ইমতিয়াজ বাবু,
আলীকদম(বান্দরবান) প্রতিনিধি।
ইটভাটাগুলোতে থরে থরে সাজানো কাঁচা ইট। রোদে শুকানোর পর এগুলো উঠছে চুল্লিতে। আগুনের তাপে পোড়ছে ইট। সেই সঙ্গে পোড়ছে যেন রায়হানের স্বপ্নও। ১০ বছর বয়সেই ইটভাটায় লেখাপড়া বাদ দিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে রায়হান। সম্প্রতি আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমতলী এলাকায় এফবিএম ইটভাটায় দেখা যায়, ভাটাশ্রমিকের সঙ্গে শিশুরাও কাজ করছে। ওদের বয়স ৭ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। রায়হান তাদেও মধ্যে সবার ছোট।
ইটভাটার কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব শিশুর কেউ কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ছে। আবার কেউ কেউ এখন আর বিদ্যালয়ে যায় না। কেউ নিজে থেকেই, আবার কেউ মা-বাবা,ভাইয়ের সঙ্গে ইটভাটার কাজে এসেছে। কাঁচা ইট রোদে শুকানো, ইট তৈরি, ট্রলিতে করে ইট টেনে ভাটাস্থলে পৌঁছানো, মাটি বহন করাসহ সব কাজেই নিয়োজিত রায়হান ও অন্যান্য শিশু।
নোয়খালির হাতিয়া এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত রায়হান। লেখাপড়া ফেলে ভাইয়ের সঙ্গে সে এফবিএম ভাটায় কাজ করতে এসেছে। এখানে সে কাঁচা ইট তৈরি এবং ট্রলিতে করে মাটি আনার কাজ করে। রায়হানের ভাই বলেন, ছয়-সাত মাস ভাটায় কাজ করে আবার গ্রামে ফিরে যাবে ওরা।
ভাটায় একটি কাঁচা ইট তৈরিতে তিনজন শ্রমিকের প্রয়োজন। যে পরিবারে তিনজন সদস্য থাকে, তাঁরা প্রতিদিন কাজ করে প্রায় ১৫শ টাকা আয় করেন। তাই অধিকাংশ শ্রমিক তাঁদের ছেলেমেয়ে ও ভাইদের নিয়ে আসেন।
আমতলী এলাকায় এফএমবি ব্রিকসের কতৃপক্ষের সাথে কথা হলে জানান, প্রত্যেক ইটভাটায় শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয় তাই আমরাও দিয়েছে। এক একটি শিশুকে ছয়-সাত মাসের জন্য কিনে নেয় আমরা,কাজ শেষে তারা বাড়িতে চলে যাবে।
ইটভাটায় কাজ করা এসব শিশুরা শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে শিশুদের ত্বক ও নখ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা, অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে বা আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করে শিশুকে চাকরি করার অনুমতি দিলে, তিনি পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।