রুবেল হোসাইন, মিঠাপুকুর প্রতিনিধি:
রংপুরের মিঠাপুকুরের বৈরাগীগঞ্জে সেই কুখ্যাত ১ ডজন বংশগত মাদক ব্যবসায়ীর নেতৃত্ব দানকারী রাজু মেম্বার ওরফে ডাইল রাজুর ফেন্সিডিল ব্যবসা থেমে নেই। একাধিক স্থানীয় পত্রিকায় নিউজ প্রকাশের পরেও স্কুল মাঠে তার শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র (ছদ্মনাম সাগর) আর বাবর আলী নামে এক যুবক। স্কুল মাঠে অতি পরিচিত মাদকসেবী ছাড়া কাউকে প্রবেশ কিংবা বাইক রাখতে দেন না। বাইর থেকে মাদকসেবীরা আসলে মূলত স্কুলের পিছন অথবা মসজিদের সামন দিয়ে কৌশলে ফেন্সিডিল বিক্রয় করছেন। শ্রমিক হিসেবে এনামুল একটু গাঁ ঢাকা দিলেও তার বদলে সূকৌশলে তৃতীয় শ্রেণির এ শিশুকে ফেন্সিডিল সরবরাহ টাকা লেনদেন ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করছেন।
ফেন্সিডিল বিক্রয়ে কোন ধরনের অসুবিধা হলে শিশুটি বাবর কিংবা অপরিচিত হলে ফোন দিয়ে রাজু মেম্বারের সহযোগিতা নিচ্ছেন। সরেজমিনে ফোন দিয়ে রাজু মেম্বারের সহযোগি শ্রমিক হিসেবে কাজ করা বাবরকে ফেন্সিডিলের কথা বললে বাবর জানায়, চুপ করে স্কুলের মাঠে শহিদ মিনারে আসতে এবং দাম ২৮০০/টাকা লাগবে। মাল ভালো হবে, কম নেয়া যাবে না।
আর এক মাদক ব্যবসায়ী রাজু মেম্বারের ভাগ্নে বউ নাজনীন স্থানীয় পত্রিকায় তার নাম জড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ছোট ব্যবসায়ী, আমার নাম জড়ানোর দরকার নেই। রাজু মেম্বার দিনে কয়েক লক্ষ টাকার ব্যবসা করে তার তো পুলিশ, প্রশাসন কিছু করে না। আগে উনার ব্যবসা বন্ধ করেন। যাহার রেকডিং সংরক্ষিত আছে।
অন্য এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজু মেম্বার ক্লাশ সেভেন পড়া অবস্থায় ফেন্সিডিল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রথমে রাজু মেম্বার ফেন্সিডিল পারাপারে তার বোন রোকছানার লাইনম্যান ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে রাজা মিয়া, আমিন মিয়া, এ ব্যবসায় জড়িত হলে রাজু মেম্বার ঐ ওয়ার্ডের জনগণকে মাদক ব্যবসা করবেন না। এমন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কালো টাকা ব্যবহার করে ইউ,পি সদস্য নির্বাচিত হন। ইউ,পি সদস্য হওয়ার পর ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে, ভাগ্নিসহ আরো ১ ডজন মাদক ব্যবসায়ী বাড়িয়ে তোলেন। তার হাত ধরে রাস্তার পশ্চিম পাশে ভাগ্নে রুবেল, ভাগ্নী নুরবানু, জামাই শাকিল, বোন রোকছানা, বেয়াইনী মঞ্জিলা, আর পূর্ব পাশে বড় ভাই রাজা, ভাবি রুমি বেগম, ভাগ্নে দুলুসহ বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন।
দিনের পর দিন চলছে এই মাদক ব্যবসায়ীদের অত্যাচার। মিঠাপুকুর থানার ৩ নং পায়রাবন্দ ইউনিয়নের শীর্ষ কারবারী ২৬ জনের মধ্যে রাজু মেম্বার বা এই বংশের এই প্রায় এক ডজন। রাজু মেম্বার নিজেকে গড়ে তুলেন গডফাদার হিসেবে। মাদক ব্যবসায়ী এই পরিবারের মামলা সংখ্যা (৯৬)টি। রাজু মেম্বাব বিয়ে করেন চারটি। তার প্রায় সব স্ত্রী মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে স্বীকৃত। কয়েকটি ট্রাক, লেগুনা, দুটি বাড়িসহ অটল সম্পদের মালিক হয়ে যান। তার মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত নিউজ করতে গিয়ে ২০১৫ সালে দৈনিক যুগের আলোর স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক মশিউর রহমান উৎসকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।সেই মামলায় তার স্ত্রী জহিরুন আক্তার জুঁই, বোন রোকছনা, ভাগ্নে রুবেলসহ ভাড়াটে খুনিরা সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। বর্তমানে মামলাটি আদালতে এখনো বিচারাধীন।
২০০৩ সালে পুলিশের সোর্স মোস্তাকে কুপিয়ে হত্যা করে তার লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে মাদক ব্যবসায়ীরা। যে হত্যার এখনো কুল কিনারা হয়নি। যুগে যুগে মাদক ব্যবসায়ী রাজু মেম্বার গংরা মাদক ব্যবসা করছে কিসের জোরে? জানতে চায় সাধারণ মানুষ। আর কত জীবন গেলে বন্ধ হবে রাজু মেম্বার আর তার বংশের মাদক ব্যবসা? কতদিন আইনের চোখ অদৃশ্য শক্তির কাছে অন্ধ হয়ে থাকবে? সেটাই দেখার বিষয়।
এ বিষয়ে এ এস পি (ডি সার্কেল) কামরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, রাজু মেম্বার নিজ হাতে মাদক বিক্রি করে না; খুব চালাক। তাকে মালসহ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও সি তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, স্কুল মাঠসহ সব জায়গায় অভিযান করা হচ্ছে।
বিট পুলিশ কর্মকর্তা এস আই রবিউল ইসলাম বলেন, স্কুলমাঠ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি আমরা। মাঠে বসার চেয়ার টবিল সরানো হয়েছে। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ী এই গ্রুপে অনেক সোর্স রয়েছে। আমরা অভিযানে আসার খবর আগে পেয়ে যায়।
এলাকাবাসীর জোড় দাবি, রাজু মেম্বার গংদের গ্রেপ্তার করে মহিয়সী বেগম রোকেয়ার জন্মভূমি কলঙ্কমুক্ত করা হউক।
রাফিউল ইসলাম রাব্বি / এনভি