আদিবা নুসরাত
——————-
মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বৈষম্যহীন সমাজ।সংবিধানেও এ বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু সেই বৈষম্যহীন সমাজ আমরা আজো নির্মাণ করতে পারিনি।নারী, পুরুষের সম অধিকার কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে আমাদের সমাজে?সমাজে এখনো ধর্মের মাত্রাতীত প্রভাব এবং কুসংস্কার রয়েছে। ধর্মকে পুঁজি করে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে নারীদের।এগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলেই সৃষ্টি হচ্ছে স্ত্রী বিদ্বেষ। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়।সমাজবিজ্ঞানী অ্যালান জি জনসন বলেন,স্ত্রী বিদ্বেষ নারীর জন্য ঘৃনার একটি সাংস্কৃতিক মনোভাব কারন তারা মহিলা। এই স্ত্রী বিদ্বেষের জের ধরেই পরবর্তীতে নারীরা অবমাননার স্বীকার হয়।ধর্ষণ, স্ত্রীকে প্রহার,আধিপত্যবাদ,যৌন বৈষম্য, মর্যাদাহানি ছাড়াও আরো অনেক কিছু ঘটতে পারে।স্ত্রী বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ বিভিন্ন ধর্ম পুরাণেও দেখা যায়।নারীদের নিয়ে সমাজে কিছু বদ্ধমূল ধারনা রয়েছে।এই ধারনাগুলোই মূলত নারীর অগ্রসরতায় সবচে বড় বাধা। বদ্ধমূল ধারনা হলো সমাজে প্রচলিত কিছু অন্ধ ধারনা,বিশ্বাস।যেগুলো কুসংস্কার আকারে মানুষের মনের গভীরে গেঁথে গেছে এবং চাইলে সমূলে এই ধারনাগুলো পালটে ফেলা যাবেনা।এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি পরিহার। কিন্তু আমাদের সমাজের মানুষ এই বিষয়গুলো কে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে আছে যে চাইলেই পরিবরতন সম্ভব না।সুপ্রাচীন কাল থেকেই নারীরা অবমাননার স্বীকার হয়ে আসছে।
পাল রাজা ধর্মপালের স্ত্রী রানী বল্লভদেবীকে বনবাসে পাঠানো হয়েছিল কারন সে পুত্র সন্তান জন্ম দিতে পারছিল না। এই বর্বরতা কল্পনা করা যায়!
আমরা এখন আধুনিক হয়েছি,বিজ্ঞানের কল্যানে সন্তান জন্ম দেয়া ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা আমরা জেনেছি।কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমাজ এখনো অনগ্রসর যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। কতিপয় নারীর ক্ষমতায়ন কে সকল নারীর ক্ষমতায়ন বলা যায়না।
উন্নয়নে নারী বলতে বুঝায়, সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে নারীর জড়িত থাকা এবং সেই কাজে অংশগ্রহণের অনুকূল পরিবেশ।বাঙালি নারীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সনাতন ধ্যান ধারনার এবং লিঙ্গ বৈষমৈর স্বীকার। নারী কখনোই পারেনা সবকিছু উর্ধে গিয়ে সকলের কাছে তার মানুষ পরিচয় তুলে ধরতে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের একচ্ছত্র স্বিদ্ধান্তকে নারীর মাথা পেতে গ্রহণ করতে হয়। সর্বদা নারীর জীবন পরিচালিত হয় শর্তসাপেক্ষ। আমাদের সমাজ শিশুদের মানুষ হতে শেখায় না শেখায় ছেলে হতে,মেয়ে হতে।এতে শুরু থেকেই নারীদের মধ্য সৃষ্টি হয় হীনন্মতা।আর পুরুষ হয় উঁচু মানসিকতার বিপথগামী নিপীড়ক। সকল পুরুষ স্বাভাবিকতা নিয়েই জন্ম নেয় কিন্তু আমাদের সমাজ তাদের স্বাভাবিকতা খর্ব করে।
নারীর অধিকারের ব্যাপার টিকে গোড়া থেকেই আমাদের সমাজ অস্বীকার করে আসছে।নারী অধিকার বলতে মূলত নারীর স্বাধীনতা বুঝানো হয়।এই স্বাধীনতা হতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক। নারীদের পূর্ন অধিকার দেয়ার ব্যাপারে আমাদের সাংস্কৃতিক দুর্বলতা রয়েছে।
আর সমাজের এই প্রচলিত বিধান কোন নারী অস্বীকার করলেই হয়ে যায় সসমাজবহির্ভূত, অসতী।
সতী,অসতীর এই খেলা শুধু নারীর সাথেই পুরুষের সাথে নয়।
পুরুষগণ জন্মগত দেবতা।
নজরুল বলেছিলেন-
” অসতী মাতার পুত্র যদি জারজ পুত্র হয়,
অসৎ পিতার সন্তান ও তবে জারজ সুনিশ্চয়”।
দৃষ্টিভংগি পরিবরতনের মাধ্যমেই আমরা সমাজ কে দিতে পারি সমতা। দূর করতে পারি কুসংস্কার। সকলে মিলে বাঁচতে পারি মানুষের মত।