——————-
‘আসুন-বসুন সবাই, আজকে হলাম ধন্য, যৎসামান্য এই আয়োজন আপনাদেরই জন্য। মাংস, পোলাও, চপ-কাটলেট, লুচি এবং মিষ্টি।খাবার সময় এদের প্রতি দেবেন একটু দৃষ্টি’।কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর এই পদ্যটি মনে আছে নিশ্চয়ই ? সত্যি বলতে বাঙালি জাতি চিরকালই জীবনরসিক, সেই সাথে ভোজনরসিকও বটে। বাঙালির বিয়ে হোক, বউভাত হোক, হোক না সেটা ছোট কোনো অনুষ্ঠান কব্জি ডুবিয়ে উদরপূর্তি করা সে এক বড় পুরনো প্রথা।
অনেকদিন থেকে গ্রামে না থাকায় বিয়ে শাদি খাওয়ার সুযোগ আজকাল হয় না তেমন একটা। কখনো সখনো দাওয়াত পেলেও বছরে দুই একটার বেশি নয়। বিশেষ করে বিয়ের দাওয়াত আজকাল আমার কাছে সোনার হরিণের চেয়েও বেশি কিছু। তাই যখনই কোন বিয়ের দাওয়াত পাই, যত কষ্টই হোক পারতপক্ষে বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। বিয়ে অনুষ্ঠানে যে মানুষ শুধু খেতেই যায় তা কিন্তু নয়। আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করাও এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়াও বিয়ে অনুষ্ঠানের ভোজে আন্তরিকতার যে অনিন্দ্য স্পর্শ থাকে সচারাচর তা অন্য কোথাও খুব সহজেই মেলে না। এককথায় বলতে গেলে বিয়ে অনুষ্ঠান হল আত্মীয়তার মেলবন্ধন।
আগেরকার দিনে বিয়ে অনুষ্ঠান করা হতো বাড়ির দালান বা ছাদে সামিয়ানা বেঁধে। বর্তমানে সে অবস্থার পরিবর্তন বেশ লক্ষণীয়। সত্যি বলতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। বাঙালি জীবনও তার ব্যতিক্রম নয়। একালের বিয়ে-বউভাতের ভোজেও তার ছায়া পড়েছে। এখন বাঙালির বিয়েতে ভাড়া বাড়িই ভরসা। আর খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব পড়ে কেটারিং এর ওপর।
অর্থ-ক্ষমতার গৌরব সেকালের মতো একালেও আছে। নামি কেটারিংয়ের বিরিয়ানি, মোগলাই, চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল খানা পরিবেশন করে তাক লাগিয়ে দেয়া হয় অতিথিদের। আজ আমরা সেরকমই একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। খারাব মেনুতে ছিল খাসির তেহারি, মুরগির রোস্ট, জর্দা পোলাও, বোরহানিসহ কয়েক পদের খারার। যা শুধু দেখতেই নয়, খেতেও মন চায়। আমরাও পেটপুরে সেই খেয়ে দিই। খাওয়া দাওয়া শেষে অনেকের সাথে কথা বলি, কারো কারো সাথে হই নতুন করে পরিচয়। মনে উৎফুল্লতা খেলা করে, জাগ্রত হয় অনুভবনীয় এক পরম শান্তি। অজান্তে অস্ফুটে বলি উঠি অহ! অসাধারণ।