রংপুর ব্যুরো:
ঈদের বাকি আর ২-১ দিন। বিভাগীয় নগরী রংপুরে জমে উঠেছে শেষ সময়ে ঈদের কেনাকাটা। সকাল ১০টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটার ধুম। এসময় নগরীর বিপনী বিতানগুলোতে দেখা যাচ্ছে উপচে পড়া ভীড়। যেন মানুষের ঢল নামছে রংপুরের বাজারে। করোনা অতিমারীর প্রকোপ কমায় এবারেই স্বতস্ফুর্তভাবে বেচাকেনা চলছে সারাদেশের মতো রংপুরেও।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিপণীবিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। পোশাকের পাশাপাশি নবাবগঞ্জ মার্কেটে গয়না, কসমেটিকসহ ঘর গোছানোর জন্য সাজসরঞ্জাম কিনছেন কেউ কেউ। সিটি বাজার নিত্যপণ্য কেনাকাটায় দেখা যায় মানুষের ঢল। তবে শুক্রবার রাত ১২টার পর তীব্র বেগে বাতাস আর ধুলো ঝড় শুরু হলে নিমিষেই বাজার ক্রেতা শুন্য হয়ে যায়।
নগরীর সুপার মার্কেট, জেলা পরিষদ মার্কেট, সিটি প্লাজা মার্কেট, জাহাজ কোম্পানী শপিং কমপ্লেক্সসহ কামালকাছনা, স্টেশন রোড, বেতপট্টি, পায়রা চত্বর এলাকা থেকে শুরু করে সবখানেই জমজমাট ঈদের বাজার। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে নানা রঙের বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে বিপণীবিতানগুলো। সাউন্ড বক্স দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে দোকানের। বিপনীগুলোতে প্রদর্শন করা হচ্ছে নজরকাড়া বাহারি ডিজাইন ও রকমারি পোশাক। বিভিন্ন রকমের কালেশন থাকলেও গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর দাম একটু বেশি বলছেন ক্রেতারা। তবুও মার্কেট ঘুরে ঘুরে কিনছেন নিজের ও পরিবারের পছন্দের পোশাক।
বিক্রেতারা জানান, সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি চলছে বেচাকেনা। তবে রমজানে রাতের বেলায় ঈদবাজার বেশি জমজমাট থাকে। রাত যত গভীর হয় ততই ঈদের কেনাকাটাও বাড়ে নগরবাসীর।
এবারে সারাদেশের মতো রংপুরেও পছন্দের তালিকায় রয়েছে কাঁচাবাদাম খ্যাত মডেলিং পোষাক, সারারাহ গারারাহ, লেহেঙ্গা, টিস্যু ও জিন্স প্যান্ট, ব্রান্ডের শার্ট, লং পাঞ্জাবিসহ বাহারি পোশাক।
তবে কাঁচাবাদাম নামে নির্দিষ্ট কোনো পোশাক না থাকলেও ভাইরাল হওয়া গানের মডেলিং যারা করেছিলেন তাদের পোশাকই এখন কাঁচাবাদাম পোশাক। আর এই পোশাক ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল, নীল, সবুজ ও গোলাপিসহ ৬টি রঙের আনা হয়েছে কাঁচা বাদাম থ্রিপিস। ক্রেতারাও নাম শুনেই দেখাতে বলছেন এ পোশাক। জানালেন বিক্রেতারা।
তিনি আরও জানান, ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার শাড়ি এবং ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার থ্রি-পিস বেশি বিক্রি হচ্ছে।
জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকায় গড়ে উঠেছে নামীদামি কাপড়ের দোকান ও শপিং কমপ্লেক্স। এর মধ্যে ‘পাঞ্জাবিওয়ালা’ দোকানে ছিল ক্রেতাদের লক্ষণীয় ভিড়। পাঞ্জাবীওয়ালা থেকে পাঞ্জাবী হাতে বের হচ্ছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি জানালেন ‘গত দুই বছর পাঞ্জাবি কেনা হয়নি, এবার কিনেছেন।’
পাঞ্জাবীওয়ালার সত্বাধিকারী রিপন শেখ বলেন, করোনার ২ বছর পর এবার ঈদের বেচাকেনাও বেশ ভালো। দুই বছরের লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
নগরীর পাচপীর দরগা রোডে বেশ কয়েকটি শিশুদের জন্য দোকান রয়েছে। সবকটিতেই সবসময় ভিড় দেখা যায়। একদরের দোকান হওয়ায় শুধু পছন্দ করলেই হয়ে যায়। এসব দোকানে সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০০ হাজার টাকার শিশু পোশাক রয়েছে।
আমেনা বাকী সাথে নিয়ে এসেছেন দুই ছেলে মেয়েকে। এক ছেলের জন্য কেনা হলেও এখনও মেয়ের জন্য কেনা হয়নি। গত কয়েকবছরের তুলনায় শিশুদের পোশাকে এবারের দামটা বেশি বলে জানান তিনি।
এদিকে সেন্ট্রাল রোড ও জিএল রায় রোডে সবচেয়ে বেশি নামী দামী ব্রান্ডের শো রুম রয়েছে। এ সব শো রুমেও বেশ ভিড় দেখা যায়। এখানে শিশুদের পার্টি ও ফেন্সি ড্রেস আর কটি ও পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। শিশুদের কাপড় প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ৭৫০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া তরুণীদের থ্রি–পিস ও তরুণদের প্যান্টের চাহিদা রয়েছে।
অন্যদিকে নগরীর স্টেশন এলাকা, ধাপ মেডিকেল মোড়, সিও বাজার, ইসলামপুর হনুমানতলায় দেখা গেছে মানুষের ভিড়। ইসলামপুর হনুমানতলার স্থানীয় বিক্রেতারা রমজান আলী বাবু বলেন, ১৪-১৫ বছর আগে এখানে গড়ে উঠেছে কম দামি কাপড়ের বাজার। এসব দোকানে তৈরি পোশাক ছাড়াও নানা ধরনের গজ কাপড় বিক্রি হচ্ছে। তবে কম লাভে জামাকাপড় বিক্রি করা হয় বলে এখানে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন ঢাকা মেইলকে জানান, দুই বছরের অর্থনৈতিক যে সংকট গেছে। আশা করা যায় এবারে ব্যবসায়ীরা তা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
রংপুর নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঈদ বাজার যাতে নির্বিঘ্নে বেচাকেনা করতে সে জন্য সবধরণের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা ও মহানগর পুলিশ।
রাফিউল ইসলাম রাব্বি/এনভি