————————-
মহিন একজন খাটি কল্পনাপ্রসূত যুবক। যান্ত্রিক পৃথিবীতে যা কিছু ঘটছে, কোথাও একটু শান্তি নেই, তাই কল্পনাতেই সুখ খোঁজে মহিন। শাওনের বাবামহিনের বন্ধু শাওন। প্রথম পরিচয়েই শাওনের সাথে সখ্যতা হয়। মহিন কারো সাথে প্রেম করার খুব স্বাদ জাগলেও এখনো খুঁজে পায়নি তার পছন্দের মেয়েকে। তাই মহিনকে কল্পনাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। রাত্র ১১ টা হতেই মহিন ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু ঘুম আসছে না, একটা অপরিচিত মেয়ের মুখছবি ভেসে উঠছে তার চোখে, মেয়েটি ডাকছে মহিনকে। মহিনও এগিয়ে যায়, তার পাশে বসে। একে অপরের দিকে অপলক চেয়ে থাকাবস্থায় মহিন বলে “তুমি আমার জীবনের চলার পথে সঙ্গী হবে”। মেয়েটি ইতস্তর করে, কি উত্তর দেবে, ভাবতে ভাবতে হঠাৎই হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেয়। এমন সময়ই শাওন ফোন করে-
হ্যালো, মহিন ঘুমিয়ে গেছিস?
না এখনো ঘুমাইনি, কিছু বলবি?
না, এমনিতেই ফোন করলাম, তোর স্বপ্ন দেখা কত দূর জানার জন্য। তা, স্বপ্নে কি কেউ এলো?
এখনো আসেনি, তবে আসবে, ভাল থাকিস, বলেই ফোনটা কেটে দেয় মহিন এবং আবারো কল্পনায় মেয়েটিকে ভাববার চেষ্টা করে। এবার পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন, মেয়েটি নিজ থেকেই বলে-
কোথায় গিয়েছিলে তুমি? কতক্ষণ একা একা বসে আসি, কখন তুমি আসবে, তোমার হাতটি ধরে পাশাপাশি হাটব।
মহিনও বলে- কোথাও যাব না তোমাকে ছেড়ে, জনম জনম ধরে পাশে থাকব, শুধু আমাকে ভালবেস, বলেই দু’জন পাশাপাশি হাটতে থাকে।
সকাল সকালই ঘুম ভাঙ্গে মহিনের, মহিনের মা সালমা বেগম ডাক দেয়-
মহিন ঘুম থেকে উঠ, ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
বিছানা থেকে উঠেই দেখা হয় বাবার সঙ্গে, মহিনের বাবা আফজল আহমেদ বলে-
এত দেরি করে ঘুম থেকে উঠছিস, রাতে ঘুমাসনি?
আবারও কল্পনায় ভেসে আসে সেই মেয়েটির ছবি, তারপরও তাৎক্ষনিক জবাব দেয়-ঘুমিয়েছি, ঘুমটা একটু বেশিই ছিল চোখে, তাই উঠতে পারিনি। বাবার সাথে নাস্তা করেই ভার্সিটিতে চলে যায় মহিন।
কেমন আছিস শাওন?
হ্যাঁ ভালো, তুই ভাল আছিস? হ্যাঁ।
চল ক্লাশে যাই?
না আজকে ক্লাশ করব না, মনটা ভাল নেই।
কেন, কেউ কিছু বলেছে?
না, তেমন কিছু না, গতকাল রাত থেকেই কল্পনাতে একটি মেয়ের ছবি ভেসে আসছে, তার সাথে পাশাপাশি হাটছি, গল্প করছি।
থামিয়ে দেয় শাওন, তোর কল্পনা কল্পনাতেই থাকবে, বাস্তবে রূপ নেবেনা।
আমিও তাই ভাবছি, কিন্তু মেয়েটিকে সত্যিই আমার ভাল লেগেছে, কল্পনার রঙেই তার ছবি আকঁব আমি।
দেখ, পারিস কিনা।
তামান্না দুপুরের খাবার খেয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তারও কল্পনায় ভেসে আসে একটি মুখ। যার সাথে সে পাশাপাশি হাতে হাতে রেখে হাটছে, অনেকক্ষণ পর পর একটু আধটু কথা বলছে। কিন্তু কল্পনার মানুষটিকে বাস্তবে কোন ভাবেই মেলাতে পারছে না তামান্না। কখনো এমন কাউকে দেখেছে বলেও মনে হচ্ছে না তার। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ল সে।
মহিন একটি ছবি আকঁল, সত্যিই একটি সুন্দরী মেয়ের ছবি, মহিন নিজেও চমকে যায় এতটা মিলিয়ে কিভাবে আকঁতে পারল।
দেখ শাওন, আমি যেমনটি ভাবি, ঠিক সেই মেয়ে, কোন তফাৎ নেই। আমি খুঁজব শাওন, যেভাবেই হোক তাকে খুঁজে পেতে হবে।
ছবিটা আকাঁর পর থেকেই অস্তির হয়ে যায় মহিন, শহরের সমস্ত পাবলিক প্লেস ও পার্কে খুঁজতে থাকে, কিন্তু কোথাও দেখা নেই।
বাসায় ফিরেই খাবার খেয়ে রেস্ট করার সময় আবারো মনে পড়ে মেয়েটিকে, মহিনকে চিন্তিত দেখে সালমা বেগম জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে তোর শরীর খারাপ?
না মা, কিছু হয়নি, ভাল লাগছিল না। মায়ের হাতে ভাত খেয়ে বেলকনিতে বসে ভাবে মহিন, কোথায় মেয়েটিকে পাওয়া যায়। হঠাৎ মনে পড়ে, মেয়েটি কল্পনায় যেখানে দেখতাম, সেটাতো গ্রামের দৃশ্য, আমি মেয়েটিকে খুঁজতে গ্রামেই যাবো। সে ভাবতে থাকে, যেখানে তার সাথে কথা হয়েছিল তাতো আমাদের গ্রামের বাড়ীর দৃশ্য। আনন্দে আত্মহারা হলো মহিন, মার কাছে বলে শাওনকে নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে যায়। মায়ের অনুমতি নিয়ে গ্রামে রওয়ানা হয় মহিন, যেতে যেতে সন্ধা হয়ে যায়, কাকা-কাকির সাথে কুশলাদির পর খাবার খেয়ে ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানায় সপে দেয় দু’জন, মহিনের মনে পড়ে মেয়েটির কথা, সকালেই তাকে খুজতে বের হবে মহিন, তাঁকে পাবেই এই বিশ্বাস নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে মহিন।
সকাল বেলা কে যেন মহিনের কাকি দিলারা হককে ডাকছে, তিনি বের হয়ে আসে, মহিনও ঘুম থেকে উঠে বাহিরে তাকাতেই চোখ পড়ে একটি মেয়ের দিকে, একি এতো সেই মেয়ে যাকে খোঁজার জন্যই এখানে আসা, মহিন নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখে সবকিছু ঠিক আছে কিনা, না বাস্তবেই আছে মহিন, এক পলকে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে। মেয়েটিও চোখে চোখ পড়তেই তাকিয়ে থাকে মহিনের দিকে, কারোর চোখই পড়তে চায় না। ভাবতে থাকে কোথায় দেখেছি তাঁকে, এ যেন হাজার বছরের চেনা কেউ। মহিনের কাকি দিলারা হক বলে-তামান্না চোখ ফেরা, অনেকক্ষণ ধরে চেয়ে আছিস, নজর লেগে যাবে। ওরা লজ্জা পায়। মহিন রুমে এসে শাওনকে ডেকে তুলে।
শাওন ঘুম থেকে উঠ, পেয়ে গেছি।
কি পেয়েছিস বলেই চোখ যায় বারান্দায়, মেয়েটিকে দেখেই মহিনের আকাঁ ছবিটি সে কল্পনা করে, সেও খুশি হয় এত অল্প সময়ে মেয়েটিকে পাওয়ায়।
তামান্না, দিলার হকের সাথে কথা বলে তার বাড়ীতে চলে যায়, যাওয়ার সময় ভাবতে থাকে, এতো সেই ছেলে যাকে আমি কল্পনাতেই ভাবি, কথাবলি, পাশাপাশি হাটি, কিন্তু কি করে তাকে এ কথা বলব, আমি বললেই কি সে শুনবে আমার কথা, বিশ্বাস করবে আমার কথা, পরক্ষণেই আবার ভাবে সেওতো আমার দিকে চেয়ে ছিল অপলকে এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ী যায় এবং তার বান্দবীকে খুলে বলে সমস্ত কথা।
মহিন তার কাকিকে জিজ্ঞাসা করে-
কাকি মেয়েটি কে?
কাকি উত্তর দেয়- ও তোমার আসলাম কাকার মেয়ে, আগামী বৎসর ঐঝঈ পরীক্ষা দিবে। খুবই ভাল মেয়ে। দিলারা হকও রসিক, সে বলে- কি মহিন, পছন্দ হয়েছে নাকি? লজ্জা পায় মহিন, কিন্তু তারপরও সে বলে- কাকি আমি ওকে খোঁজার জন্যই বাড়ীতে এসেছি। চমকিত হন তিনি এবং বলেন-
তামান্নাকে কোথায় দেখেছ তুমি?
না কাকি, কোথাও দেখিনি, একদিন কল্পনাতেই তার ছবি আমার সামনে ভেসে উঠে, অসম্ভব ভাল লাগে তাকে, আমি তার একটি ছবি আকিঁ (ছবিটি দেখায় মহিন) খুঁজতে থাকি তাকে, খুঁজতে খুঁজতেই এখানে আসা।
দিলারা হকও আর দেরি করেননি, তামান্নাকে নিয়ে আসেন এবং মহিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। দু’জনকে একসাথে রেখে চলে যান দিলারা হক। দুইজনেই প্রথমেই ইতস্তর বোধ করে, মহিনই প্রথম তামান্নাকে আকাঁ ছবিটি দেখায়, অবাক হয় তামান্না এবং বুঝতে পারে দু’জনই কল্পনাতে একে অপরের কল্পনায় সম্পর্কটার কথা অবগত আছে। তামান্নার হাত ধরে মহিন, নিয়ে যায় কল্পনায় দেখা হওয়া সেই স্থানে।
তামান্না নিজ থেকেই বলে-মহিন শুধু তুমি একা নও আমিও তোমাকে ভালবেসেছি, এই একই স্থানে বসে গল্প করেছি, পাশাপাশি হেটেছি তোমার সাথে। মহিন অবাক হয় দু’জনের কল্পনাটা হুবহু মিলে গেছে। দু’জন দু’জনার হাত ধরে পাশাপাশি হেটে যাচ্ছে গন্তব্যহীন স্থানে- এ পথ চলা চলবেই চিরদিন-চিরকাল।
জুবায়ের আহমেদ
সাহিত্যিক