মোহাম্মদ সোহেল আরমান, কক্সবাজার :
কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। গত সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলার ১ থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সাক্ষ্য দেবেন।
আসামি নন্দ দুলাল রক্ষিতের আইনজীবী চন্দন দাশ সাক্ষীকে জেরার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে আজকের বিচারিক কাজ। বরাবরের মতো সাক্ষ্যগ্রহণের সময় মামলার ১৫ জন আসামিকেও আদালতে হাজির করা হয়েছে।
এর আগে মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে দিয়েই সোমবার শুরু হয়েছিল বিচার কার্যক্রম। তার জবানবন্দির পর ১৫ আসামির মধ্যে ১২ জনের আইনজীবীরা শারমিনকে জেরা করে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের (পিপি) ফরিদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলায় মোট সাক্ষী ৮৩ জন। সেখান থেকে তিনদিনে ১৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। বাকিদের সাক্ষ্যগ্রহণ ধাপে ধাপে হবে। সোমবার প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করার পর আসামিপক্ষের আইনজীবিরা জেরা করেছেন। আজকেও জেরা করবেন তিন আইনজীবী। সেটি শেষ হলে দ্বিতীয় সাক্ষী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য নেওয়া হবে।
পিপি ফরিদুল আলম বলেন, গত ২৬ জুলাই থেকে পরবর্তী তিন দিন সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ চলায় তা সম্ভব হয়নি। পরে ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদি হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
পরে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের নয় সদস্যও। তারা হলেন- বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেবনাথ।
অপর আসামিরা হলেন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য যথাক্রমে এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।