রফিকুল ইসলাম জসিম
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
সাম্প্রতিক বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ আতংকের নাম নভেল করোনা ভাইরাস। এটির উৎপত্তি স্থান চীনে হলেও, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এই মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এর তাণ্ডবের শিকার প্রায় ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ২৪৪ জন মানুষ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার ৭০ জন। এ পরিসংখ্যান দিন দিন বেড়ে চলেছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এখন একটি আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি বিধায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটাকে মহামারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ সময়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করোনা ভাইরাসে কতটুকু কার্যকর? এ সব প্রশ্নেরই উত্তর সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন, বাংলাদেশের মণিপুরি মুসলিম হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডা. রোমানা বেগম (শিউলী)। আলাপচারিতায় ও সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজ ভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট রফিকুল ইসলাম জসিম …..
নিউজ ভিশন : করোনা ভাইরাস বা মহামারী রোগ প্রতিরোধ এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণও কি সম্ভব?
ডা. রোমানা বেগমঃ
বিশ্ব মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন।
বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে করোনা ভাইরাস। হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস থেকে দূরে থাকা যাবে। ইতিপূর্বে হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগেরও নিয়ন্ত্রণ যেভাবে সম্ভব হয়েছে, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হতে পারে।
নিউজ ভিশন: হোমিওপ্যাথি কোন কোন মহামারী রোগের চিকিৎসার সাফল্য অর্জন হয়েছে যদি জানা থাকে?
ডা. রোমানা বেগমঃ
হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের পর থেকে এই চিকিৎসা ধারায় অনেক জটিল ও মহামারী রোগের চিকিৎসার সাফল্য অর্জনের ইতিহাস আছে। ব্রেইন টিউমার, গেংগ্রিন, এবং মহামারী ক্যানসার ও হোমিও ঔষধে রোগী আরাম থাকে। এগুলো আমার নিজ চোখে দেখা।হোমিওপ্যাথি তে সব ধরনের চিকিৎসা করা হয়। একটু বিশ্বাস আর একটুখানি ধৈর্য দরকার। হার্ট ছিদ্র রোগ ভালো হয় হোমিওতে,গেংগ্রিন, ব্রেইনটিউমার সম্পুর্ন ভালো হয়। এগুলো মূলত আমার প্র্যাকটিক্যাল দেখা। এছাড়াও বেশ কয়েকটি মহামারীর চিকিৎসায় সফলতা দেখায়, যা উনিশ শতকে হোমিওপ্যাথিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিশেষ জনপ্রিয় করে তোলে।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ইতিহাস অনুযায়ী, ১৮৩০ সালে কলেরা প্যান্ডেমিক আর প্লেগ প্যান্ডমিক এবং ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যান্ডেমিকের সময়ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রয়োগ করার পর মৃত্যুর হার ৫ থেকে ৯ শতাংশ কমে গিয়েছিল ।
নিউজ ভিশন: হোমিওপ্যাথি কে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাব্যবস্থা বলা হয় কেন? সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার করোনার কার্যকারিতা কতটুক হতে পারে ?
ডা. রোমানা বেগমঃ
হোমিওপ্যাথি রোগের নয় রোগির চিকিৎসা করা হয় তাই এটি একটি লক্ষ্মণভিওিক চিকিৎসা। সুতরাং হোমিওপ্যাথি হলো রোগের লক্ষন অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। করোনা রোগের যে লক্ষন সে লক্ষন আমাদের হোমিও মেডিসিন এ আছে। সে অনুযায়ী মেডিসিন প্রয়োগ করলে অবশ্যই রোগী সুস্থ হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর্সেনিক এলবাম নামে একটি মেডিসিন করোনা রোগের সব লক্ষ্মণ ঐ মেডিসিন এর লক্ষ্মণ মিলে। তাই আমাদের হোমিও মন্ত্রণালয় থেকে এই মহামারী রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এই মেডিসিন প্রয়োগ করার কথা বলেছেন। এ ক্ষেত্রে হোমিও চিকিৎসা এর ভুমিকা ব্যাপক।
করোনা ভাইরাস জীবানুটি মানুষ থেকে মানুষের ছোয়ায় সংক্রমিত হয়। তাই অপরিচিত মানুষের স্পর্শ থেকে বিরত থাকা এবং সর্বদা মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এই রোগের লক্ষণ এখনো পর্যন্ত সঠিক ধরতে পারেনি কেউ। তবে মনে করা হয়, সর্দি,কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে আক্রান্তই করোনা ভাইরাসের প্রধান লক্ষণ।
বর্তমান যুগে আধুনিক চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে কিন্তু করোনা রোগের কোন মেডিসিন আবিষ্কার হয়নি আর আমার ধারণা একমাত্র হোমিও সর্বপ্রথম হতে পারে এই মহামারী রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে।
নিউজ ভিশন: কোভিড-১৯- (করোনা ভাইরাস) মুক্ত থাকতে হোমিওপ্যাথি ওষুধ ও সেবন মাত্রা নিয়মবিধি?
ডা. রোমানা বেগমঃ
হোমিওপ্যাথি ওষুধ-(আর্সেনিকাম এলবাম ৩০ ওষুধটি সেবনে আমরা প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারব। আর্সেনিকাম এলবাম ৩০ দুই ফোটা করে এক ডোজ সকালে তিনদিন ( খালি পেটে)অথবা ৪০ নং বরিতে পাঁচ টা করে তিন দিন সকালে। এই নিয়মে এ ওষুধ সেবন করতে পারবে।
যদি কোনো এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তাহলে ওই এলাকায় নিকটবর্তী ভালো হোমিওপ্যাথি ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে।
হোমিওপ্যাথি ওষুধটি নিদিষ্ট মাত্রা ও নিয়মমাফিক সেবনে করবেন। যাবতীয় ঠাণ্ডা পরিহার করতে হবে। গরম পানি, গরম খাবার ও গরম কাপড়ের ব্যবহার বেশি করতে হবে। একটাই পরামর্শ দিতে হোমিও খান আর জীবন কে সুস্থ রাখুন। ঘরে থাকুন নিরাপদে থাকুন।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাব্যবস্থা যার মৌলিক ভিত্তিই লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা, বৈশ্বিক এই দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বা এই সংক্রান্ত লক্ষণের রোগীদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিবেচনা করা যেতে পারে।
চিকিৎসক পরিচিতিঃ
ডাঃ রোমানা বেগম (শিউলী) মৌলভীবাজার জেলা কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তর গোলের হাওর গ্রামে মুসলিম মনিপুরি পরিবারে ১৯৯২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মাসে মোঃ আব্দুর রহিম এবং মোছাঃজুবেদা বেগম এর কোলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ মণিপুরি মুসলিমদের একমাত্র মহিলা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। তিনি সিলেটে জালালাবাদ হোমিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ২০১৬ সালে সম্পন্ন করেন। তার রেজিষ্ট্রেশন নংঃ২৯৭৯৫.