এজি লাভলু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
ভবনের ছাদ চুইয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি। আর তাতেই ভিআইপি রুম পানিতে সয়লাব। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল জানান দিচ্ছে কাজের মান। পা দিয়ে ঘষলেই ছাদের প্যাটার্ন স্টোন (ওয়ারিং কোর্স) ভেঙে যাচ্ছে। বেরিয়ে আসছে বালু আর কিছু ছোট পাথর। হস্তান্তরের ৯ মাসেই কুড়িগ্রাম রেলস্টেশনের সদ্য নির্মিত ভবনটির এ হাল হয়েছে। এক কোটি টাকায় নির্মিত এ ভবনের ঠিকাদার রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহায়তায় নিম্নমানের কাজ করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ওই ঠিকাদার। এলাকাবাসী এসব কাজের প্রতিবাদ করলে স্থানীয় ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। মামলা আর হুমকির ভয় দেখানো হতো অহরহ। থানার পুলিশও আনা হতো। তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা অন্য সরকারি কাজের চেয়ে এ কাজের মান ভালো হয়েছে বলে সাফাই গাইছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুজ্জামান খোকা অভিযোগ করেন, ‘রাজশাহী যুবলীগের বড় নেতার এই দাপটে কাজ করেছেন ঠিকাদার রমজান আলী। কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে। নিম্নমানের ইট, খোয়া ব্যবহার ছাড়াও বেশি পরিমাণ বালু ও কম সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। প্যাটার্ন স্টোন ঢালাই খুবই নিম্নমানের হওয়ায় পানি জমে মূল ছাদই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
আব্দুল হাকিম নামে আরেক বাসিন্দার অভিযোগ, কাজের নকশা দেখতে চাইলেও তাঁরা দেখাননি। ব্যাচসহ সব কাজে রডের পরিমাণ কম দেওয়া হয়েছে। ঢালাইয়ে সিমেন্টের পরিমাণ অনেক কম দেওয়া হয়েছে। খোয়া আর সিমেন্টের অনুপাত ৪:১ হওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ৮:১। ফলে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। নকশা দেখতে চাওয়ার অপরাধে তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
স্থানীয় শ্রমিক রায়হান আলী অভিযোগ করেন, সিমেন্ট কম দেওয়ার প্রতিবাদ করলে তাঁকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডিজাইনবহির্ভূত নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার ছাড়াও সেপটিক ট্যাংক, রং, দরজাসহ সব কাজেই অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের অভিযোগ করেন, ‘রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের সহায়তায় নিম্নমানের কাজ করেছেন ঠিকাদার। প্রতিবাদ করলেও থানা থেকে পুলিশ আনা হতো। আর চিহ্নিত কয়েকজন সন্ত্রাসী ভাড়া করে ভয় দেখানো হতো।’
ওই ভবনে দেখা যায়, আগামী ১৬ অক্টোবর কুড়িগ্রাম থেকে একটি আন্ত নগর ট্রেনের উদ্বোধন উপলক্ষে তোড়জোড় চলছে নানা কাজের। এর মধ্যে ভবনটির যেসব অংশের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে, তা চুনকাম করতে ব্যস্ত মিস্ত্রিরা। কার্য সহকারী আব্দুল ওয়াদুদের উপস্থিতিতে স্থানীয় কয়েকজন পা দিয়ে ছাদের প্যার্টান স্টোন (ওয়ারিং কোর্স) ভেঙে শুধু বালু বের করেন। কাজের মান ভালো হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি। তবে তদারকির দায়িত্বে ছিলেন না বলেও দাবি করেন তিনি।
স্টেশন মাস্টার কাবিল উদ্দিনের দাবি, ভবনটি সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। কে কখন হস্তান্তর করেছে, তাও জানেন না। তাঁকে একটি রুম ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে মাত্র।
রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান চৌধুরী দাবি করেন, ‘কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি।’