নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার অন্তর্গত বিরিশিরির খালিশাপাড়া গ্রামটি একসময় ছিলো শান্তি ও সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ।
গ্রামটি বর্তমানে জুয়া, মাদক কারবার ও সেবনসহ বিভিন্ন অপকর্মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রামটিতে গত রোববার সন্ধ্যায় অভিযান চালালে অভিযুক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী ও এক মোটরসাইকেল আরোহীকে দুই বোতল মদসহ গ্রেফতার করে দুর্গাপুর থানা পুলিশ। পরদিন ২১ জুন সোমবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুর্গাপুর থানার এসআই মাজাহারুল মাদকচক্রের তদন্তে আসেন। অভিযুক্ত অপরাধীদের দুর্গাপুর থানায় সোমবার সন্ধ্যায় স্বশরীরে উপস্থিত থাকার কথা বলে যান।
তারপর থেকে পুলিশে খবর দেওয়ার সন্দেহে অভিযুক্ত অপরাধীদের ব্যাপক হুমকি ধমকির শিকার হচ্ছেন প্রতিবেশী নিরাপরাধ দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী । অভিযুক্ত মাদক অপরাধীদের অভিযোগ, তারা দুর্গাপুর থানার ওসি এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান ও তাদের গডফাদারদের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন এইকাজ প্রতিবেশী সচেতন দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ব্যতীত অন্যকেউ করেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও উদীয়মান তরুণ লেখক কাজী আশফিক রাসেল এবং তাঁর সহোদর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী তৌসফিক রাফি।
ভুক্তভোগীদের পিতা আব্দুল লতিফ জানান, মানুষে বলাবলি করে আপনার সন্তান দুইটা এই এলাকার রত্ন। আমার ছেলেই এই এলাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম চান্সপ্রাপ্ত ও একমাত্র শিক্ষার্থী। আমার সন্তানদের অগ্রগতিতে এই এলাকার অনেকেই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমাদের বাধাগ্রস্থ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এই এলাকার মাদক অপরাধীরা যাদের ইন্ধনে এবং ইশারায় এমন হুমকিধামকি, অশ্লীল গালিগালাজ করতেছে, আমি সকল অপরাধীদের বিচার চাই। এই এলাকাতে আমরা কাউকে শত্রু মনে করি না। আমরা চাই এলাকার সার্বিক উন্নতি। অথচ কিছু প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তি আমাদেরকে পথের কাটা মনে করে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করছে।
ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর মা রোকেয়া বেগম বলেন, এই গ্রামে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা আমাদের পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করার একমাত্র কারণ ভিলেজ পলিটিক্স।
সমাজের কিছু নিচুশ্রেণির মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে আমার পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করে ওনারা মজা নিচ্ছেন। যেসব খুটির জোরে এসব মাদকাসক্ত উচ্ছৃঙ্খল অপরাধীরা একের পর এক অন্যায় করে যাচ্ছে আমি সবার বিচার চাই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী আশফিক রাসেল বলেন, আমি বিশ্বাস করি পুলিশ জনগণের বন্ধু এবং জনগণের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্য দিন রাত সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মাদকের সাথে সম্পৃক্ত এসব অপরাধীরা শুধু আমাকে এবং আমার পরিবারকে হুমকিধামকি ও অশ্লীল গালিগালাজ করে ক্ষান্ত হননি, এই অপরাধীগুলো পুলিশের নামে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের সামনে জনগণের বন্ধু পুলিশ বাহিনীকেও হেয়প্রতিপন্ন করার চেস্টা করছে।
পুলিশের নিকট কেউ অভিযোগ দিলে সেটার গোপনীয়তা বজায় রাখা পুলিশের দায়িত্ব। নিরীহ জনগণ যদি আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে পুলিশের নিকট অভিযোগ দিয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের পরিবর্তে অভিযোগকারীর পরিচয় প্রকাশ করা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা। আমার বিশ্বাস স্থানীয় অপরাধীচক্র খুবই শ্রীঘ্রই আইনের আওতায় আসবে। অপরাধী চক্র আমাকে এবং আমার ভাইকে পুলিশে অভিযোগকারী হিসেবে দোষারোপ করে আমার পরিবারকে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ফেলেছে। আমাদেরকে হুমকিধামকি প্রদানকারী মাদকচক্র ও তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট গডফাদারদের নির্মূলে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তৌসফিক রাফি বলেন, আমি পুলিশকে তথ্য প্রদানে জড়িত না অথচ গতরাত্রে ফোন কলের মাধ্যমে অভিযুক্ত এক আসামির বড় ভাই আমাকে মিথ্যা দোষারোপ করে বিভিন্ন হুমকিধামকি দিয়েছেন। এছাড়া বেশকিছু অপরাধী আমাদের টার্গেট করে প্রকাশ্যে অশ্রাব্য গালিগালাজ ও উগ্র আচরণ করতেছে। এমনকি তাদের গডফাদার স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে হামলা-মামলার ভয় দেখাচ্ছে। আমি এবং আমার পরিবার খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ নূর এ আলম বলেন, আমি কোনো অভিযোগকারীর নাম কারো নিকট প্রকাশ করিনি।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত আসামীরা বলছেন, তাদের নিকট দুর্গাপুর থানার ওসি শাহ নূরে আলম অভিযোগকারীর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এব্যাপারে জানতে সরেজমিনে পূর্ব খালিশাপাড়া মার্কেটে গেলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান থানায় অভিযোগকারীর পরিচয় সম্পর্কে ইশারা ইঙ্গিতে সবাইকে বলেছেন। অভিযোগকারী ব্যক্তি মাদকসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ফেসবুক ও অনলাইনে তথ্য সরবরাহ করেছেন যা তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসির নিকট থেকে নিশ্চিত হয়েছেন। এব্যাপারে জানতে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নিকট যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।