রুবেল আকন্দ,ত্রিশাল ময়মনসিংহ।
চাঁদবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ময়মনসিংহে ত্রিশাল উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের শিক্ষকদের অনিয়মিত হাজিরাসহ নানান সমস্যা, অনিয়ম এবং অপরিছন্নতার মধ্য দিয়ে চলছে চাঁদবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। কানিহারী ইউনিয়নের বালিদিয়া গ্রামের চাঁদবাড়ী বিদ্যালয়টি ১৯২৯ সালে স্থাপিত হয়েছে। এর ৭টি শিক্ষকের পদ থাকলেও রেগুলার শিক্ষক আছে মাত্র ৪জন। তবে এই ৪জনের মাঝেও একেক জন একেক অযুহাত দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকে প্রতিনিয়ত। আবার কোন শিক্ষক ময়মনসিংহ সদরে বাসা হওয়ায় সেখান থেকে এখানে উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন বেলা প্রায় ১১টায়। ফলে শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে গ্রামের ভিতরে একটি বাড়ীর আঙ্গিনায় এই স্কুলটি অবস্থিত তাই নাইট গার্ড না থাকায় বিদ্যালয়ের ছাদের উপরে বসে মাদক সেবীদের আড্ডা। বিদ্যালয়ে প্রবেশে নিজস্ব কোন রাস্তাও নেই। স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-বিদ্যালয়ে কাগজ-পত্রে ৪জন শিক্ষক থাকলেও দুজন শিক্ষক দিয়েই চলে স্কুলের ক্লাশ। তার মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষিকা আর একজন সহকারী। দুজনের বাসা ময়মনসিংহে, তারা ময়মনসিংহ থেকে স্কুলে পৌছতে বেলা ১১টা থেকে সারে এগারটা বাজে। কোনদিন আরো বেশী সময় লাগে। ফলে শিক্ষা গ্রহন থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস শিক্ষা দেয়া তো দূরের কথা, সঠিকমত ক্লাশ না হওয়ায় হাজিরা দেওয়াই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া। এলাকাবাসীর অভিযোগ স্কুলটিতে লেখাপড়ার নামে ছোট-ছোট কোমলমতি এই বাচ্ছাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। একই রুমে দুটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হয় বিধায় শিক্ষকদের অনুপস্থিতি থাকায় এক শ্রেণীর ক্লাশ চললে আরেক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা আড্ডায় ব্যাস্ত থাকে। বর্তমানে স্কুলটিতে ম্যানেজিং কমিটি নেই প্রায় আড়াই বছর যাবৎ। এডহক কমিটি দিয়ে চলছে এর পরিচালনা। ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় শিক্ষকদের এই অবহেলা দেখার কেউ না থাকায় প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রায় ২৩৬জন শিক্ষার্থী। ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে চলছে নানা সমালোচনা। শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার রাস্তা নিয়ে এলাকায় দুপক্ষের মাঝে চলছে তুমুল বিরুধ। একটি প্রভাবশালী মহল রাস্তায় কাটাতারের বেড়া দিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সুবিধার্থে একটি পক্ষ রাস্তার পক্ষে কথা বলায় তাদের কে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে প্রভাবশালী মহলটি। বিদ্যালয়ের বারান্দার সামনেই রয়েছে গোবরের ঘসি,ময়লা আবর্জনা ও কাঁদায় ভরপুর। ফলে অনেক শিক্ষার্থীরা নানান অসুখ -বিসুখ স্বাস্থহীন হয়ে পরছে বলে জানান স্থানীয়রা। নেই কোন পরিস্কার পরিবেশ ফলে অপরিছন্ন পরিবেশে প্রায় সময়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে বাচ্চারা। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিভিন্ন দিবসে স্কুল বেশীর ভাগ বন্ধ থাকে। আমাদের স্যার নাই,পড়াইবে কে? স্বাধীনতা সম্পর্কেও কোন কিছু শেখানো হয়নি আমাদের। সারা দিনে এক দুইটা ক্লাশ হইলে হয় না হলে বাড়ি চলে যাই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা সুলতানা প্রথমে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে আপত্তি করেন। পরে অবশ্য তিনি অনিয়মিত হাজিরাসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন- বিদ্যালয়ে কোন অনিয়ম হয়না, তবে শিক্ষকের সমস্যা থাকায় পর্যাপ্ত ক্লাশ নেওয়া সম্ভব হয় না। স্কুলটি গ্রামের ভিতরে হওয়ায় যাতায়াত সমস্যায় এখানে কোন শিক্ষক নিয়মিত আসতেও চায়না। তিনি বলেন-আমাদের প্রায় ২৩৬জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ক্লাশ নিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে এসব সমস্যার কথা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।