ঢাকাসোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

আইন ও বিচার ব্যবস্থাঃ অর্থঋণ আদালত প্রসঙ্গে

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
৮ জুন ২০২২, ৪:০২ অপরাহ্ণ

Link Copied!

জিয়া হাবীব আহ্সান, এডভোকেট

অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর বিধান মতে অর্থঋণ আদালত জজ নিয়োগ এর নিয়মঃ সরকার, সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে যুগ-জেলা জজ গণের মধ্য হতে অর্থঋণ আদালতের বিচারক নিয়োগ করবেন। এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন যুগ্ম জেলা জজ অর্থঋণ সংক্রান্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মামলার বিচার ও অর্থঋণ আইনের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত মামলা ব্যতিরেকে অন্য কোন দেওয়ানী কিংবা ফৌজদারী মামলার বিচারকার্য করতে পারবেন না। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে অর্থঋণ আদালতের একজন বিচারককে তাঁর নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত একাধিক অর্থঋণ আদালতের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে। সরকার গেজেট নোটিফিকেশন দ্বারা প্রত্যেক জেলায় এক বা একাধিক অর্থঋন আদালত প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। অর্থঋণ আদালত জেলা সদরে অবস্থিত হবে এবং দুই বা ততোধিক জেলার জন্য একটি অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকলে, সরকার সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা উক্ত আদালতের জেলা সদর নির্ধারণ করবে। সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন জারী পূর্বক যে কোন অর্থঋণ আদালত বিলুপ্ত করতে পারে। এমতাবস্থায় একই আদেশ দ্বারা উক্ত আদালতের বিচারাধীন মামলার বিষয়েও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার বিধান করবে।

যে সকল এলাকায় অর্থঋণ আদালত নেই সেখানে এতদসংক্রান্ত মোকদ্দমা কোন আদালতে দায়ের করতে হবেঃ সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা কোন জেলায় কোন অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠিত বা ঘোষিত না হয়ে থাকলে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় সম্পর্কিত মামলা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় অধিক্ষেত্রের যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দায়ের করতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থঋণ আদালত আইন- ২০০৩ এর বিধানাবলী ঐ সকল মামলার শুনানী, জারী, আপীল ইত্যাদি যাবতীয় কার্যক্রমে এমন ভাবে অনুসরনীয় হবে যেন উক্ত যুগ্ম জেলা জজ আদালত উক্ত আইনের অধিনেই প্রতিষ্ঠিত বা ঘোষিত আদালত এবং এই আইনের উদ্দেশ্য সাধন কল্পে উক্ত যুগ্ম জেলা জজের আদালত এই আইনের অধীন অর্থঋণ আদালত হিসেবে গণ্য হবে।

অর্থঋণ আদালতে কোন শ্রেনীর মামলার বিচার হয়ঃ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় সম্পর্কিত যাবতীয় মামলা অর্থঋণ আদালতে দায়ের করতে হবে এবং উক্ত আদালতেই এর নিষ্পত্তি হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলতে বুঝায় বিভিন্ন আইনের অধীনে গঠিত সরকারী, বেসরকারী ব্যাংক, বিভিন্ন ব্যাংকিং কোম্পানী গৃহ নির্মাণ ঋণদান কর্পোরেশন, ইনভেষ্টমেন্ট কর্পোরেশন, শিল্পঋণ সংস্থা, শিল্প ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন, ডেভলপমেন্ট ব্যাংক, কর্পোরেশন ইত্যাদিকে বুঝায়।উল্লেখিত যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ধার, ঋণ, এডভান্স, ওভার ড্রাফট, ক্রেডিট সুবিধা, গ্যারান্টি, ইনডেমনিটি, ঋণপত্র এবং এর উপর বৈধভাবে আরোপিত সুদ, দন্ড সুদ বা মুনাফা, ক্ষতিপূরণ বা ভাড়া ইত্যাদি আদায়ে মামলা উক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের পক্ষে সংশ্লিষ্ট অর্থ ঋণ আদালতেই দায়ের করতে হবে।

টাকা আদায়ের মামলা এবং বন্ধকী মামলার মধ্যে পার্থক্যঃ যে সমস্ত ঋণ ও আর্থিক বিনিয়োগের বিপরীতে সহায়ক জামানত হিসাবে ভূ-সম্পত্তি বন্ধক থাকে, সে সংক্রান্ত মোকদ্দমাকে বন্ধকী মামলা এবং যে বিনিয়োগের বিপরীতে ভূ-সম্পত্তি বন্ধক থাকে না (ব্যক্তিগত জামানতনামা, অস্থাবর সম্পত্তি, পণ্য সামগ্রী বন্ধক থাকে) তৎ সংক্রান্ত মামলাকে মানী মামলা বলে। বন্ধকী মামলার ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত ডিক্রী প্রাথমিক ডিক্রী (Preliminary decree) হবে এবং অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে ঋণ আদায়ার্থে দায়েরকৃত মামলায় আদালত কর্তৃক প্রদত্ত ডিক্রী চূড়ান্ত ডিক্রী (Final decree) হবে। বন্ধকী মামলায় বন্ধকী স্থাবর সম্পত্তি ডিক্রীর ধারাবাহিকতায় নিলাম বিক্রয় হওয়া মাত্রই উক্ত প্রাথমিক ডিক্রী চূড়ান্ত ডিক্রী হিসাবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে বিক্রয় চূড়ান্ত ও ক্রয় বৈধ গণ্য হবে এবং অতঃপর উক্ত সম্পত্তি পূনরুদ্ধার করবার কোনরূপ অধিকার (Right to redeem) বিবাদী দায়িকের থাকবে না।

তৃতীয় পক্ষ বন্ধক দাতা বা গ্যারান্টির বিরুদ্ধে আদালতের রায়, আদেশ ডিক্রী কতটুকু কার্যকরঃ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে মামলা দায়েরে (ক) মূলঋণ গ্রহীতা (Principal debtor) (খ) তৃতীয় পক্ষ বন্ধকদাতা (Third party mortgagor) (গ) তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টীর (Third party guarantor) ঋণের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলে তাদেরকে বিবাদী পক্ষ করতে হয়। আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়, আদেশ বা ডিক্রী এ সকল বিবাদীর বিরুদ্ধে যৌথভাবে ও পৃথক পৃথক ভাবে (Jointly and severally) কার্যকর হবে এবং ডিক্রী জারীর মামলা সকল বিবাদী দায়িকের বিরুদ্ধে একই সাথে পরিচালিত হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহীতার বা বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণকারী Third party guarantor মূল ঋণ গ্রহীতা হতে তার প্রদত্ত টাকা আদায় করতে পারবেনঃ আর্থিক প্রতিষ্ঠান মূল কর্তৃক ঋণ গ্রহীতার (Principal debtor) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সময়, তৃতীয় পক্ষ বন্ধক দাতা (Third party mortgagor) বা তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টার (Third party guarantor) ঋণের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলে তাদের বিবাদী করতে হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতের রায় ডিক্রী যৌথভাবে ও পৃথক পৃথক ভাবে কার্যকর হবে। তবে ডিক্রী জারীর মাধ্যমে দাবী আদায় হওয়ায় ক্ষেত্রে আদালত প্রথমে মূল ঋণ গ্রহীতা বিবাদীর এবং অতঃপর যথাক্রমে তৃতীয় পক্ষ বন্ধক দাতা (Third party mortgagor) ও তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টার (Third party guarantor) এর সম্পত্তি যতদূর সম্ভব আকৃষ্ট করবে। বাদীর অনুকূলে প্রদত্ত ডিক্রীর দাবী তৃতীয় পক্ষ বন্ধকদাতা (Third party mortgagor) অথবা তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টার (Third party guarantor) পরিশোধ করে থাকে, তবে উক্ত ডিক্রী যথাক্রমে তাদের অনুকূলে স্থানান্তরিত হবে এবং তারা মূল ঋণ গ্রহীতার (Principal Debtor) বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ বা জারী করতে পারবেন।

অর্থঋণ আদালতের মামলা জেলা জজ কি ট্রান্সফার করতে পারেনঃ বিজ্ঞ জেলা জজ আদালত স্বেচ্ছায় বা মামলার কোন পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ন্যায় বিচারের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন মনে করলে কোন অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন কোন মামলা তাঁর নিজ এখতিয়ারাধীন এলাকায় অবস্থিত অন্য কোন অর্থঋণ আদালতে যদি থাকে, স্থানান্তর করতে পারবেন।

অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর বিধান মতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোন মামলা দায়েরের পদ্ধতিঃ উক্ত আইনের অধীনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আরজি দাখিলের মাধ্যমে মামলা দায়ের করতে হবে। আরজির বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট দালিলিক প্রমানাদির সমর্থনে আরজির সাথে একটি হলফনামা (Affidavit) সংযুক্ত করতে হবে। আরজির সাথে প্রদেয় কোর্ট ফি (Ad-Valorem) প্রদান করতে হবে। দাখিলকৃত আরজি যথাযথ হলে অর্থঋণ আদালতের নির্ধারিত রেজিষ্ট্রারে তা ক্রম অনুসারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

কোন সাক্ষীকে পরীক্ষা ব্যতিরেকে অর্থঋণ আদালত রায় বা আদেশ প্রদান করতে পারেন কিনাঃ অর্থঋণ আদালত ২০০৩ এর অধীনে অর্থঋণ আদালতের মামলায় বাদীর আর্জির ও বিবাদীর জবাবের সমর্থন এফিডেভিট বা হলফনামা সংযুক্ত করতে হয়। আরর্জি জবাবের সাথে সংযুক্ত হলফনামা মৌলিক সাক্ষ্য (Substantive evidence) হিসেবে গণ্য হবে এবং উক্ত আদালত কোন মামলায় একতরফা বা তাৎক্ষনিক নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কোন স্বাক্ষীকে পরীক্ষা ব্যতিরেকে, কোন হলফনামা যুক্ত আরজি বা লিখিত জবাব ও সংশ্লিষ্ট দালিলিক প্রমানাদি বিশ্লেষন করে রায় বা আদেশ প্রদান করবেন এবং করতে পারবেন।

লেখকঃ আইনবিদ, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসনকর্মী।

199 Views

আরও পড়ুন

পাঠকের অনূভুতিতে ❝কলিজার আধখান❞

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে বিএনপি সন্দেহ করছে–ড. হুমায়ুন কবির

বিশ্বরূপ চন্দ্র বিশ্বাসের কবিতা:- হাসি

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণসংবর্ধনা ও কাউন্সিল শুক্রবার

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণ সমাবেশ সফল করার লক্ষে সংবাদ সম্মেলন

আইডিইবির ৫৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের র‌্যালি ও আলোচনা সভা

দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সাইফুল ইসলামের কবিতা : শীতের আমেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ