জেমস আব্দুর রহিম রানা, স্টাফ রিপোর্টার :
ইউরোপের কয়েকটি দেশের পর যশোরের মনিরামপুরের পটল এবার রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে। এখানকার সবজি জোনখ্যাত উত্তম কৃষি পরিচর্যার (জিএপি) এ পটোল চাষিদের কাছ থেকে কিনে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশে রপ্তানি করছে। ন্যায্যমূল্যে পটল বিক্রি করতে পেরে চাষিরাও খুশি।
উপজেলার নদী-বাঁওড়বেষ্টিত মশ্বিমনগর, চালুয়াহাটি, হরিহরনগর ও রোহিতা ইউনিয়নকে মূলত সবজি জোন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কয়েক বছর ধানে বাজারমূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় চাষিরা লোকসান গুনছিলেন। তারা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে এখন নানা ধরনের সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে মনিরামপুরে মোট আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেছেন, উপজেলার সবজি জোনে অন্যান্য সবজির মধ্যে শুধু পটল চাষ করা হয়েছে ৩৩০ হেক্টর জমিতে। পটলের ফলনও ভালো হয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন যশোর, খুলনা, ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে পটোল রপ্তানি হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও ইংল্যান্ডে এই পটোল রপ্তানি হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানান, বিদেশে রপ্তানির জন্য ইতোমধ্যে বাছাই করে সবজি জোনের ১৮০ জন চাষিকে জিএপির আওতায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দেশে করোনা পরিস্থিতি একটু উন্নতি হওয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩৬ জন চাষির উৎপাদিত পটোল ইউরোপের বাজারের পর গত মাস থেকে শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েতে রপ্তানি। তিনি বলেন, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আরআর এন্টারপ্রাইজ, লি-এন্টারপ্রাইজ, এমএস এন্টারপ্রাইজ, আরএম এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখানকার উৎপাদিত পটোল ক্ষেত থেকে সরাসরি ক্রয় করে প্যাকেটজাতের পর বিদেশে রপ্তানি করছে।
রোহিতার পলাশী গ্রামের কৃষক কওসার আলী গাজী জানান, কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে তিনি ৪০ শতক জমিতে পটল চাষ করেছেন। এতে অধিকাংশ জৈবসার বিশেষ করে ভার্মিকম্পোস্ট (কেঁচো সার) ও সামান্য কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। চালুয়াহাটির হরিশপুর গ্রামের কৃষক মাহাবুবুর রহমান জানান, তিনি ২৪ শতক জমিতে বিশেষ পদ্ধতিতে পটোল চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। পটল চাষি আমিনুর রহমান বলেন, বর্তমান তারা বিদেশে রপ্তানিযোগ্য প্রতি কেজি পটল বিক্রি করছেন ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। তিনি জানান, পটলে বেশি মুনাফা হওয়ায় তাদের দেখাদেখি আশপাশের অনেক চাষি এখন পটোল চাষে অগ্রহী হচ্ছেন।
মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানান, পটলের পাশাপাশি আগামীতে মেটে আলু, ওল, শিমসহ বেশ কয়েকটি সবজি বিদেশে রপ্তানির জন্য চাষিদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।