মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ:
প্রতিবন্ধী কথাটা শুনলেই চোখের সামনে কোন এক অসহায় মানুষের ছবি ভেসে ওঠে। ধরেই নেওয়া হয় তাদের দ্বারা কিছুই হবে না, ঘরের কোণে পড়ে থাকা বা রাস্তায় ভিক্ষা করার জন্যই তাদের জন্ম। কিন্তু না তারা আজ আর বসে নেই। লেখাপড়া এবং চাকরিতে একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো তাদেরও সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু স্কুল কলেজ এবং চাকরি ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ সুবিধা না থাকায় পিছিয়ে পড়েছে তারা।
এই সকল ধারণাকে ভেস্তে দিয়ে, আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রত্যয়, ছুটে চলেছে চাকরিতে তৈরি করছে সুনিপুণ বিশ্বমানের সকল হস্তশিল্প। পাট, হোগলা, পাতা, ছন, কাশিয়া এইসব ব্যবহার করে তৈরি করছে বিভিন্ন ধরনের বাস্কেট, ব্যাগ, কার্পেট ও বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম। পরিবারের আরেকজন উপার্জনক্ষম সদস্যর মত সংসারের চাকা ঘোরাতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করছে। আর তাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ করছে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার এস এন্ড এস হ্যান্ডিক্রাফট বিডি ১০০ জন প্রতিবন্ধী মানুষ নিয়ে ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে মোস্তাফিজুর রহমান শিপ্ত নামে একজন তরুণ উদ্দোক্তা।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে অনেক আগে থেকেই ছিলো শিপ্তর। পড়াশুনা শেষ করে একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। করোনায় সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি তার পুরনো সেই ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলতে চাচ্ছিলেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি এ উদ্যোগটি হাতে নেন। প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সংস্থা থেকে তাদের খুঁজে খুঁজে বের করেন শিপ্ত। এরপর তাদেরকে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে কাজে দক্ষ করে তুলেন। প্রথমদিকে তাদেরকে সাইটসেইভারস এবং ইউনিকেইডের অর্থায়নে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অতঃপর তাদের দক্ষ হাত দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের সব হ্যান্ডিক্রাফট এবং তা গুঞ্জন ও ড্রিমস থ্রেড নামক ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন শপের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। যার লভ্যাংশের অনেকটাই পাচ্ছেন তারা। আর এভাবেই তাদের জন্য কর্মক্ষেত্রের নতুন এক জায়গাও তৈরি হয়েছে।
এস এন্ড এস হ্যান্ডিক্রাফট বিডি বাংলাদেশে এই প্রথম প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষদের কর্মক্ষম ও স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে বিনামূল্যে তাদেরকে হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্পের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। যাতে করে আমাদের প্রতিবন্ধী ভাই বোনদের কেউ অবহেলা না করতে পারে। তারা যাতে সমাজে জন্য বোঝা না হয়ে, সমাজের উন্নয়ন ও পারিবারিক সক্ষমতায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পারে। নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ইটাখোলায় তরুণ উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান শিপ্ত প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করতে পাটজাত পণ্য ও হস্তশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
তরুণ এই উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান শিপ্ত বলেন, “তরুণের একটাই স্বপ্ন বাংলাদেশের সকল অসহায় প্রতিবন্ধীরা যাতে সমাজের জন্য বোঝা না হয়ে সমাজের জন্য সম্পদ হিসেবে তৈরি হয়। তাদের যাতে কেও অবহেলা করতে না পারে। প্রতিবন্ধীরা মনে করে যে তারা মরে গেছেন। কিন্তু না এ ধরনের মানুষরা বাইরের দেশে কাজ করে খাচ্ছেন। এ কারণে আমার ২০২১ সালের উদ্দেশ্য হলো এ ধরনের মানুষদের স্বাবলম্বী করে তোলা। এই ট্রেনিং এর মাধ্যমে তারা পাটের ও হাতে তৈরি নানা পণ্যের কাজ শিখতে পেরেছে। যা প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়া তাদের তৈরি পণ্যগুলোর কাঁচামাল আমরা সরবরাহ করবো ও পণ্যগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাতে তৈরি পণ্য একটি বিশেষ শিল্প। আমাদের দেশসহ বিদেশে এসব পণ্যের অনেক চাহিদা রয়েছে। আশা করা যায় এই হ্যান্ডিক্রাফটের পণ্য তৈরি করে তারা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি হ্যান্ডি ক্রাফট তৈরিকারক কোম্পানিগুলো কাছে একটি আবেদন, যাতে করে তারা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় এবং তার কর্মীদের নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।”