,হাদিস:১০৩৯, ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৬,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৮,রদ্দুল মুহতার:৬/৩২৩।
জবাইয়ের অস্ত্র:
মাসআলা-৫১: ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম।
সহীহ বুখারী,হাদিস:২৪৮৮,বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২৩, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৩৯৬।
নিজেই কুরবানীর প্রাণী জবাই করা:
মাসআলা-৫২: কুরবানীর প্রানী নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিতি থাকা ভালো।এক্ষেত্রে এক প্রাণীকে অন্য প্রাণীর সামনে জবাই করবে না।এতে অন্য প্রাণী কষ্ঠ পায়।
মুসনাদে আহমদ,হাদিস:২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২২-২২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৬, ইলাউস সুনান:১৭/২৭১-২৭৪, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪৩৫।
জবাইয়ের সময় প্রাণীর মাথা যেদিকে থাকবে:
মাসআলা-৫৩:বাংলাদেশীদের কিবলা পশ্চিম দিকে।তাই জবাই করার সুন্নাহ সম্মত পদ্বতি হল,পশুকে দক্ষিণ দিকে মাথাও উত্তর দিকে পা দিয়ে শুয়াবে। তারপর মাথা ও পাকে পশ্চিম দিকে কাৎ করে জবাই করবে।
বাজলুর মাজহুদ:৫/৭০,আন নুতাফ:১৪৮,বাদায়েউস সানায়ে:৪/১১৮,মাজমুয়ুল আনহুর :৪/১৫৯,তাকমলিাতু ফতহুল মুলহিম:৩/৫৬৩।
জবাইয়ে একাধিক ব্যাক্তি শরিক হলে:
মাসআলা-৫৪: অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না ,তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার‘ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহিহ হবে না এবং জবাইকৃত প্রাণী ও হালাল হবে না।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৫০, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪৪৯,ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৫১,রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪।
জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া:
মাসআলা-৫৫: কুরবানী প্রাণী জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া নেওয়া জায়েজ। তবে কুরবানীর প্রাণীর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না । সহীহ বুখারী, হাদিস :১৭১৭, সহীহ মুসলীম,হাদিস:৩০৭১, ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৮,কিফায়াতুল মুফতি:৮/২৬৫ ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪৪২।
প্রাণী নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা:
মাসআলা-৫৫: জবাইয়ের পর প্রাণী নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরুহ। আর মুহিতুল বুরহানি:৮/৪৪৭,বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২৩,আল মাবসুত,সারাখসি:১১/২২৬,অল ইখতিয়ার:৪/২৩৬।
কুরবানীর গোশত বন্টন:
মাসআলা-৫৬: শরিকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।
ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪৩৭,আদ্দররুল মুখাতার:৬/৩১৭, ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৭,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৫২।
গোশত বণ্টন:
মাসআলা-৫৭: কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আতœীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। প্রয়োজন ছাড়া এমন করা অনুচিত ও অনুত্তম।সূরা হজ:৩৬,আহকামুল কুরআন, জাস্সাস:৩/২৬১-২৬৩,ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪৩৭,বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৫২।
কুরবানীর প্রাণীর হাড়বিক্রি:
মাসআলা-৬১: কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে।টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে।এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয।এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য কুরবানী দাতার কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। সহীহ বুখারী, হাদিস :১৭১৭, সহীহ মুসলীম,হাদিস:৩০৭১, বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২৫, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪৪০,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৭।
গোশত, চর্বি বিক্রি করা:
মাসআলা-৬২: কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে।
সহীহ বুখারী, হাদিস :১৭১৭, সহীহ মুসলীম,হাদিস:৩০৭১, ইলাউস সুনান:১৭/২৫৯, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪৪০,বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২৫, ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৭।
কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা:
মাসআলা-৬৪: কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর চামড়া নিজেও ব্যবহার করতে পারবে।তবে কেউ যদি নিজে ব্যাবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্দ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। সহীহ বুখারী, হাদিস :১৭১৭, সহীহ মুসলীম,হাদিস:৩০৭১, বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২৫, ফাতাওয়া কাযীখান:৩/২৪৯, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪৩৯-৪৪০,আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৭।
নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া:
মাসআলা-৬৫: কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব।
সূরা হজ্ব:৩৬,মুসনাদে আহমদ,হাদীস:৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৬, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া:১৭/৪৩৬।
কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা:
মাসআলা-৬৬: ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজে কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুুুুুন্নত।অর্থাৎ, সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নাত শুধু ১০-ই যিলহজ্বের জন্য।১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয় । জামে তিরমিজী,হাদিস:৫৪২,শরহুল মুনয়া:৫৬৬, বাদায়েউস সানায়ে:৪/২২৪,আদ্দুররুল মুখতার:২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক:২/১৬৩।
মোরগ কুরবানী করা :
মাসআলা-৬৭: কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি জায়েয নয়। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয় ,তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। খুলাসাতুল ফাতাওয়া:৪/৩১৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪৬,ফাতাওয়া বাযযাযিয়া:৬/২৯০, আদ্দুররুল মুখতার:৬/৩১৩।
কুরবানী করতে না পারলে:
মাসআলা-৬৮: কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর প্রাণী ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি প্রাণী ক্রয় কর ছিল,কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ প্রাণী জীবিত সদকা করে দিবে। বাদায়েউস সানায়ে:৪/২০৪, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫ ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৪০।
লেখক :
অরবি প্রভাষক,দারুন্নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা